লিটন কুমার দাস, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, ইয়াসির আলী কিংবা অন্য কেউ হয়তো ভবিষ্যতে বাংলাদেশের হয়ে ১০ হাজার টেস্ট রান করবেন। কিন্তু একটি মাইলফলক থেকে যাবে একজনেরই দখলে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবার আগে ৫ হাজার টেস্ট রান করার গৌরবের অধিকারী মুশফিকুর রহিম। সদ্যই চট্টগ্রামে শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্টে এই মাইলফলকে পৌঁছেন ৩৫ বছর বয়সী ক্রিকেটার।
অথচ সর্বাগ্রে রেকর্ডটি গড়তে পারতেন তামিম ইকবালও। দারুণ এক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে রানের এই মাইলফলকটিতে নিজের নামটি লিখিয়ে নিলেন মুশফিক। ৮১ টেস্টে তার নামের পাশে এখন ৫ হাজার ৩৭ রান। এই লড়াইয়ে ‘পরাজিত’ তামিম মাত্র ১৯ রান দূরে দাঁড়িয়ে।
গত ১৫ মে চট্টগ্রাম টেস্ট খেলতে নামার মুহূর্তে ৫ হাজার রান থেকে মুশফিক ছিলেন ৬৮ রান দূরে, আর তামিম ১৫২ রান দূরে। ওপেনিংয়ে নামা তামিম দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে তৃতীয় দিন দশম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন। যদিও ১৩৩ রানের সময় তিনি মাংসপেশির চোটের কারণে ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ হয়ে মাঠ ছাড়েন। তাতে ‘ব্যাটন’ চলে যায় মুশফিকের হাতে। তিনি সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে ফেলেন। তৃতীয় দিন ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন, আর চতুর্থ দিন সকালে ১৫ রান করে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ৫ হাজারি ক্লাবে ঢুকে পড়েন।
চতুর্থ দিন ৫ হাজারি ক্লাবে নাম লেখাতে পারতেন তামিমও। যদিও তিনি আর কোনো রান যোগ না করেই সাজঘরে ফিরেছেন। হয়তো ২৩ মে শুরু হওয়া মিরপুর টেস্টেই তিনি বসবেন মুশফিকের পাশে।
তামিমের সঙ্গে দ্বৈরথ নিয়ে মুশফিক বললেন, সে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। তামিম জানত, সে খুবই কাছে। সে মজা করে বলেছে, সে পৌঁছতে পারল না, আমি পেরেছি। যখন কোনো ভাই, সতীর্থ কিংবা বন্ধু কিছু অর্জন করে তখন আমার ভীষণ ভালো লাগে। আর রেকর্ডের জন্মই হয় তা ভাঙার জন্য। তামিম যখন আমার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভেঙে দেয় তখন আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম। তখন সে কিন্তু বলেছিল, আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে আমি আবার তার রেকর্ড ভেঙে দেব। এটা সুস্থ এক প্রতিযোগিতা আমাদের এবং এভাবেই আমরা সতীর্থরা একে অন্যকে সাহায্য করছি।
তামিম ও মুশফিক অতীতে কয়েকবার টেস্ট রানে একে অন্যকে টপকে গেছেন। তামিম ২০১৫ সালে হাবিবুল বাশারকে টপকে যান। এরপর ২০২০ সালে তামিমকে টপকে যান মুশফিক। যদিও গত বছরের এপ্রিলে ফের সিংহাসন পুনরুদ্ধার করেন তামিম। মুশফিক শীর্ষে ফেরেন নভেম্বরে। চট্টগ্রামে তৃতীয় দিন ১৩৩ রান করে মুশফিককে আবার টপকে যান তামিম। কিন্তু জ্যেষ্ঠ সতীর্থের কাছে আবারো তা হারিয়েছেন।
তামিম ও মুশফিক একসঙ্গে ৩৩০ ম্যাচ খেলেছেন বাংলাদেশের হয়ে। দুজনই একে অন্যের নেতৃত্বে খেলেছেন এবং ১৫ বছর ধরে একত্রে খেলে যাচ্ছেন। তাদের তুলনা করা যেতে পারে শ্রীলংকান গ্রেট অর্জুনা রানাতুঙ্গা ও অরবিন্দ ডি সিলভার সঙ্গে, যারা একত্রে খেলেছেন ৩২২ ম্যাচ। ৫ হাজার রান তোলায় রানাতুঙ্গাকে হারিয়েছেন ডি সিলভা। যদিও দুজনকে ধরা হয় লংকান ক্রিকেটের অগ্রসেনানী।
শুধু টেস্ট নয়, সব ফরম্যাটেই বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক। ২৩৩ ওয়ানডে ম্যাচে ৬৬৯৭ রান নিয়ে তিনি আছেন তিন নম্বরে। ২২৩ ম্যাচে ৭৮২৬ রান নিয়ে শীর্ষে তামিম। আর ২২১ ম্যাচে ৬৭৫৫ রান নিয়ে দুইয়ে সাকিব আল হাসান। ১১২৯ রানে এগিয়ে থাকায় এখানে অন্তত তামিমকে টপকানোর সুযোগ তার জন্য ক্ষীণ।
ওয়ানডে সেঞ্চুরিতেও অনেক এগিয়ে তামিম। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৪টি সেঞ্চুরি তার। অন্যদিকে, মুশফিক তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন ৮ বার। সাকিব এই ফরম্যাটে সেঞ্চুরি করেছেন ৯টি।
টি২০ ক্রিকেটে রান চার্টে মুশফিক চারে। ১০০ ম্যাচে তার রানসংখ্য ১ হাজার ৪৯৫। মাহমুদউল্লাহ ১১৫ ম্যাচে ২ হাজার ২ রান করে শীর্ষে। এরপরে রয়েছেন সাকিব (১ হাজার ৯০৮) ও তামিম (১ হাজার ৭০১)।
সব মিলিয়ে তিন ফরম্যাটে রানে শীর্ষে তামিম। ৩৬৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ১৪ হাজার ৫০৮ রান তার। ৪১৪ ম্যাচে ১৩ হাজার ২২৯ রান করে দুইয়ে মুশফিক ও ৩৭৭ ম্যাচে ১২ হাজার ৭১৮ রান নিয়ে তিনে সাকিব। অবশ্য তিন ফরম্যাট মিলিয়ে সাকিব উইকেট নিয়েছেন ৬২৩টি।