এমবাপ্পের থেকে যাওয়া, না যাওয়া

৭৫ কোটি ডলারই কি প্রভাবক, নাকি অন্য কারণ?

ক্রীড়া ডেস্ক

কথা ছিল রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখাবেন এ মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে। যদিও সিদ্ধান্ত ঠিক ১৮০ ডিগ্রি পাল্টে ফেলে শনিবার সন্ধ্যায় প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) ক্লাবে আরো তিন বছর থেকে যাওয়ার ঘোষণা দেন ফরাসি সেনসেশন। তাকে রাখতে কল্পনাকেও হার মানানো সব আর্থিক সুবিধাদি দিচ্ছে ফরাসি ক্লাবটি। তিন বছরের চুক্তিতে তিনি পাবেন ৭৫ কোটি ইউরো বা ৬ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা!

 

এমবাপ্পেকে দিতে যাওয়া পিএসজির আর্থিক অঙ্ক নিয়ে ফুটবল বিশ্বে রীতিমতো হৈচে পড়ে গেছে। লা লিগা প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের তেবাস তো বললেন, চুক্তিটি ফুটবলের জন্য কলঙ্কজনক। এই চুক্তির জন্য ফুটবলের সঙ্গে জড়িত হাজারো মানুষের চাকরি হুমকিতে পড়ে যাবে। লা লিগার পক্ষ থেকে এরই মধ্যে পিএসজির বিরুদ্ধে অভিযোগও করেছেন উয়েফার কাছে।

 

এই চুক্তিতে শুধু বোনাস হিসেবেই ৩০ কোটি ইউরো পাবেন এমবাপ্পে। সঙ্গে প্রতি বছর ১৫ কোটি ইউরো হিসেবে তিন মৌসুমে তিনি বেতন পাবেন ৪৫ কোটি ইউরো। সব মিলে, তিন বছরে তার জন্য পিএসজির খরচ হবে ৭৫ কোটি ইউরো

 

ক্ষুব্ধ তেবাস টুইট করেছেন, সাম্প্রতিক মৌসুমে ৭০ কোটি ইউরো লোকসান দেয়ার পর এমবাপ্পের চুক্তিতে পিএসজি যে বিশাল অঙ্কের বেতন-বোনাস সেধেছে, সেটা ৬০ কোটি ইউরো ছাড়িয়ে যাবে। এটা ফুটবলের জন্য অপমান। তারা সুপার লিগের চেয়েও বিপজ্জনক।

এমবাপ্পের থেকে যাওয়ার পেছনের কারণটা কি শুধুই আর্থিক? তবে কেন শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিলেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। মার্কা বলছে, এখানে কেউ কেউ কাতার বিশ্বকাপের সঙ্গে যোগসূত্র দেখছেন। এ বছরই কাতার বিশ্বকাপ এবং পিএসজির মালিক কাতার সরকার। কাজেই ফুটবলের এই উত্সবের মুহূর্তে কোনোভাবেই তাকে ছাড়তে চায়নি পিএসজি। এজন্য ফ্রান্সের রাজনৈতিক পর্যায় থেকেও নাকি চাপ দেয়া হয়েছে এমবাপ্পেকে। এমনকি খোদ ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ নিজেও খেলোয়াড়টিকে থেকে যেতে চাপ সৃষ্টি করেছেন। হয়তো এ কারণেই স্বপ্নের ক্লাবকে না বলে দিতে বাধ্য হয়েছেন ২৩ বছর বয়সী ফুটবল মহাতারকা। 

 

ইউরোপের প্রখ্যাত ফুটবল সাংবাদিক ইউলিয়ান লরেন্স, ফ্যাব্রিজিও রোমানো ও রোমাইন মলিনা নিয়মিতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলবদল নিয়ে হালনাগাদ তথ্য দিয়ে থাকেন। এমবাপ্পেকে নিয়েও তারা সর্বশেষ তথ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা তিনজনই নিশ্চিত করেছেন, আরো তিন বছর থাকতে পিএসজিকে কঠিন কিছু শর্ত দিয়েছেন এমবাপ্পে। এর মধ্যে অন্যতম হলোকিছু কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়কে বিদায় করতে হবে। এই শর্ত বাস্তবায়ন নাকি এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। আর্জেন্টাইন প্লেমেকার অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া এরই মধ্যে পিএসজি ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল পরিচালক লিওনার্দোর বিদায়ও নাকি আসন্ন এবং তার জায়গায় আসবেন মোনাকোর সাবেক ফুটবল পরিচালক লুইস কাম্পোস। এই কাম্পোসের হাত ধরেই উঠে এসেছেন এমবাপ্পে। চাপে থাকবেন কোচ মাউরিসিও পচেত্তিনোও।

 

এমবাপ্পের মতো জাত স্ট্রাইকারকে মনেপ্রাণেই দলে চেয়েছিলেন রিয়াল প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। বর্ষীয়ান এই ফুটবল প্রশাসককে শনিবার নিজে ফোন করে না বলেছেন এমবাপ্পে।

 

গত পাঁচ মৌসুম ধরেই এমবাপ্পের পিছু নিয়েছে রিয়াল। তিনিও প্রায়ই প্রকাশ্যে বলে এসেছেন, শৈশবের স্বপ্নের ক্লাবে একদিন খেলতে চান। এবার তো সবকিছু প্রায় চূড়ান্ত হয়েই ছিল। সবাই ধরেই নিচ্ছিল যে, স্যান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে অচিরেই এমবাপ্পের অভিষেক অনুষ্ঠান হবে। কিন্তু এবারো হলো না। আরেকবার রিয়াল সমর্থকদের হতাশ করে পিএসজিতেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপজয়ী এই ফুটবলার।

 

পিএসজি তাকে কেন এক টাকা দিয়ে রেখে দিচ্ছে, সেই প্রশ্ন অনেকে করতে পারেন। হয়তো অঙ্কটা আকাশচুম্বী। তবে খেলোয়াড়টির সামর্থ্য নিয়ে কিন্তু কোনো প্রশ্নের অবকাশ নেই। সর্বশেষ ম্যাচেও তিনি নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন। শনিবার রাতে লিগ ম্যাচে মেেজর বিপক্ষে করেছেন হ্যাটট্রিক। পিএসজি জিতেছে ৫-০ গোলে। এই ম্যাচে পিএসজির হয়ে শততম গোল করেন নেইমার। আর বিদায়ী ম্যাচে লক্ষ্যভেদ করেন ডি মারিয়া। এ রাতের হারে অবনমিত হয়ে গেছে মেত্জ।

 

এ রাতের ট্রেবল দিয়ে এবারের লা লিগায় সর্বোচ্চ গোলাদাতার আসনটি নিশ্চিত হলো এমবাপ্পের। তার গোলসংখ্যা ২৮, যা মোনাকোর উইসান বেন ইয়েদারের চেয়ে তিন গোল বেশি।

 

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বিদায়ের পর এমবাপ্পের মতো একজন কিলার স্ট্রাইকার দলে চেয়েছিলেন পেরেজ। যদিও খেলোয়াড়টি ফোন করে রিয়াল বসকেনা বলে দেন। কিন্তু এমবাপ্পের এই প্রত্যাখ্যান রিয়ালের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মারত্মকভাবে আহত করেছে বলেই জানতে পেরেছে মার্কা। কর্মকর্তারা অনুভব করছেন, এমবাপ্পে কর্তৃক এই অসম্মান প্রদর্শন ক্লাবের ভাবমূর্তিকেও হুমকির মুখে ফেলবে।

 

বিবিসি ও মার্কা

 

   

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন