যুক্তরাষ্ট্রের ইভি খাত

১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে হুন্দাই

বণিক বার্তা ডেস্ক

জাপানের উদ্দেশে দক্ষিণ কোরিয়া ত্যাগের আগে গতকাল হুন্দাইয়ের কারখানা পরিদর্শন করেন বাইডেন ছবি: এপি

দক্ষিণ কোরিয়ায় তিনদিনের সফরে রাজনৈতিক বাণিজ্যিক সফলতা দেখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গতকাল সফরের শেষ দিনে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক কোম্পানি হুন্দাইয়ের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) নির্মাণ -সংক্রান্ত প্রযুক্তিতে হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি আদায় করেছেন তিনি। খবর এপি কোরিয়া হেরাল্ড।

জাপানের উদ্দেশে দক্ষিণ কোরিয়া ত্যাগের আগে হুন্দাইয়ের কারখানা পরিদর্শন করেন বাইডেন। সময় তিনি হুন্দাইয়ের সিইও ইউসিয়ান চুংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জর্জিয়ায় একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যাটারি কারখানা স্থাপনে ৫৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেন তিনি। স্বচালিত গাড়ি অন্যান্য প্রযুক্তির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) আরো ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান হুন্দাই সিইও।

পৃথক এক ঘোষণায় গত সপ্তাহে হুন্দাই মোটর জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ায় ইভি ব্যবসা সম্প্রসারণে ২০৩০ সালের মধ্যে ২১ ট্রিলিয়ন ওন বা হাজার ৬৪৩ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে তারা। ২০৩০ সালের মধ্যে ১৭টি নতুন মডেলের ইভি আনবে হুন্দাই মোটর। এছাড়া তাদের সাবসিডিয়ারি কিয়া মোটরও ২০২৭ সালের মধ্যে ১৪টি ইভি আনার পরিকল্পনা করছে।

এশিয়া সফররত বাইডেন বলেন, বৈদ্যুতিক গাড়ি আমাদের জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রার জন্য ইতিবাচক। এমনকি তা কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। সর্বোপরি সার্বিক ব্যবসা খাতে তা প্রভাব রাখবে।

যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ কোরীয় কোম্পানির বড় অংকের বিনিয়োগ ঘোষণার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে দীর্ঘদিনের সামরিক জোটের মধ্যে বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব সৃষ্টি হচ্ছে।

জর্জিয়ায় হুন্দাইয়ের কারখানায় হাজার ১০০ জনের কর্মসংস্থান হবে এবং বার্ষিক তিন লাখ গাড়ি উৎপাদন সক্ষমতা থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী বছরের শুরুতেই ওই কারখানা চালু হতে যাচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ওই কারখানায় গাড়ি উৎপাদন শুরু হবে। ২০৩০ সাল নাগাদ ৩২ লাখ ৩০ হাজার ইভি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা হুন্দাই কিয়ার। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে কোটি ৪০ হাজার ইভি বিক্রি করতে চায় তারা। বৈশ্বিক ইভি বাজারের ১২ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে গাড়ি নির্মাতা জায়ান্টটি।

জর্জিয়ার গভর্নর ব্রায়ান কেম্প হুন্দাইয়ের বিনিয়োগের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, রাজ্যের ইতিহাসে এটি সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প হতে যাচ্ছে।

গাড়ি বিক্রির দিক থেকে বিশ্বের বৃহৎ পাঁচটি গাড়ি নির্মাতা কোম্পানির একটি হুন্দাই। জর্জিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামাতেও কারখানা রয়েছে তাদের।

হুন্দাই কারখানা সফরের আগে স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের একটি কম্পিউটার চিপ নির্মাণ কারখানা পরিদর্শন করেন বাইডেন। উল্লেখ্য, টেক্সাসে একটি চিপ কারখানা স্থাপনে হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি। যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বিশেষ মনোযোগের উদ্দেশ্য হচ্ছে গাড়ি, স্মার্টফোন, পিসি, খেলনা ইলেকট্রনিকস খাতে কয়েক বছর ধরে চলা সরবরাহ সংকট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। 

দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করাকে অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছেন বাইডেন। শনিবার তিনি বলেন, উভয় দেশের সহযোগিতা বৃদ্ধির ফলে সরবরাহ চেইন শক্তিশালী হবে এবং যেকোনো ধরনের বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলার সক্ষমতা তৈরি হবে।

চলমান মহামারী ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নিরাপত্তা অর্থনৈতিক জোট নিয়ে পুনর্বিবেচনা করছে বিভিন্ন দেশ। করোনা মহামারীর কারণে কম্পিউটার চিপ, গাড়ি অন্যান্য পণ্যের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি বিশ্বস্ত মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর জোর দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে বাইডেন প্রশাসন।

রোববার দিনের শেষের দিকে টোকিওর উদ্দেশে যাত্রা করেন বাইডেন। তিনি সোমবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক কাঠামোর আওতায় নতুন একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথা বলবেন তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এশিয়ায় বাইডেনের প্রথম সফরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের উত্থান মোকাবেলা করা। মঙ্গলবার চার দেশের কৌশলগত জোট কোয়াডের একটি বৈঠক শেষে ওয়াশিংটনের উদ্দেশে রওনা দেবেন বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্র জাপানসহ কোয়াডের অন্য দুই সদস্য হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ভারত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন