কয়েক মাস ধরেই দফায় দফায় বাড়ছে উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট ফুয়েলের দাম। অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম গত জানুয়ারিতেও ছিল ৭৩ টাকা। বাড়তে বাড়তে যা এখন দাঁড়িয়েছে ১০৬ টাকায়। অন্যদিকে কভিড-১৯-এর প্রভাবে গত দুই বছর প্রায় লোকসান দিয়ে কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে হয়েছে দেশের এয়ারলাইনসগুলোকে। এ অবস্থায় আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জের ওপর বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং নিরাপত্তা ও উন্নয়ন ফির ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে দেশের বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো। সম্প্রতি এনবিআরে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য পাঠানো প্রাক-বাজেট প্রস্তাবে এ দাবি করেছে এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি)।
এওএবির প্রাক-বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে এয়ারলাইনসগুলোর জন্য অতি উচ্চহারে অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ বিদ্যমান। সেই সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের ফলে পরিচালন ব্যয় এয়ারলাইনসগুলোর সাধ্যের বাইরে চলে যায়। অন্যদিকে নতুন আরোপিত নিরাপত্তা ও উন্নয়ন ফির চাপ এভিয়েশন খাতকে নেতিবাচক অবস্থায় ঠেলে দিচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং নিরাপত্তা ও উন্নয়ন ফির ওপর আরোপিত ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে এওএবি।
এওএবির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চার্টার্ড উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার পরিবহন সেবার ওপর ২৫ শতাংশ সার্ভিস ডিউটি (এসডি) ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য রয়েছে। আসন্ন বাজেটে ২৫ শতাংশ সার্ভিস ডিউটি কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ সেবায় বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট রহিত করারও প্রস্তাব দিয়েছে এওএবি। এছাড়া এয়ারলাইনস ও এভিয়েশন অপারেটরদের ওপর বর্তমানে আরোপিত ৩০ শতাংশ করপোরেট করহার কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব উঠেছে।
এদিকে বৈমানিক, কেবিন ক্রুসহ সব এয়ারলাইনস খাতের মানবসম্পদের প্রশিক্ষণ ব্যয়ের ওপর কর ও ভ্যাট প্রত্যাহারেরও প্রস্তাব দিয়েছে এওএবি। তারা বলছে, দেশী ও বিদেশী প্রশিক্ষণ ব্যয়ের ওপর অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ ও ভ্যাট ১৫ শতাংশ এভিয়েশন অপারেটরদের মানবসম্পদ উন্নয়নে একটি বড় বাধা। এ কারণে প্রশিক্ষণ ব্যয়ের ওপর বিদ্যমান সব কর ও ভ্যাট প্রত্যাহার চায় এওএবি।
এ প্রসঙ্গে এওএবির সেক্রেটারি জেনারেল ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, করোনার কারণে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলো এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে এয়ারলাইনসগুলোর পরিচালন ব্যয় বেড়েছে। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ যাত্রীরাও আকাশপথে ভ্রমণ কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে এয়ারলাইনসগুলোর চাহিদা কমে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আসন্ন বাজেটে সরকারের সহায়তা ছাড়া দেশীয় এয়ারলাইনসগুলোর পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয়। এসব বিবেচনায় বিভিন্ন ভ্যাট ও কর কমানো এবং প্রত্যাহার করতে একটি প্রস্তাব এনবিআরকে দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দেশের এভিয়েশন খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এওএবি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২১-২৩ মেয়াদের জন্য এওএবির প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্কয়ার এয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী ও সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান দায়িত্বে রয়েছেন।
