দিনাজপুরের হিলিতে হারভেস্টার মেশিন দিয়ে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষক। শ্রমিক দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের চেয়ে সময় এবং খরচ কম হওয়ায় দিন দিন এ মেশিনের ব্যবহার বাড়ছে। এতে শ্রমিক সংকট কাটিয়ে উঠে কম সময়ে ফসল ঘরে তুলতে পারছেন তেমনি উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষক। চাহিদানুযায়ী মেশিন না থাকায় কৃষকদের এখনো ধান কাটা ও মাড়াইয়ে শ্রমিকদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এদিকে কৃষকদের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে উৎসাহিত করতে কাজ করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরের হিলিতে চলতি মৌসুমে ৭ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করা হয়। ধান কাটা ও মাড়াইয়ের শুরু থেকেই তীব্র শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধান কাটা শ্রমিক এলেও এবার সেই সংখ্যা অনেক কম। গত বছর আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা প্রতিবিঘা জমির ধান কাটতে নিলেও এবার তা বেড়ে ৬-৭ হাজার টাকা উঠে গিয়েছে। শ্রমিকের বাড়তি মজুরির কারণে ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক।
হিলির চৌধুরী ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে যাই হোক মাঠে ধান হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক সংকট ও বাড়তি মজুরির কারণে মাঠ থেকে ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। হারভেস্টার মেশিন পাওয়ায় সে দুশ্চিন্তা যেমন দূর হয়েছে তেমনি দ্রুত সময়ের মধ্যে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছি। পাশাপাশি খরচও অর্ধেক লাগছে। যেখানে শ্রমিক দিয়ে এক বিঘা জমির ধান কাটতে লাগছে ৬-৭হ াজার টাকা, সেখানে মেশিন দিয়ে ধান কাটতে লাগছে ২ হাজার ৫০০ টাকা।
অন্য কৃষক নূর ইসলাম বলেন, মেশিন দিয়ে ধান কাটায় আমাদের খুব উপকার হচ্ছে। আমরা যদি শ্রমিক দিয়ে ধান কেটে নেই তাহলে এক বিঘা জমির ধান কাটতে ৭-৮ হাজার টাকা লেগে যাচ্ছে। সেখানে মেশিন আসার ফলে খুব উপকার হয়েছে। এবারে আমি ১৯ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি, মেশিন দিয়ে ধান কাটার ফলে ৩৫ হাজার টাকা লাগল। অথচ শ্রমিক দিয়ে ধান কাটলে আমার ১ লাখ টাকার বেশি লাগত।
হারভেষ্টার মেশিনের মালিক রাশেদুল ইসলাম বলেন, এ মেশিন দিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে অধিক পরিমাণ জমির ধান কাটা ও মাড়াই করা যায়। মেশিনের মাধ্যমে ধান কাটলে কৃষকের অনেক টাকা সাশ্রয় হয়। মেশিনে এক বিঘা জমির ধান কাটতে আড়াই হাজার টাকা লাগে। কিন্তু শ্রমিক দিয়ে ধান কাটলে ৫-৬ হাজার টাকা লাগে। এতে সময় যেমন বেশি লাগে, তেমনি বাড়তি খরচের কারণে কৃষক লাভবান হতে পারেন না। এ কারণে মেশিনে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। কিন্তু চাহিনুযায়ী আমরা মেশিন দিতে পারছি না।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মমতাজ সুলতানা বলেন, কৃষকদের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে উৎসাহিত করতে ও তাদের উৎপাদন খরচ কমাতে সরকারি প্রণোদনায় ৫০ ভাগ ভর্তুকিতে তিনটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার, ছয়টি রিপার মেশিন, পাওয়ার থ্রেশারসহ অন্য যন্ত্রপাতি বিতরণ করেছি। এ যন্ত্র দিয়ে কৃষক খুব কম সময়ে জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন। সে সঙ্গে শ্রমিকের যে সংকট সেটি কাটিয়ে উঠতে পারছেন। শ্রমিকের মজুরির কারণে যে বাড়তি অর্থ খরচ হতো সেটিও কমাতে পারছেন। আমরা চেষ্টা করছি, এ উপজেলায় কৃষক যেন উৎসাহিত হয়ে আরো বেশি পরিমাণে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। এতে উৎপাদন খরচ কমে গিয়ে তারা বেশি লাভবান হবেন।