মন্দার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে উদীয়মান অর্থনীতিগুলো

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ানো হচ্ছে। এ প্রবণতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ঝুঁকি তৈরি করছে। যুক্তরাষ্ট্রে ওয়ালমার্টের একটি স্টোর ছবি: রয়টার্স

কভিডের বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল বিশ্ব অর্থনীতি। গত বছরের প্রথমার্ধে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির দেখা পায় দেশগুলো। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে এসে ধীর হয় সেই প্রবৃদ্ধির ধারা। এর মধ্যে চলতি বছরের শুরুতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরো জটিল করে তুলেছে। পাশাপাশি চীনজুড়ে কভিডজনিত লকডাউন মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার বাড়ানো অর্থনীতিতে আবারো বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরি করেছে। অবস্থায় ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স (আইআইএফ) জানিয়েছে, চীন ছাড়া অন্য উদীয়মান অর্থনীতিগুলো মন্দার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। খবর দ্য ন্যাশনাল।

সর্বশেষ পূর্বাভাসে আইআইএফ জানিয়েছে, চলতি বছর বিশ্বব্যাপী মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) দশমিক শতাংশ বাড়বে। বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে দশমিক শতাংশে নামবে। অবস্থায় বছরের শেষ নাগাদ চীন বাদে ইউরো অঞ্চলের পাশাপাশি উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর মন্দায় পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

আইআইএফের মতো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে এনেছে। যদিও সেই হার আইআইএফের পূর্বাভাসের চেয়ে উপরে রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত এবং ক্রমবর্ধমান দামের কারণে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে। আইএমএফ চলতি আগামী বছর দশমিক শতাংশ বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। হার সংস্থাটির জানুয়ারিতে দেয়া পূর্বাভাসের চেয়ে যথাক্রমে দশমিক শতাংশ দশমিক শতাংশ পয়েন্ট কম।

আইআইএফ জানিয়েছে, মন্দার সতর্কতার কারণে বাজার নিয়ন্ত্রকদের আরো সতর্কতার সঙ্গে নীতি স্বাভাবিককরণের দিকে এগোতে হবে। অতীতে ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তা মন্দার ঝুঁকি বিনিয়োগকারীদের মনোভাবে শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিল। সুতরাং আর্থিক নীতি কঠোর করলে অর্থনীতিতে বিপর্যয়ের শঙ্কা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করছে বাণিজ্য গ্রুপটি।

যেমন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরেও পর্যায়ক্রমে সুদহার বাড়ানোর একটি চক্র হাতে নিয়েছিল ফেডারেল রিজার্ভ। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম প্রতিষ্ঠানগুলোর এসঅ্যান্ডপি-৫০০ সূচক উল্লম্ব পতনের মুখে সেই পদক্ষেপ থেকে সরে আসা হয়েছিল। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সেই সুদহার বৃদ্ধি অবাঞ্ছিত হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে মন্দা নিয়ে পুঁজিবাজারগুলো উদ্বিগ্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একই ধরনের ক্ষোভের ঝুঁকি এখন আবার বাড়ছে।

গত মার্চে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক-চতুর্থাংশ পয়েন্ট সুদের হার বৃদ্ধি অনুমোদন করেছিল। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় সুদের হার পর্যায়ক্রমে বাড়াচ্ছে। দুই বছর ধরে দেশটিতে সুদের হার শূন্যের কাছাকাছি ছিল। দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ১৯৮১ সালের পর সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে।

এদিকে ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকও (ইসিবি) ২০১১ সালের পর আগামী জুলাইয়ে প্রথমবারের মতো সুদের হার বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের পাশাপাশি অন্য দেশগুলোও কয়েক মাসের মধ্যে সুদের হার বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। রেকর্ড উচ্চতায় থাকা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অনেক উদীয়মান অর্থনীতিও সুদের হার বৃদ্ধির চক্রে প্রবেশ করছে।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বৈশ্বিক ঋণ ৩০৫ লাখ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। মন্থর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মধ্যেও বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র চীন ব্যাপক হারে ঋণ নেয়া অব্যাহত রেখেছে। ঋণের পরিমাণ বৈশ্বিক জিডিপির ৩৪৮ শতাংশেরও বেশি। অবস্থায় সুদের হার বৃদ্ধি উদীয়মান দেশগুলোর জন্য ঋণের চাপ আরো বাড়িয়ে তুলবে।

প্রতিবেদনে আইআইএফ বলেছে, মন্দার ঝুঁকির মধ্যে ফেডারেল রিজার্ভ ইসিবিকে মুদ্রানীতি কঠোর করার প্রক্রিয়ায় অন্তত সতর্ক থাকতে হবে। আবার একেবারে রেকর্ড নিম্ন পর্যায়ে থাকার পরিবর্তে সুদের হার কিছুটা বাড়ানো অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক হতে পারে। কারণ উচ্চমূল্যস্ফীতিও ভোক্তা ব্যয় কমিয়ে দেয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ঝুঁকি তৈরি করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন