সিলেটে তিন নদীর মোহনায় বাঁধ ভেঙে বাড়াল দুর্ভোগ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, সিলেট

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বারোঠাকুরী অমলশিদ এলাকায় বরাক-সুরমা-কুশিয়ারা নদীর মোহনায় তীররক্ষা বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। এতে জকিগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঘটনা ঘটে। গতকাল সকালে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার জেলা প্রশাসক জকিগঞ্জের ভাঙনকবলিত বাঁধ পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে বন্যার কারণে সিলেটের কানাইঘাটে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে নগরীতে ধীরগতিতে পানি কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ বেড়েছে বানভাসি মানুষের।

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে  ১২টার দিকে সিলেটের সীমান্তবর্তী বরাক নদীর মোহনায় সুরমা-কুশিয়ারার উৎসস্থলে তীররক্ষা বাঁধটি ভেঙে যায়। এতে মুহূর্তেই তলিয়ে যায় জকিগঞ্জের ফিল্লাকান্দি, অমলশিদ, বারোঠাকুরী, খাসিরচক, খাইরচক, বারোঘাট্টা, সোনাসারসহ বেশকিছু এলাকা। একই সঙ্গে জকিগঞ্জ উপজেলা সদরের সঙ্গে অমলশিদ যাতায়াতের সড়কটিও পানিতে ভেসে যায়। ফলে সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

জকিগঞ্জের বারোঠাকুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহসীন মর্তুজা বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে জকিগঞ্জের ত্রিগাঙের ডাইকটি (বাঁধ) স্রোতের তোড়ে ভেঙে গেছে। বাঁধ ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে বারোঠাকুরী, খাসিরচক, খাইরচক, বারোঘাট্টা, সোনাসার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রাতেই মাইকিং করে এলাকবাসীকে সতর্ক করা হয়। বাঁধ ভাঙার কারণে সুরমা-কুশিয়ারার তীরবর্তী জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ সিলেট শহরের কিছু এলাকায় বন্যার পানি বাড়ছে।

এদিকে সিলেট সদরসহ সীমান্তবর্তী উপজেলা কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি গত বৃহস্পতিবার রাতে কিছুটা উন্নতি হলেও সকাল থেকে পানি কিছুটা বাড়ে। বিকালে আবার কমতে শুরু করে।

গোয়াইনঘাট উপজেলার বারহাল এলাকার বাসিন্দা মঞ্জুর আহমেদ বলেন, রাতে পানি কিছুটা কমেছিল, সকালে আবার বেড়েছে।

কানাইঘাট উপজেলা সদরের বাসিন্দা আলাউদ্দিন জানান, পানি কিছুটা কমলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। দুর্ভোগ আরো বেড়েছে বানভাসি মানুষের। গরু-মহিষ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে ওসব এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ। উপজেলার স্কুলগুলোকে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

জকিগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পল্লব হোম দাস বলেন, তিন নদীর মোহনায় বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। এতে নতুন করে উপজেলার বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সিলেটের অন্যান্য উপজেলায়ও পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, সিলেটের প্রধান নদ-নদীর পানি এখনো বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কোথাও কোথাও পানি কমার খবর পাওয়া গেছে। আশা করা যাচ্ছে ধীরে ধীরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশন বৃহস্পতিবার রাতে নগর ভবনে জরুরি সভা করেছে। সভায় বন্যার্তদের তালিকা করে তাদের সহায়তার উদ্যোগ নেয়া হয়। গতকাল দিনভর সিলেট নগরীর বর্ধিত অংশসহ বন্যাকবলিত এলাকায় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ত্রাণ তত্পরতা চালাতে দেখা যায়।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিসিকের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থানকারী নাগরিকদের খাবার সংকট, বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসক দল কাজ করছে।

জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, জকিগঞ্জে তিন নদীর মোহনায় বাঁধ ভাঙার খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।

অন্যদিকে ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার সহকারী সচিব মো. মোশাররফ হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়েছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি-২০২২-এর প্রথম ধাপে তফসিল ঘোষিত সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলায় ২০ মে থেকে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম বন্যার কারণে স্থগিত রাখা হলো।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন