বেনাপোল স্থলবন্দর

দুর্বল অবকাঠামোর কারণে কমছে আমদানি-রফতানি ও রাজস্ব

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, যশোর

পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাবে ভোগান্তিতে পড়ছেন যশোরের বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রফতানিকারক ব্যবসায়ীরা। অবস্থা থেকে উত্তরণে কর্মবিরতির মতো কর্মসূচিও ঘোষণা করে বন্দরটি ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের সংগঠন বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতি। যদিও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বাস্তবায়নের আগেই কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। তবে অতিদ্রুত ক্রেন, ফর্কলিফটসহ অন্যান্য অবকাঠামোর সমস্যা সমাধান না করা হলে পুনরায় এমন কর্মসূচি দেয়ার হুমকিও দেন ব্যবসায়ীরা। এমন অবস্থার কারণে কমে আসছে বন্দরের রাজস্ব আয়। ফলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাজস্ব বিভাগও।

বেনাপোল কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান জানান, বন্দরে পণ্যাগার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা চাহিদামতো পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। বেনাপোল বন্দরে ঢোকার অপেক্ষায় ওপারে এক থেকে দেড় মাস ধরে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকছে। চলতি অর্থবছরের নয় মাসে আমদানি হয়েছে ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২৯৫ টন পণ্য। ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ৪২০ টন পণ্য। এতে রাজস্ব আয় দিন দিন মারাত্মক হারে কমে এসেছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথম নয় মাসে ৬০৭ কোটি লাখ টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। নয় মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা, বিপরীতে আদায় করা হয়েছে হাজার ২৮৬ কোটি লাখ টাকা। গত অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল হাজার ২৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, বিপরীতে আদায় হয়েছিল হাজার ১৪৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ওই বছর ঘাটতি ছিল হাজার ৯৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট কমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, দেশে সরকার অনুমোদিত মোট ২৪টি স্থলবন্দর আছে। এর মধ্যে মাত্র ১২টি বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি হয়। অন্যান্য বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যের আগ্রহ না থাকায় এখনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। অযথা হাজার হাজার কোটি টাকা এসব বন্দরে খরচ করে অর্থ অপচয় করা হয়েছে। অথচ বেনাপোল বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যের আগ্রহ বেশি থাকলেও বন্দরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন হচ্ছে না।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, প্রতি বছর বেনাপোল বন্দর থেকে আমদানি পণ্য থেকে সরকারকে হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দেয়া হচ্ছে। তবে নিরাপদভাবে বাণিজ্য সম্পাদনের পরিবেশ আজও বন্দর কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। বেনাপোল বন্দরের ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৪৫ হাজার টন পণ্যের। বন্দরে বর্তমানে প্রায় দুই লাখ টন আমদানি পণ্য নিয়ে ভারতীয় ট্রাক খালাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। এসব ট্রাকে শিল্প-কারখানার কাঁচামাল সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের নির্মাণাধীন যন্ত্রপাতি রয়েছে। জায়গার অভাবে এসব পণ্য খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে প্রতিদিন ট্রাকপ্রতি হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। পণ্য ছাড় করাতে না পারায় দেশের শিল্প-কারখানার উৎপাদন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত হচ্ছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৬০০ ট্রাক পণ্য আমদানির চাহিদা থাকলেও বন্দরে জায়গা সংকটে ৩০০ ট্রাকের বেশি পণ্য আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া রফতানি বাণিজ্যও বিঘ্নিত হচ্ছে। বন্দরে ভারী পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজে ব্যবহূত ক্রেন ফর্কক্লিপ বেশির ভাগ সময় অচল হয়ে পড়ে থাকায় পণ্য খালাসে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক শহর কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে পথে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি ব্যবসায়ীদের। তবে বন্দরের নানা অব্যবস্থাপনায় লোকসানের কবলে পড়ে অনেক ব্যবসায়ী এরই মধ্যে বেনাপোল বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে গেছে। কর্মবিরতি পালনের আগে বন্দরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান ব্যবসায়ী নেতা।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, এরই মধ্যে বন্দরে জায়গা অধিগ্রহণ করে নতুন পণ্যাগার তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। আরো জায়গা অধিগ্রহণের কাজ চলছে। তবে এসব কাজ শেষে হতে আড়াই বছরের মতো সময় লাগবে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ক্রেন, ফর্কলিফটের সমাধান দুই মাসের মধ্যে অন্যান্য সমস্যার সমাধান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। যে কারণে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির নেতারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন