ইউক্রেন সংকটের কারণে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে বিভিন্ন পণ্যের দাম। বিশ্বজুড়েই ক্রমবর্ধমান রয়েছে মূল্যস্ফীতির পারদ। এ অবস্থায় গত মাসে ইন্দোনেশিয়ার বৈদেশিক বাণিজ্য রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। ফলে সম্পদসমৃদ্ধ দেশটি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বাণিজ্য উদ্বৃত্ত পেয়েছে। খবর রয়টার্স।
সম্প্রতি দেশটির পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, মার্চে ২ হাজার ৬৫০ কোটি ডলারের পণ্য ও পরিষেবা রফতানি করেছে ইন্দোনেশিয়া। রফতানির এ পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। যেখানে রয়টার্সের জরিপে অর্থনীতিবিদরা ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাণিজ্য বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। এ সময়ে দেশটির আমদানি ব্যয় ৩০ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ১৯৭ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। আমদানি ব্যয়ের এ পরিমাণ অর্থনীতিবিদরা ১৮ দশমিক ৩০ শতাংশ বাড়ার পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক বেশি।
এ নিয়ে গত মাসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতির বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ৪৫৩ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ বাণিজ্য উদ্বৃত্তের পরিমাণ গত বছরের অক্টোবরের পর বৃহত্তম। জরিপে অর্থনীতিবিদরা ২৮৯ কোটি ডলারের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষ রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, পাম অয়েল, টিন ও নিকেল। কভিডের বিপর্যয় কাটিয়ে চাহিদা পুনরুদ্ধার হওয়ায় গত বছর থেকেই এসব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এর মধ্যে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর বিশ্ববাজারে দাম আরো ত্বরান্বিত হয়েছে।
ডিবিএস ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ রাধিকা রাও বলেন, পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়টি ইন্দোনেশিয়ার রফতানি বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দেশটির বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ও একটি শক্তিশালী অবস্থান আঞ্চলিক মুদ্রার তুলনায় দেশটির মুদ্রা রুপিয়াকে তুলনামূলক স্থিতিশীল রেখেছে।
জাকার্তার ব্যাংক ডানামনের অর্থনীতিবিদ উইসনু ওয়ারদানা চলতি হিসাবের পূর্বাভাস সংশোধন করেছেন। তিনি বাণিজ্য উদ্বৃত্তের কারণে ২০২২ সালে চলতি হিসাবের ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়েছেন। এর আগে এ হার ১ দশমিক ৯ শতাংশের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন তিনি। এটি ইন্দোনেশিয়ার আর্থিক বাজারে মার্কিন মুদ্রানীতি কঠোর করার প্রভাব কমাতে সহায়তা করবে বলেও জানান তিনি।
সবচেয়ে নাটকীয় বৃদ্ধির মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার জ্বালানি রফতানি ছিল। দেশটির পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রধান মার্গো ইউওনো বলেন, মার্চে ৩৯০ কোটি ডলার মূল্যের কয়লা রফতানি করেছে দেশটি। রফতানির এ পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫০ শতাংশ বেশি। পরিমাণের হিসাবে জ্বালানি পণ্যটির চালান প্রায় ২২ শতাংশ বেড়ে ৩ কোটি ৫৩ লাখ টনে পৌঁছেছে। এ চালানের বেশির ভাগই চীন, ভারত ও ফিলিপাইনে গেছে। যদিও নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও জার্মানির মতো ইউরোপীয় দেশগুলোতেও ইন্দোনেশিয়ার কয়লা রফতানি বেড়েছে।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার বিস্তৃত খাতজুড়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর মধ্যে আগামী আগস্ট থেকে দেশটি থেকে কয়লা আমদানিও বন্ধ হতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি বাড়াচ্ছে ২৭ দেশের ব্লকটি।
গত মাসে নিকেল রফতানিও ৬০০ শতাংশ বেড়ে ৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। পরিমাণের হিসাবে ধাতুটির রফতানি ৮৮২ শতাংশ বেড়ে ৬৬ হাজার ৯০০ টনে পৌঁছার কথা জানিয়েছে। তবে দাম বাড়া সত্ত্বেও এ সময়ে দেশটির পাম অয়েল রফতানি কমে গেছে। মার্চে ভোজ্যতেলটির রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ২৪০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। পরিমাণের হিসাবে এ কমার হার ৩১ শতাংশ।
দেশটির পরিসংখ্যান ব্যুরো পাম অয়েলের রফতানি কমার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। তবে ইন্দোনেশিয়া কর্তৃপক্ষ অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য জানুয়ারির শেষ থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভোজ্যতেলের রফতানি সীমাবদ্ধ করে।
পণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে দেশটির আমদানিতেও উল্লম্ফন হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া গম ও সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, গত মাসে মাংস, ফল ও ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের আমদানি ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
