সদ্যসমাপ্ত নিলামবর্ষে ১ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকার চা বিক্রি

সুজিত সাহা , চট্টগ্রাম ব্যুরো

২০২১-২২ নিলামবর্ষে (মার্চ-এপ্রিল) দেশে প্রায় হাজার ৭৫৫ কোটি টাকার চা বিক্রি হয়েছে। দেশের ১৬৭টি চা বাগান বিভিন্ন জেলার ক্ষুদ্রায়তন চা চাষ ক্ষেত্র থেকে এসব চা বিক্রি হয়েছে। এসব চা বিক্রি হয়েছে চট্টগ্রাম শ্রীমঙ্গল নিলাম কেন্দ্রের ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে।

দেশে ২০২১ সালে কোটি ৬০ লাখ কেজিরও বেশি চা উৎপাদন হয়। তবে নিলামবর্ষের হিসাবে এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম শ্রীমঙ্গল নিলামে সর্বমোট বিক্রি হয়েছে কোটি ১৭ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩১ কেজি। কেজিপ্রতি ১৯১ টাকার হিসাবে দুই নিলামে হাজার ৭৫৪ কোটি ৩১ লাখ ৩৮ হাজার ৬৫১ টাকার। কভিড-পরবর্তী সময়ে দেশে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়ায় নিলামে চায়ের বাজারমূল্য বেড়েছে।

দেশের বেশ কয়েকটি ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্যে দেখা গিয়েছে, চট্টগ্রাম নিলামে কোটি ৯৩ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩১ কেজি চা বিক্রি হয়েছে হাজার ৭০৮ কোটি ৭১ লাখ ৩৮ হাজার ৬৫১ টাকায়। চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক নিলামে কেজিপ্রতি চায়ের গড় দাম পড়েছে ১৯১ টাকা ২৮ পয়সা। অন্যদিকে শ্রীমঙ্গলের নিলামে ২৪ লাখ কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি চা বিক্রি হয়েছে গড়ে ১৯০ টাকা দরে। তুলনামূলকভাবে কেজিপ্রতি দাম কম হওয়ায় বছর চা বিক্রিতে আয় কিছুটা কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

চা খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিলাম কেন্দ্রের মাধ্যমে দেশের প্রায় সিংহভাগ চা বিক্রি হয় নিবন্ধিত ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে। নিলামের প্রতিযোগিতার কারণেই চা বিক্রিতে ন্যায্য দাম সরকারের শুল্ককর আদায়ে স্বচ্ছতা আসে। ২০১৯ সালে দেশে চা বিপণনের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের পাশাপাশি শ্রীমঙ্গলেও চায়ের আন্তর্জাতিক নিলাম কেন্দ্র চালু করা হয়। এতে চায়ের নিলামের পরিমাণ ভাগ হয়ে গেলেও এখনো চা বিপণনের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম নিলামই প্রধান। তবে অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে শ্রীমঙ্গল নিলামেও চায়ের বিক্রি বাড়ছে। দুটি নিলাম কেন্দ্রের কারণে আগামীতে নিলামে চায়ের সরবরাহ আরো বাড়বে। পাশাপাশি চায়ের গুণগত মান বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।

চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক নিলাম আয়োজনকারী টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টিটিএবি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রামের নিলামে বাগান ক্ষুদ্রায়তন চা ক্ষেত্র থেকে বিক্রি হয়েছে সর্বমোট কোটি ৯০ লাখ ১৩ হাজার ৫৩৪ কেজি চা। এছাড়া অর্থডক্স চা বিক্রি হয়েছে ২৬ হাজার ৩১৯ কেজি, গ্রিন টি ১২ হাজার ৮২৩, পুরনো সিজনের চা লাখ ৮৩ হাজার ৯৪, নতুন সিজনের চা হাজার ৮৬১, ব্ল্যাক টি লাখ ১৮ হাজার ১৩০ কেজি।

দেশের বৃহত্তর নিলামে সবচেয়ে বেশি দামে চা বিক্রিতে শীর্ষে ছিল ব্র্যাকের চা বাগান খৈয়াছড়া ডালু। বাগানটি সর্বোচ্চ ২৬৮ দশমিক ৬৭ টাকা কেজি দরে লাখ ৩৭ হাজার ৪৪০ কেজি চা নিলামে বিক্রি করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল মধুুপুর চা বাগান, তৃতীয় ক্লিভডন, চতুর্থ দারাগাঁও, পঞ্চম আমরাইল, ষষ্ঠ কর্ণফুলী, সপ্তম ফতুল্লা, অষ্টম রুথনা, নবম বালিসেরা দশম গাজীপুর চা বাগান।

টি প্ল্যান্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টিপিটিএবি) সভাপতি মেজবাহুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, দেশে ধারাবাহিকভাবে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি নিলাম কেন্দ্রে চায়ের বিক্রিও বাড়ছে। দেশে দুটি চা নিলাম কেন্দ্র হওয়ায় তুলনামূলকভাবে চায়ের বিক্রিও বাড়ছে। নিলামে চা বিক্রির পর সরকারি ভ্যাট, কমিশনসহ কয়েক ধাপের হাতবদল মোড়কজাতের পর বিপণন হিসাব করলে চায়ের বাজারমূল্য কয়েক গুণ বেড়ে যায়। হিসাবে চা খাতের বাজারমূল্য ক্রমেই বাড়ছে।

চা বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২১ সালে দেশে সর্বমোট চা উৎপাদন হয়েছিল কোটি ৬৫ লাখ কেজি। এর আগে ২০২০ সালে উৎপাদন হয়েছিল কোটি ৬৪ লাখ ২০১৯ সালে উৎপাদন হয়েছিল কোটি ৬০ লাখ কেজি। চলতি মৌসুমে দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে কোটি ৭০ লাখ কেজি। হিসাবে চলতি মৌসুমে চায়ের উৎপাদন নিলামে চায়ের সরবরাহ আরো বাড়বে বলে মনে করছেন চা-সংশ্লিষ্টরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন