নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে দুশ্চিন্তা কমতে না কমতেই নতুন আতঙ্কের প্রাদুর্ভাব। পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে বাড়ছে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ। এমনকি যারা সম্প্রতি আফ্রিকায় ভ্রমণ করেনি, তাদেরও এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে শুক্রবার নতুন করে ১১ জনের শরীরে এ রোগের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে সেখানে মাঙ্কিপক্সে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২০-এ। পর্তুগালে নতুন করে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৯ জন, সেখানে মোট শনাক্ত দাঁড়াল ২৩ জনে।
এবিসি ডটনেটের খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার প্রথমবারের মতো এ রোগে আক্রান্ত শনাক্ত করার তথ্য দিয়েছে ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা ও বেলজিয়াম। দুজন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়ও, তাদের একজন মেলবোর্নের, অন্যজন সিডনির। তারা দুজনই সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফর করে ফিরেছে।
নাইজেরিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সের সাবেক প্রধান এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা বোর্ডের সাবেক সদস্য ভাইরোলজিস্ট ওয়েওয়ালে তোমোরি বলেন, এমন তথ্যে আমি হতবাক হয়ে গেছি। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠছি আর দেখছি নতুন নতুন দেশ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।
ব্রিটিশ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা যতগুলো তত্ত্ব নিয়ে ভাবছেন সেখানে রোগটি যৌনবাহিত কিনা সেটা নিয়েও আলোচনা চলছে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ডাক্তার ও নার্সদের সতর্ক থাকতে বলেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা, যদিও সাধারণ জনগণের মধ্যে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কম বলেই মনে করছেন তারা।
ড. তোমোরি বলেন, নাইজেরিয়ায় প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়া এ রোগে বছরে ৩০০০ মানুষ আক্রান্ত শনাক্ত হয়। তাদের বেশির ভাগই হয় একদম গ্রামীণ এলাকায়। ওই সব জায়গায় মানুষ আক্রান্ত ইঁদুর ও কাঠবিড়ালির সংস্পর্শে যায় বেশি।
তবে রোগটি খুব সহজে ছড়ায় না। তিনি যোগ করেন, যতক্ষণ না কেউ উন্নত স্বাস্থ্যসেবার জন্য যায়, ততক্ষণ রোগে আক্রান্ত কিনা তা জানা যায় না। তোমোরি আশা করেন, ইউরোপ ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশে মাঙ্কিপক্সের উপস্থিতি রোগটি সম্পর্কে আরো বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়া তৈরিতে সাহায্য করবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমার্জেন্সি রেসপন্সের নেতৃত্ব দানকারী ড. ইব্রাহিমা সোসি ফল চলতি সপ্তাহে বলেন, এখনো এ রোগের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার গতিশীলতাসহ অনেক বিষয় অজানা রয়েছে।
ব্রিটিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি যাদের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে তাদের সবাই তরুণ, তাদের আফ্রিকা ভ্রমণের কোনো ইতিহাস নেই এবং তারা সবাই সমকামী ও উভকামী।
স্পেন ও পর্তুগাল কর্তৃপক্ষও একই কথা বলছে। যৌন স্বাস্থ্য ক্লিনিকে কোনো ক্ষত নিয়ে আসার পরে তাদের শরীরে এ রোগের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। তবে এখনো এ রোগ যৌনবাহিত কিনা তা পুরোপুরি নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা।
আফ্রিকান সেন্টার অব এক্সেলেন্স ফর জেনোমিকস অব ইনফেকশাস ডিজিজের ডিরেক্টর ক্রিশ্চিয়ান হাপ্পি বলেন, ইউরোপে যা ঘটছে তা আগে কখনো দেখিনি। আফ্রিকায় সংক্রমণের ধরন যে আলাদা তেমন কিছু আমরা টের পাইনি। তবে যদি ইউরোপে ভিন্ন রকম কিছু ঘটে থাকে তাহলে ইউরোপের উচিত বিষয়টির তদন্ত করা।
হাপ্পি যোগ করেন, ১৯৮০ সালে নির্মূল হওয়ার পরে গুটিবসন্তের টিকা প্রদান কার্যক্রম স্থগিত করা অবচেতনভাবে মাঙ্কিপক্স ছড়াতে সহায়তা করতে পারে। গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্স থেকেও সুরক্ষা দেয় কিন্তু গণটিকাদান তো কয়েক দশক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।
এখন রোগটির সংক্রমণ প্রথম কীভাবে শুরু হলো এবং মাঙ্কিপক্স কীভাবে ছড়িয়ে পড়ার গতি অর্জন করছে, সেটা বোঝার ওপরই গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
