ছয় লেন হচ্ছে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক

অধিগ্রহণে বেশি টাকা পেতে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, যশোর

ছয় লেনে উন্নীত করার খবরে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের দুই পাশে তড়িঘড়ি করে বহুতল ভবন নির্মাণ, পুকুর খনন দোকানপাট গড়ে তোলা হচ্ছে। কোনো কোনো একতলা ভবন তিন বা চারতলা নির্মাণ চলছে রাতের আঁধারে। জমি অধিগ্রহণের টাকার পাশাপাশি স্থাপনা বাবদ সরকারের কাছ থেকে তিন গুণ ক্ষতিপূরণের আশায় স্থানীয়দের কেউ কেউ এমন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন।

সূত্রমতে, যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৪৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। সার্ভিস লেনসহ মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করা হবে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মহাসড়ক উইকেয়ার ফেজ-, (এন-) উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে হাজার ১৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে হাজার ৪৮২ কোটি টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন হবে হাজার ৭০৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক জনপথ অধিদপ্তর।

গুরুত্বপূর্ণ ছয় লেনে উন্নীত করতে ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তার আগেই জমির মালিকরা অতিরিক্ত টাকা পেতে নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। তারা ফাঁকা পড়ে থাকা জমিতে ঘর নির্মাণ করছেন। কেউ একতলা ঘরের ওপর তিন বা চারতলা করছেন। কেউবা মহাসড়কের পাশে দোকান গড়ে তুলছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, চূড়ামনকাটি বাজারে পুরনো আখ সেন্টারে কামাল হোসেন নামে একজন বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। বাজার ছাড়িয়ে মহাসড়ক ধরে ঝিনাইদহের দিকে সামনে গেলে কাজী নজরুল ইসলাম কলেজ। কলেজের সামনে গড়ে উঠেছে দোকান। এর কিছু দূর গেলে বারীনগর বাজার। বাজারে ঢুকতেই সাতমাইল ভিশন শো-রুম। সেখানে ব্যবসায়ী হাসান তিনতলা ভবন গড়ে তুলেছেন। বারীনগর বাজারে হৈবতপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম চারতলা ভবন নির্মাণ কয়েক দিন আগে শেষ করেছেন। সেই ভবনের নিচতলায় রাইসমিলের একটি ছোট মেশিন বসিয়েছেন। বাকি তিনতলা ফাঁকা।

বাজার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার ঝিনাইদহের দিকে গেলে আব্দুস সালামের একটি ইটভাটা। ভাটার সামনে আরো একটি চারতলা ভবন নির্মাণাধীন। সেই ভবনের তিনতলার ছাদ এরই মধ্যে ঢালাই হয়েছে। চারতলার ছাদ ঢালাই চলমান। পাশে তার আরেকটি দোতলা ভবনের ছাদ ঢালাই হয়েছে। এর কাছাকাছি আকরামের তেলের দোকানের পাশে ডিজেল ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন নির্মাণ করছেন তিনতলা ভবন।

বারীনগর বাজারে সড়কের পাশে পুরনো আমলের সেমিপাকা হাজি . খালেক সুপার মার্কেট। টিনের চালা দেয়া মার্কেটের সামনে নির্মাণসামগ্রী রাখা। পেছনে দেখা গেল তিনতলা ভবন নির্মাণের আয়োজন। চলছে প্রথম তলার ছাদ ঢালাই। বাজারে একতলা মণ্ডল সুপার মার্কেট। কিছুদিন আগে মার্কেটের ওপর আরো তিনটি তলার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় লাগানো হয়েছে একটি মাদ্রাসার সাইনবোর্ড।

জানতে চাইলে হৈবতপুর ইউনিয়ন পরিষদের নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম লিখন মুঠোফোনে বলেন, ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় অনেকে ভবন নির্মাণ করছেন। তারা শেষ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের টাকা নাও পেতে পারেন।

জানতে চাইলে হৈবতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক মুঠোফোনে বলেন, গত ২২ মার্চের পর মহাসড়কের পাশে নতুন স্থাপনা না করতে ইউনিয়ন পরিষদে চিঠি আসে। কিন্তু আগে থেকেই ভবন দোকানপাট নির্মাণ শুরু হয়েছে। অনেকে পুকুর খনন করছেন।

ছয় লেন প্রকল্পের যশোর অফিসের উপব্যবস্থাপক মো. সাজেদুর রহমান বলেন, আমরা মহাসড়কের দুই পাশের সব স্থাপনা ভিডিও করে রেখেছি। জমি অধিগ্রহণের জন্য যৌথ জরিপের সময় ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাকে সেগুলো দেয়া হবে। ফলে রাতারাতি ঘরবাড়ি বা দোকানপাট নির্মাণ করে অতিরিক্ত অর্থ পাওয়ার সুযোগ নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন