শপথ নিয়েই নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ রনিল বিক্রমাসিংহের

বণিক বার্তা ডেস্ক

রনিল বিক্রমাসিংহে ও নরেন্দ্র মোদি ফাইল ছবি: এনডিটিভি

শ্রীলংকার ২৬তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা প্রশমনের চ্যালেঞ্জ তার সামনে। ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম আনুষ্ঠানিক বক্তব্যেই দুর্দিনে শ্রীলংকার পাশে দাঁড়ানোর জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। বক্তব্যে সামনের দিনগুলোয় নিজের প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদকালে ভারত শ্রীলংকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। খবর এনডিটিভি।

বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন রনিল বিক্রমাসিংহে। এরপর প্রথম কর্মসূচি হিসেবে এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। সেখানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আরো বাড়াতে চাই এবং তাকে আমি ধন্যবাদ জানাই।

এখন পর্যন্ত দেনায় জর্জরিত শ্রীলংকাকে ঋণ, ক্রেডিট লাইন এবং কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে ৩০০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। দেশটির পক্ষ থেকে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রিত্বের দায়িত্ব গ্রহণের পর বিক্রমাসিংহেকে অভিনন্দন জানিয়ে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গঠনকৃত লংকাদ্বীপের নতুন সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে ভারত। দ্বীপদেশটির বাসিন্দাদের প্রতি নয়াদিল্লির অঙ্গীকারও অব্যাহত থাকবে।

রনিল বিক্রমাসিংহের পূর্বসূরি মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ করেন গত সোমবার। এর পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক প্রকার সরকারহীন ছিল শ্রীলংকা। ওইদিন রাজাপাকসে ভাইদের সমর্থকরা বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালালে গোটা শ্রীলংকায় সংঘাত শুরু হয়। রাজাপাকসের সমর্থকসহ রাজনীতিবিদদের মালিকানাধীন সম্পদে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ চালাতে থাকে বিক্ষোভকারীরা। খোদ রাজাপাকসে পরিবারের ঘরবাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই রাতেই পদত্যাগ করেন সদ্যবিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। ওই সময় শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন টেম্পল ট্রিতেও হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। জনরোষ থেকে বাঁচতে সেনা প্রহরায় শ্রীলংকার একটি নৌঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয় মাহিন্দা রাজাপাকসেকে।

শ্রীলংকার বর্তমান পরিস্থিতির জন্য রাজাপাকসে পরিবারের স্বৈরশাসন অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করছে বিক্ষোভকারীরা। রনিল বিক্রমাসিংহে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাহিন্দা রাজাপাকসেকে প্রতিস্থাপন করলেও বিক্ষোভকারীরা বলছে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাবে তারা।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রে শ্রীলংকা সরকারের মনোযোগ গুটিকয়েক বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে। রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, জনগণের জন্য পেট্রল, ডিজেল বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে আপাতত সমস্যার সমাধান করতে চাই আমি। যে দায়িত্ব আমি নিয়েছি, তা নির্বাহের জন্য যা করা প্রয়োজন আমি করব।

বর্তমানে শ্রীলংকার পার্লামেন্টে রনিল বিক্রমাসিংহের দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) আসন রয়েছে মোটে একটি। এই একটি আসন নিয়ে লংকান পার্লামেন্টে রনিল বিক্রমাসিংহে সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা আদায় করতে পারবেন কিনা, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন এক লংকান সাংবাদিক। এর উত্তরে বিক্রমাসিংহে বলেছেন, যখন প্রয়োজন হবে আমি সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনের বিষয়টি প্রমাণ করব। শ্রীলংকাব্যাপী বিক্ষোভের বিষয়ে তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের সচিবালয়ের সামনে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে যে বিক্ষোভ চলছিল, সেটির ওপর থেকে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে কথাও বলা হবে।

বিক্ষোভকারীরা তাকে পদত্যাগ করতে বললে নিয়ে প্রয়োজনে মুখোমুখি তাদের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত আছে জানিয়ে বিক্রমাসিংহে বলেন, যদি অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা আমার থাকে, তবে আমি তা অবশ্যই করব।

শ্রীলংকার পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী দল সামাগি জন বলবেগায়া (এসজেবি) দেশটির বর্তমানে তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল জনতা বিমুক্তি পেরামুনার (জেভিপি) নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য কঠিন সব শর্ত জুড়ে দেয়ায় রনিল বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রীর পদে নিয়োগ দিয়েছেন গোতাবায়া রাজাপাকসে। এসজেবি জেভিপির শর্তের প্রথমেই বলা হয়েছে, গোতাবায়া রাজাপাকসেকে পদত্যাগ করতে হবে।

পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন শ্রীলংকা পদুজানা পেরামুনার (এসএলপিপি) সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল এসজেবির একাংশ অন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমর্থন নিয়ে রনিল বিক্রমাসিংহে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তবে তার বিরোধীর সংখ্যাও কম নয়। জেভিপি তামিল ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স তার নিযুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, নিয়োগ অসাংবিধানিক।

৭৩ বছর বয়স্ক রনিল বিক্রমাসিংহেকে দেখা হয় রাজাপাকসে পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক রাজনীতিবিদ হিসেবে। বিরোধী দল বা জনগণের মধ্য থেকে এখনো তেমন একটা সমর্থন আদায় করতে পারেননি তিনি। শ্রীলংকার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা বীরাসুমানা বীরাসিংহে প্রসঙ্গে বলেছেন, তিনি যদি ২২৫ সদস্যবিশিষ্ট পার্লামেন্টে নিজের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে আমরা তাকে সুযোগ দেব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন