শহরকেন্দ্রিক উন্নয়নযজ্ঞের প্রবণতা থামাতে হবে

নজরুল ইসলাম শিক্ষাবিদ, নগর গবেষক, প্রাবন্ধিক ভূগোলবিদ। শহরকেন্দ্রিক নানা গবেষণার জন্য তিনি সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। আন্তর্জাতিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যাংককে এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে চার বছর নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা বিষয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ২০০৭-১১ সময়ে দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যানের। এর আগে (১৯৯৯-২০০২) ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি তার সঙ্গে বণিক বার্তার কথা হয়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা 

৫০ বছরে পা রাখল সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ। এর জন্ম বিকাশের গল্পটা জানতে চাই...

১৯৭২ সাল। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে একদিকে যেমন আনন্দের জোয়ার, অন্যদিকে ধ্বংস আর মৃত্যুর খবর ভেসে আসছে। শরণার্থীরা ফেরত আসছে। গ্রাম থেকে অসহায় আর স্বজনহারা মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। জনসংখ্যায় স্ফীত হচ্ছে ঢাকাসহ অন্যান্য বড় শহর। নতুন স্বপ্ন, নতুন ভাবনা নিয়ে জেগে উঠেছে মানুষ। কেউ জীবিকার অন্বেষণে, কেউবা উন্নত জীবনের জন্য। পরিস্থিতি সযত্নে পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কেমন করে সদ্য স্বাধীন দেশটির গন্তব্য নির্মাণ করা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগও দেশের গন্তব্য বিনির্মাণের অংশ। তরুণ শিক্ষক, যারা স্বাধীনতা অর্জনে ভূমিকা রেখেছিলেন, দেশ বিনির্মাণেও তারাই অগ্রণী ভাবনা শুরু করেন। কীভাবে উন্নত নগর নগরায়ণ প্রক্রিয়া স্বাধীন দেশের সমৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে চিন্তা থেকে শুরু হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল বিভাগে গবেষণার এক নতুন অধ্যায়।

ঢাকা একটি স্বাধীন দেশের রাজধানীর মর্যাদা লাভ করেছে। তখন দেশের মাত্র আট ভাগ লোক নগরে বাস করে। বাংলাদেশ পরিচিত একটি গ্রামীণ দেশ হিসেবে। ১৯৫০ ১৯৬০-এর দশকে ঢাকাসহ কয়েকটি বড় শহরের মহাপরিকল্পনা তৈরি, ১৯৫০-এর দশক থেকে ঢাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল বিভাগে নগরায়ণ চর্চা শুরু এবং ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে নগর অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে নগর বিষয়ে পঠন-পাঠন গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়। রকম প্রেক্ষাপটে ১৯৭২ সালে আমি নগর গবেষণার ক্ষেত্রে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করি। এটা উপলব্ধি করি যে নগর বিশ্লেষণ একটি বহুশাস্ত্রীয় বিষয়। নগর বিষয়ে জানার ক্ষেত্রে গভীরতা লাভ করতে একটি বহুশাস্ত্রীয় ফোরামের প্রয়োজন। উপলব্ধি থেকে নগর বিষয়ে গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ভিত্তিক শাস্ত্রীয় কাঠামোর বাইরে একটি বহুশাস্ত্রীয় কেন্দ্র বা ফোরাম তৈরির চিন্তা করি। প্রথমে আরবান স্টাডি গ্রুপ নাম দিয়ে কেন্দ্রের বীজ বপন করা হয়। পরে আরবান স্টাডি গ্রুপ নাম পরিবর্তন করে নগর গবেষণা কেন্দ্র বা সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ নাম দিয়ে শুরু করি সিইউএসের যাত্রা।

শুরুর দিকে আপনাদের কার্যক্রম কেমন ছিল?

প্রথম দিকে কেন্দ্রের কার্যক্রম ছিল অনেকটা অনানুষ্ঠানিক। কেন্দ্রের কার্যক্রমের অন্যতম বিষয় ছিল আলোচনা চক্র ছোট ছোট গবেষণা। ওই সময়ে বাংলাদেশে নগর বিষয়ে গবেষণার পরিপূর্ণ কোনো আবহ তৈরি হয়নি। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর নগরায়ণ প্রক্রিয়া দ্রুত থেকে দ্রুততর হতে থাকে। ঢাকা দেশের রাজধানী হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে যেমন, তেমনি গবেষকদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

মোটাদাগে বলতে গেলে সিইউএসের প্রথম দিকের কার্যক্রম ছিল নিয়মিত আড্ডা, আলোচনা, সাপ্তাহিক সেমিনার এসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সেমিনার করা ওই সময়ে সিইউএসের একটি প্রধান কার্যক্রম ছিল। সিইউএসের নিজস্ব সদস্যরা ছাড়াও বাইরে থেকে এসে বেশ কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তি সেমিনার দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন . এফ আর খান, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, প্রফেসর নাজমুল করিম, প্রফেসর সরদার ফজলুল করিম, . সুলতানা সারওয়াত, রিচার্ড এল মরিল (বিশিষ্ট নগরবিদ), . দেবনাথ মুখার্জি স্থপতি তানভীর নাওয়াজ।

নিবন্ধন কখন করেছিলেন?

সিইউএসের যাবতীয় কর্মকাণ্ড স্বচ্ছ, সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট, ১৮৬০-এর আওতায় প্রাতিষ্ঠানিক নিবন্ধন করে নেয়। নিবন্ধিত হওয়ায় সিইউএস একটি ফরমাল প্রতিষ্ঠানের কৃতিত্ব লাভ করতে পেরেছে। সিইউএস প্রতি বছর সরকারের নিয়ম অনুসারে প্রাতিষ্ঠানিক আয়কর ভ্যাট দেয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সিইউএসের উল্লেখযোগ্য কাজ কী ছিল?

বড় কিছু গবেষণা ছাড়াও ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৫টি ছোট গবেষণা-সমীক্ষা পরিচালনা করেছে সিইউএস। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সমীক্ষাগুলো হচ্ছে ঢাকার ফুটওভার ব্রিজ, গ্রাম-শহর অভিগমন, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পাবলিক টয়লেট ব্যবহার, নগর পরিবেশ, নগর ভূমি ব্যবস্থাপনা, ভূমি ব্যবহার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজগুলোর মানচিত্রায়ণ এবং ছোট শহর রিমোট পরিকল্পনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-উত্তরকালে নগর গবেষণায় সিইউএস নেতৃত্ব দিয়েছে বিষয়ে সন্দেহ নেই। উল্লিখিত গবেষণাগুলোয় যেসব সমস্যা বিশেষ দিক উন্মোচিত হয়েছে, তার বাইরেও সিইউএস নগরবিষয়ক একটি তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলেছে। যেকোনো গবেষক, সাংবাদিক বা সাধারণ মানুষ, যাদের নগর বিষয়ে তথ্যের প্রয়োজন, তাদের সিইউএসের দ্বারস্থ হতে দেখা যায়। সিইউএস তথ্য দিয়ে, সহায়তা দিয়ে তাদের চাহিদা পূরণ করতে সচেষ্ট থাকে। সহায়তা প্রদান সিইউএসের সাংবিধানিক দায়িত্ব প্রতিজ্ঞা।

৫০ বছর আগের এবং এখনকার নগরায়ণের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি?

১৯৭২ সালে নগরায়ণ খুব সীমিত মাত্রায় ছিল। তখন মাত্র শতাংশ শহরবাসী। ৯০ শতাংশ গ্রামীণ জনগোষ্ঠী। এখন প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করে, বাকি জনগোষ্ঠী গ্রামীণ। গ্রামের চেহারাও বদলে গেছে। শহুরে-গ্রামীণ মিশে গেছে। অনেক শহুরে বিষয়-আশয় গ্রামে ঢুকে গেছে। উপজেলা পর্যায়ে মাল্টি ন্যাশনাল ব্র্যান্ড চলে গেছে। ফ্রিজ, টেলিভিশন সবই চলে গেছে। এমনকি কোনো কোনো জায়গায় ইউনিয়ন পর্যায়েও এসব গেছে। এটিই হবে ভবিষ্যতের নগরায়ণ।

আমাদের সময়ে নগরায়ণ ছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী খুলনায়। সেটিও নিম্নমাত্রার। তখন সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ করবে, এটি কারো মাথায় আসার কথা নয়। অথচ আমরা তাতে গুরুত্ব দিলাম। নগরবিষয়ক একাডেমিক গবেষণায় গুরুত্ব দিলাম। আমি অবশ্য এর আগেও বিষয়ে গবেষণা করেছি। ১৯৬১-৬২ সালে। কিন্তু ১৯৭২ সালে হইচই লেগে গেল। তখন বেশির ভাগ দরিদ্র মানুষ দ্রুত ঢাকায় আসা শুরু করল। বড় ধরনের অভ্যন্তরীণ অভিগমন হলো।

তখন শিল্পায়নের অবস্থা কেমন ছিল?

শিল্পায়ন নেই বললেই চলে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া বলতে আদমজী, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী, চট্টগ্রাম এটুকুই। পাকিস্তান আমলে পঞ্চাশের দশকে এই ছিল চিত্র।। তার পরে আর বেশি বিস্তৃতি ঘটেনি। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২-৮০ পর্যন্তও হয়নি। তবে আশি থেকে শুরু হলো গার্মেন্ট। প্রথমে কেউ বুঝতে পারেনি এটা কী হবে। বাড়িতে বাড়িতে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি। সবাইকে সরকার অনুমতি দিয়েছে। ২০-২৫ বছরের মধ্যে আমূল বদলে গেল, যা কেউ কল্পনাই করেনি। এখন দেশের সবচেয়ে বড় শিল্প গার্মেন্ট। চার হাজার ফ্যাক্টরি, ৪০ লাখ কর্মিবাহিনী। বিরাট ব্যাপার। আরো মজার বিষয় হলো, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী। এর আগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষরাই আসতেন। যখন গার্মেন্ট হলো তখন নারীরা এলেন। জনমিতিক চরিত্র বদলে গেল। আর শিল্পায়ন হওয়ায় অর্থনীতি বদলে গেল। এটিই হলো আমাদের আসল গ্রোথ পটেনশিয়াল। এরপর ওষুধ, সিরামিক, চামড়া প্রভৃতি শিল্প বিকাশ লাভ করল। শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গে নগরায়ণের চেহারাটাই বদলে গেল।

তখনকার নগর পরিকল্পনা কেমন ছিল?

শহরভিত্তিক পরিকল্পনা পাকিস্তান আমলে শুরু হয়েছিল। ১৯৫৩-৫৭ সালে। ঢাকা মাস্টারপ্ল্যান ১৯৫৯ সালের দিকে করা হয়েছিল। এটি করেছিল ডিআইটি। এটা ছিল মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক। তারপর ধানমন্ডি, গুলশান, উত্তরা শেরেবাংলা নগর ঘিরে কিছু নগর পরিকল্পনা করা হয়। ফলে কিছুটা পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠে এসব এলাকা। তবে নগর পরিকল্পনাবিদদের কেউ বুঝতে পারেননি যে শহর এত সম্প্রসারিত হবে।

অবশ্যই বলতে হবে, ১৯৫৯ সালের মাস্টারপ্লানের মধ্য দিয়ে ঢাকায় আধুনিক নগর পরিকল্পনার সূত্রপাত হয়েছিল। এর আগে ছিল প্যাট্রিক গেডিসের ১৯১৭ প্ল্যান। এটা ছিল একটা খসড়া রিপোর্ট। এটা ছিল শুধু নির্দেশনামূলক। নদী-খাল, পানি, গাছপালা বজায় রাখতে হবে। ব্যস, রকমই।

এত পরিকল্পনা সত্ত্বেও শিল্পায়ন নগরায়ণটা গোছালো হলো না কেন?

এটা আমাদের একটা বড় সংকট। পরিকল্পিত শিল্পায়ন বা নগরায়ণ হতে পারছে না। কিছু পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। পরে সব ভেস্তে গেল। এর পেছনে একটা পটভূমি আছে। শুরুর দিকে যে কেউ নিজের বাড়িতে গার্মেন্টের অনুমোদন পেয়ে যেত। একটা পর্যায়ে সরকার বলল, বিভিন্ন কমপ্লায়েন্স শর্ত পূরণ করতে হবে। এগুলো পালন করতে গিয়ে চলে গেল আশুলিয়ায়। এখন সেখানে হাজার হাজার কারখানা। তবে পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চল হলো ইপিজেড। ইপিজেডের বাইরে হলো সব। এমনকি গাড়ি ঢোকার জায়গা নেই। সরকার করে দেয়নি। যেখান থেকে দেশের সবচেয়ে বেশি পয়সা আসে, তাদেরই কোনো সার্ভিস দেয় না। কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব জায়গায়, ভবনে গেছে। কিন্তু রাস্তা নেই। এতদিন পর্যন্ত প্ল্যানিংয়ে গুরুত্ব দেয়নি। এখন এতে গুরুত্ব দিতে হবে। নইলে অগোছালো উন্নয়ন বা নগরায়ণ হবে।

নগরের সংকটগুলো (পানির সংকট, যানজট) কি নিরসন করা সম্ভব?

সম্ভব আবার সম্ভবও নয়। সম্ভব যদি গণবান্ধব সরকার, শাসন ব্যবস্থা পাই।  যদি চিন্তাটা হয় সবার জন্য, মুষ্টিমেয়র জন্য নয়, তাহলে হবে। ২০-৩০ বছরের মধ্যে পুরো দেশটাই শহুরে হয়ে যাবে। ৫০ শতাংশ লোক শহরাঞ্চলে থাকবে। ৭০ বছরের মধ্যে ৮০-৯০ শতাংশ আরবান হয়ে যাবে। সামনে আমাদের জনসংখ্যা ১৮ কোটি, ২০ কোটি এমনকি ২৫ কোটি হয়ে যাবে। তাদের তো জায়গা দিতে হবে। সেক্ষেত্রে বড় প্রয়োজন যথাযথ সরকার এবং সুশিক্ষিত, দক্ষ পরিকল্পনাবিদ। একই সঙ্গে পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন। বাস্তবায়ন করে চলে গেলে হবে না, অব্যাহতভাবে তদারক করতে হবে।

আমরা দেখছি এখন এক শহরকেন্দ্রিক উন্নয়নযজ্ঞের প্রবণতা চলছে। এখন এখানে দুই কোটি লোক। তিন কোটি হয়ে যাবে। এর বহুমুখী প্রভাব আছে। একে তো ম্যালডিস্ট্রিবিউশন। চট্টগ্রাম যতটা গ্রোথ হওয়ার কথা ততটা হয়নি। রাজশাহী বা খুলনায় লোক যায় না। কেননা সেখানে শিল্পায়ন নেই। কাজেই শিল্পায়নের বিকেন্দ্রীকরণ ঘটাতে হবে। ঢাকায় জনসংখ্যা আর বাড়তে দেয়া যাবে না। হয় কনস্ট্যান্ট (দুই কোটি বা দেড় কোটি) রাখতে হবে নতুবা কমাতে হবে। কমাবে কীভাবে? ডিসেন্ট্রালাইজ শুধু নয়, ডিকনসেনট্রেট করতে হবে। বিচ্ছুরণ করতে হবে। ঢাকার চারদিকে অনেক গ্রোথ সেন্টার করতে হবে। মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ এখানে গ্রোথ ইনসেনটিভ বাড়াতে হবে। ঢাকার পাশে মানিকগঞ্জ হলো লোয়েস্ট আরবান জেলা। কারণ সেখানে শিল্প নেই। এগুলোয় নজর দিতে হবে।

অর্থনৈতিক বা প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের কতটা প্রয়োজন?

সবাই বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলছে। এর মানে ডিভিশনাল সিটিগুলোকে সুযোগ দিতে হবে। এর মধ্যে কোনো কোনোটি বাড়ছে। কোনো কোনোটি বাড়েনি। যেগুলো বাড়েনি সেগুলোয় দৃষ্টি দিতে হবে। ৬৪টি জেলা শহর ভালো ফাউন্ডেশন হতে পারে, ম্যানেজেবল হতে পারে। তবে সবগুলোয় ইন্ডাস্ট্রি যাবে না। সেখানে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ। এতেও অনেক লোকের  কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। মোদ্দাকথা, মেট্রোপলিটন সিটি, বাকি ৫৫ জেলা শহরের গুরুত্ব বাড়াতে হবে উপজেলা লেভেলে। সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর মান বাড়াতে হবে। রোগীদের যেন দৌড়ে ঢাকায় আসতে না হয়।

সবচেয়ে বড় কথা, শহরমুখী জনচাপ কমাতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিসেন্ট্রালাইজেশন করতে হবে। এতদিনে বিকেন্দ্রায়িত ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছে সরকার। এগুলো ঠিকমতো করা গেলে, ইকোনমিক করিডরের মতো করতে পারলে সফল হবে। নইলে ব্যর্থ হবে। পাকিস্তান আমলে স্মল ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ব্যর্থ হয়েছে, রেসিডেন্সিয়াল এস্টেট ব্যর্থ হয়েছে। জায়গামতো হয়নি। সুতরাং অর্থনৈতিক অঞ্চলও জায়গামতো করতে হবে। ১০০টির মধ্যে ৫০টিও যদি টিকে যায় তাহলে বিকেন্দ্রীকরণ হবে। কিন্তু তার জন্য সার্বিকভাবে সুশাসন থাকতেই হবে। এর বিকল্প নেই।

 

শ্রুতলিখন: হুমায়ুন কবির

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন