নিত্যপ্রয়োজনীয়
পণ্যের মূল্য
ক্রমে আকাশচুম্বী
হয়ে উঠেছে।
সারা বিশ্বের
পণ্যবাজারই বর্তমানে
অস্থিতিশীল। ঘন
ঘন প্রাকৃতিক
দুর্যোগ, উচ্চচাহিদা,
কভিড-পরবর্তী
সময়ে জাহাজ,
বিমান ও
পণ্য পরিবহনের
ভাড়া অস্বাভাবিক
হারে বেড়ে
যাওয়ার কারণে
পণ্য ও
সেবার মূল্য
পৃথিবীব্যাপী বেড়ে
গেছে।
বাংলাদেশের পণ্যের
মূল্য বর্তমানে
লাগামহীনভাবে বেড়ে
চলেছে। বস্তুত
কভিড-১৯
অতিমারী শুরু
হওয়ার পর
গত ২০২০
সালের জুন
থেকেই মূল্যস্ফীতির
চাপ বাড়ছে।
তার ওপর
এ বছরের
ফেব্রুয়ারির শেষে
রাশিয়া ও
ইউক্রেনের মধ্যে
যুদ্ধ শুরু
হলে পণ্যের
মূল্য আরেক
দফা বেড়ে
যায়। বাংলাদেশ
যেহেতু বিশ্ব
অর্থনীতির সঙ্গে
ওতপ্রোতভাবে জড়িত,
সেই সঙ্গে
বাংলাদেশ বহু
পণ্য আমদানি
করে, তাই
আমাদের বাজারেও
খুব দ্রুত
উচ্চমূল্যের প্রভাব
ছড়িয়ে পড়েছে।
আমরা বিশ্ববাজার
থেকে জ্বালানি
তেল ছাড়াও
ভোজ্যতেল, চিনি,
গমসহ অন্যান্য
খাদ্য এবং
উৎপাদনের জন্য
মধ্যবর্তী পণ্য
ও কাঁচামাল
আমদানি করে
থাকি। যদিও
সরকার কিছু
পণ্যের ওপর
থেকে অগ্রিম
আয়কর তুলে
নিয়েছে কিন্তু
তার প্রভাব
বাজারে খুব
একটা দেখা
যায়নি।
এ রকম
একটি পরিস্থিতিতে
ভারত গম
রফতানির ওপর
নিষেধাজ্ঞা জারি
করেছে। যদিও
ভারত গম
রফতানির ওপর
নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে
কিন্তু তারা
এটিও বলেছে
যে প্রতিবেশী
এবং দুর্বল
বা ভঙ্গুর
দেশগুলোর জন্য
তাদের দরজা
খোলা থাকবে।
তাছাড়া আমদানির
জন্য যে
ঋণপত্র খোলা
হয়েছে তার
অধীনে আমদানি
করা যাবে।
তবে গমের
মূল্যের ওপর
এরই মধ্যে
নেতিবাচক প্রভাব
পড়েছে। কেননা,
রাশিয়া-ইউক্রেন
যুদ্ধের পর
ওই দুটি
দেশ থেকে
গম আমদানি
বন্ধ হয়ে
যায়। বাংলাদেশ
গমের জন্য
এখন মূলত
ভারতের ওপর
নির্ভর করছে।
মোট গম
আমদানির প্রায়
৬৩ শতাংশই
ভারত থেকে
হচ্ছে। আর
বাংলাদেশের মোট
গমের চাহিদার
৮৬ শতাংশই
আমদানি করতে
হয়। সুতরাং
বাংলাদেশের জন্য
গম রফতানির
নিষেধাজ্ঞা বলবৎ
থাকলে শুধু
গমের মূল্যই
বাড়বে না,
চাল ও
অন্যান্য পণ্যের
মূল্যের ওপরও
তার প্রভাব
পড়বে। এরই
মধ্যে চালের
মূল্য বেড়ে
গিয়েছে।
এ অবস্থায়
পণ্যের উচ্চমূল্য
এবং মূল্যস্ফীতির
চাপ নিয়ন্ত্রণের
জন্য সরকারকে
খুব দ্রুত
পদক্ষেপ নিতে
হবে। বিকল্প
উৎস থেকে
গম আমদানির
ব্যবস্থা করতে
হবে। পাশাপাশি
ভারত সরকারের
সঙ্গেও আলোচনা
করতে হবে।
এছাড়া শুধু
ভোজ্যতেল বা
গম নয়,
বাজারে পণ্যের
উচ্চমূল্যের বিষয়টি
একটি সামাজিক
দৃষ্টিকোণ থেকে
বিবেচনা করে
প্রয়োজনীয় কৌশল
অবলম্বন করতে
হবে। এটিকে
খণ্ডিত নীতি
দিয়ে সমাধান
করা যাবে
না। কেননা
এটি মনে
রাখতে হবে
যে মূল্যস্ফীতির
চাপ আরো
কিছু সময়
থাকবে। এটি
সারা পৃথিবীতেই
অনুভূত হচ্ছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে
সরকারকে দুটি
বিষয়ে পদক্ষেপ
নিতে হবে।
প্রথমত, বাজারে
পণ্যের সরবরাহ
বাড়াতে হবে।
এর জন্য
দেশের ভেতরে
উৎপাদিত পণ্য
এবং আমদানীকৃত
পণ্যের সংগ্রহ
বাড়াতে হবে।
দ্বিতীয়ত, দরিদ্র
ও নিম্ন
আয়ের সহায়তা
দিতে হবে
যাতে তারা
বাজার থেকে
পণ্য কিনতে
পারে। তাদের
জন্য সামাজিক
সুরক্ষা দিতে
হবে। এছাড়া
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের
প্রণোদনা দিতে
হবে, যাতে
তাদের ব্যবসা
ঘুরে দাঁড়াতে
পারে।
তবে প্রশ্ন
হচ্ছে এ
কার্যক্রমগুলোর জন্য
প্রচুর অর্থ
প্রয়োজন। সেই
অর্থ কোত্থেকে
আসবে? তাই
সরকারকে কয়েকটি
বিষয়ে মনোযোগ
দিতে হবে।
প্রথমত, আমাদের
রাজস্ব আহরণের
পরিমাণ খুবই
কম। বর্তমানে
আমাদের কর-জিডিপি
হার মাত্র
৭.৭
শতাংশ, যা
দক্ষিণ এশিয়ার
মধ্যে নিম্নতম।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ
সঞ্চালন না
বাড়ালে আমরা
উন্নয়ন কার্যক্রমে
এবং সামাজিক
নিরাপত্তা খাতে
অর্থ বরাদ্দ
বাড়াতে পারব
না।
দ্বিতীয় বিষয়টি
হচ্ছে সুশাসন।
সরকারি অর্থ
ব্যয়ের ক্ষেত্রে
স্বচ্ছতা ও
জবাবদিহিতা বাড়াতে
হবে। অপ্রয়োজনীয়
খরচ, প্রকল্প
বাস্তবায়নে অপচয়
রোধ ইত্যাদি
নিশ্চিত করতে
হবে। সরকার
এরই মধ্যে
ব্যয় কমানোর
ব্যাপারে কয়েকটি
পদক্ষেপ নিয়েছে।
সেগুলো ভালো
উদ্যোগ। কিন্তু
আরো সাশ্রয়ের
সুযোগ রয়েছে।
তৃতীয় আরেকটি
বিষয় হচ্ছে
বৈদেশিক মুদ্রা
ব্যয়ের ক্ষেত্রেও
সতর্কতা অবলম্বন
করতে হবে।
যেহেতু আমদানি
ব্যয় বেড়ে
যাচ্ছে এবং
রফতানি আয়
সে তুলনায়
বাড়ছে না—রেমিট্যান্স
প্রবাহও বাড়ছে
না—ফলে
চলতি হিসাবে
বিরাট ঘাটতি
সৃষ্টি হয়েছে।
এটি চলতে
থাকলে তা
বৈদেশিক মুদ্রার
বাজারে চাপ
সৃষ্টি করবে।
এতে টাকার
মান আরো
কমবে এবং
মূল্যস্ফীতিও বাড়বে।
সুতরাং মূল্যস্ফীতি
কমানোর বিষয়টি
অনেক পদক্ষেপের
সঙ্গে জড়িত।
এটি পূর্ণাঙ্গ
নীতি পদক্ষেপের
মাধ্যমে মোকাবেলা
করতে হবে
এবং যত
দ্রুত সম্ভব
সেটি করতে
হবে। কেননা
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির
চাপ অব্যাহত
থাকলে তা
সমাজে আরো
বৈষম্য বাড়াবে,
যেটি মোটেই
কাম্য নয়।
ড. ফাহমিদা খাতুন: নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)