সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই

বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব স্থগিতের আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদ্যুৎ গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে তা অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী হবে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রস্তাবটি স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

এফবিসিসিআই কার্যালয়ে গতকাল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, কভিড মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে শিপিং পরিবহন ব্যয় বাবদও বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। বেড়েছে সার্বিক উৎপাদন ব্যয়। এতে করে রফতানিমুখী খাতের জন্য বিশ্ববাজারে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। অবস্থায় বিদ্যুৎ গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী।

সংগঠনের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের বক্তব্যে এমন কথা উঠে আসে। সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মানোয়ার হোসেন, নাসিবের সভাপতি মীর্জা নুরুল গণী শোভন রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সাবেক প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী, সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী, সালাহউদ্দিন আলমগীর, মোহাবীব উল্ল্যাহ ডন অন্যান্য পরিচালক।

সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিদ্যুতের প্রস্তাবিত ট্যারিফ বৃদ্ধির আবেদনে দাম বাড়ানোর অর্থনৈতিক প্রভাব পূর্ণাঙ্গ রূপে বিশ্লেষণ করা হয়নি। যে কারণে বিইআরসি আইন অনুযায়ী আবেদন ত্রুটিপূর্ণ। তাই আবেদন বিবেচনা করা উচিত নয়। কভিড মহামারী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যৌক্তিক হবে না। বরং বিদ্যুৎ খাতের তহবিল থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যেতে পারে।

আপাতত গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব স্থগিত করে বিরাজমান বৈশ্বিক সংকটময় পরিস্থিতি প্রশমনের পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার সুপারিশ করেন মো. জসিম উদ্দিন। প্রস্তাবটি গৃহীত হলে তা সাধারণ জনগণকে স্বস্তি দেয়ার পাশাপাশি শিল্প খাতের সক্ষমতা বজায় রাখায়ও বড় ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

একই সঙ্গে সরবরাহ মূল্য বিদ্যমান হারে বজায় রেখে বাড়তি ব্যয় সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে সমন্বয় করার প্রস্তাব করেন মো. জসিম উদ্দিন। এছাড়া জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় আমূল সংস্কার, অনিয়ম, অপচয়, অবৈধ সংযোগসহ যাবতীয় অপব্যবস্থার নিরসন, অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা, অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ রিজার্ভ বিদ্যুতের সংস্থান, অতিরিক্ত উৎপাদন বন্ধ করে অহেতুক খরচ কমিয়ে আনা, ক্যাপাসিটি চার্জ বাতিল করে অলস উৎপাদনকারীকে অর্থ পরিশোধ বন্ধ করা, ভর্তুকিপ্রাপ্ত জ্বালানি খাতের ওপর শুল্ক মূসক প্রত্যাহার বা প্রয়োজনে ন্যূনতম শুল্ক আরোপ করা, সব খাতের জন্য গ্যাসের সাধারণ হার নির্ধারণের সুপারিশ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এছাড়া এসডিজি- অনুযায়ী সুলভ, উন্নত, নিরবচ্ছিন্ন টেকসই জ্বালানি বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে ২০ বছর মেয়াদি রোডম্যাপ প্রণয়নের আহ্বানও জানানো হয়।

এফবিসিসিআই পরিচালক বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, বর্তমান ডলার সংকটের সময়ে স্থানীয় শিল্পের সক্ষমতা বেশি প্রয়োজন। এমন মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ালে বেশির ভাগ টেক্সটাইল কারখানা মুখ থুবড়ে পড়বে, যা কর্মসংস্থান অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী হবে।

এফবিসিসিআই পরিচালক বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতেই সংকটময় মুহূর্তে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মেদ হাতেম জানান, রফতানি খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বাড়লে প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন