ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান ৫৫ বছরের বেলায়েত

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, ঢাবি

অর্থাভাবে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পারেননি গাজীপুরের বেলায়েত শেখ। স্বপ্ন ছিল ছেলে-মেয়েরা তার আক্ষেপ মেটাবে। কিন্তু লেখাপড়ায় সব রকম সমর্থন দেয়া হলেও তারা বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি। তাই ৫৫ বছর বয়সে নিজেই পড়াশোনা শুরু করেছেন পেশায় সংবাদকর্মী বেলায়েত।

বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আমি যদি শেষ বয়সে এসে পড়াশোনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাই, তাহলে তরুণ প্রজন্ম উৎসাহিত হবে। আমি মূলত তাদের একটা বার্তা দিতে চাই যে, সংসার চালিয়ে, কর্ম করে, মানুষের সেবা করেও লেখাপড়া করা যায়। তরুণরা সব রকম সুযোগ-সুবিধা পেয়েও পড়াশোনা করে না। তাই তাদের প্রতি এটা আমার একটা চ্যালেঞ্জ।

এর আগে ২০১৯ সালে বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসা থেকে তিনি দাখিল (ভোকেশনাল) এবং চলতি বছর ঢাকা মহানগর কারিগরি কলেজ থেকে এইচএসসি (ভোকেশনাল) পাস করেন। গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড এলাকায় পিতা মৃত হাসেন আলী শেখ ও মাতা জয়গন বিবির ঘরে ১৯৬৮ সালে তার জন্ম। বেলায়েত শেখ জাতীয় দৈনিক করতোয়ার শ্রীপুর প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন।

তিনি জানান, প্রবল ইচ্ছা সত্ত্বেও অর্থের অভাবে ১৯৮৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি। সে সময় ফরম ফিলাপের টাকায় অসুস্থ বাবার চিকিৎসা করাতে হয়েছিল। এরপর ১৯৮৮ ও ১৯৯০ সালেও পরীক্ষা দিতে চেয়েও ব্যর্থ হতে হয়েছেন। এক পর্যায়ে পড়াশোনায় ইতি টানেন বেলায়েত।

তিনি জানান, এসএসসি দিতে না পারায় মেকানিক্যাল কোর্স করেছিলাম। মোটর গাড়ির ওয়ার্কশপে কাজ করে ২৫-২৬ বছর একাধারে সংসার চালিয়েছি। এছাড়া ভাই-বোনদের পড়াশোনা করানোর দায়িত্ব ছিল আমার ঘাড়ে। কিন্তু তারপরও তাদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত না করতে পারার আক্ষেপ রয়ে গেছে। এমনকি তার সন্তানরাও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।

বেলায়েত শেখ বলেন, সারাদেশে হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে পড়াশোনায় উদাসীনতার কারণে ঝড়ে পড়ছে। বাবা-মায়ের কী অপরাধ যে তাদেরও স্বপ্ন ভঙ্গ করা হচ্ছে? যারা অর্থাভাবে পড়াশোনা করতে পারছে না, তাদের প্রয়োজনে খণ্ডকালীন কাজ করে হলেও শিক্ষা অর্জনের পরামর্শ দেন তিনি।

আগামী জুন মাসে অনুষ্ঠেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় তিনি অংশগ্রহণ করবেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল সন্তানরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু তিন সন্তানের কেউই তা পূরণ করতে পারেনি। সেই ক্ষোভ থেকেই আমার এই প্রচেষ্টা। আসন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে বেলায়েত বলেন, বয়স চল্লিশ পার হলে পড়া মাথায় ঢোকে না। তাই পড়া সহজে মুখস্থ হয় না। এজন্য পড়াগুলো বারবার লিখতে লিখতে আয়ত্তে আনার চেষ্টা করি।

এ বিষয়ে তার শিক্ষক হীরক রাজ বলেন, প্রথম দিন তাকে ক্লাসে দেখে ভাবি, হয়ত কোনো মেয়ের অভিভাবক হবেন। পরে বুঝলাম উনিও এবার পরীক্ষা দেবেন। প্রথমে খুব অবাক হলেও ভালো লাগা কাজ করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন