চীনা গ্যাসোলিনের শীর্ষ পাঁচ গন্তব্যের তালিকায় বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) মূল্য এখনো লাগামহীন। ফলে কিছুটা সাশ্রয়ী জ্বালানি হিসেবে তেলের ব্যবহার বেড়েছে কয়েকগুণ। বিদ্যুৎকেন্দ্র, যানবাহনে গ্যাসের বিকল্প হিসেবে জ্বালানি তেল ব্যবহূত হচ্ছে। বিশেষ করে কয়েক মাস আগে পেট্রল-অকটেনের চাহিদা বেড়ে যায় ব্যাপক হারে। তার প্রতিফলনও দেখা গেছে রফতানিকারক দেশের পরিসংখ্যানে। চলতি বছর চীন বিশ্বের যেসব দেশে গ্যাসোলিন রফতানি করেছে, সেই তালিকায় শীর্ষ পাঁচ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। মূলত গ্যাসোলিন এক ধরনের জ্বালানি তেল, যা থেকে পেট্রল অকটেন তৈরি হয়।

বৈশ্বিক জ্বালানির বাজার বিশ্লেষণকারী সংবাদমাধ্যম এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটস বলছে, এলএনজিনির্ভর বিদ্যুৎ পরিবহনগুলোকে সাশ্রয়ী করতে দক্ষিণ এশিয়াসহ অনেক দেশ জ্বালানি তেলে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। যে কারণে গ্যাসের বিকল্প হিসেবে ডিজেল, পেট্রল, অকটেন ফার্নেস অয়েলের চাহিদা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ পাকিস্তানে গ্যাসোলিনের রফতানি ব্যাপক হারে বাড়িয়েছে চীন।

চীনা শুল্ক বিভাগের বরাত দিয়ে প্ল্যাটস জানিয়েছে, গত এপ্রিলে চীন থেকে বাংলাদেশে ৪৯ হাজার টন গ্যাসোলিন রফতানি হয়েছে, যা মার্চে ছিল ৪৩ হাজার টন। এক মাসের ব্যবধানে পণ্যটির রফতানি বেড়েছে ১৪ শতাংশেরও বেশি। চীন যেসব দেশে গ্যাসোলিন রফতানি করে, তার তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন পঞ্চম। তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর আর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তান।

বাংলাদেশে জ্বালানি তেল আমদানি বিপণনে নিয়োজিত একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বণিক বার্তাকে বলেন, এলএনজির উচ্চমূল্যের কারণে তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বেড়েছে। ফলে জ্বালানি তেলের আমদানি বেড়েছে। অন্যদিকে, গ্যাস সংকটের কারণে গাড়িতে অকটেন পেট্রলের ব্যবহার বেড়েছে।

একক বাজারনির্ভরতা কমাতে গত কয়েক বছর ধরে চীন থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করছে বাংলাদেশ। সেখান থেকে মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ জ্বালানি তেল আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে জ্বালানি বিভাগের। যার বেশির ভাগই গ্যাস অয়েল বা ডিজেল ফার্নেস অয়েল। তবে চলতি বছরে দেখা গেছে চীন থেকে ডিজেল আমদানির চেয়ে গ্যাসোলিন আমদানি বেড়েছে। একই সঙ্গে চীন যেসব দেশে গ্যাস অয়েল বা ডিজেল রফতানি করে এমন শীর্ষ পাঁচটি দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। যদিও গত বছরের এপ্রিলের তুলনায় দেশটি থেকে ডিজেল আমদানি কমেছে।

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ মূলত দুটি কোম্পানির মাধ্যমে চীন থেকে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। এর একটি হলো পেট্রোচায়না পিটিই লিমিটেড এবং অন্যটি ইউনিপেক পিটিই লিমিটেড। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ছয় লাখ টন গ্যাসোলিন, গ্যাস অয়েল এবং জেট ফুয়েল আমদানির কথা রয়েছে। এরই মধ্যে বিপিসি চলতি বছরের জুলাই-ডিসেম্বরের জন্য জ্বালানি তেল আমদানির উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের অপেক্ষায় রয়েছে। এলএনজির উচ্চমূল্যের কারণে দরপত্র আহ্বান করা যাচ্ছে না বলে প্ল্যাটসকে জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বণিক বার্তাকে বলেন, বৈশ্বিক বাজারে এখন গ্যাসের পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তবে বার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা জ্বালানি তেল আমদানি দেশে সরবরাহ অব্যাহত রেখেছি। গ্যাসের উচ্চমূল্যের কারণে জ্বালানি তেলের চাহিদা বেড়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে কয়েক মাস ধরে এলএনজির বাজারদর ঊর্ধ্বমুখী। খোলাবাজারে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দর এখন ২৬-৩০ ডলারে ওঠানামা করছে, যা গত বছরের সময়ে ছিল ১০-১২ ডলারের মধ্যে। বিশ্ববাজারে মূল্যের এমন উল্লম্ফনে এলএনজিনির্ভর দেশগুলো বিপাকে পড়ে। এসব দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্র শিল্প-কারখানার উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যয় সাশ্রয়ী হিসেবে তেল আমদানি বাড়াতে শুরু করে।

দেশে মোট জ্বালানি তেলের ৫০ শতাংশ আমদানি হয় জিটুজি পদ্ধতিতে। বাকি ৫০ শতাংশ আমদানি হয় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে। বিপিসির বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত মোট ২৬ লাখ টনের মতো পরিশোধিত জ্বালানি তেল ক্রয় পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ১২ লাখ ৯৫ হাজার টন জিটুজির মাধ্যমে এবং বাকি ১৩ লাখ ১০ হাজার টন উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে। যার বড় একটি অংশই আসবে রফতানিকারক দেশ চীন থেকে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন