এলএনজির চাহিদা পূরণে ইউরোপের যুক্তরাষ্ট্রনির্ভরতা বাড়ছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) চাহিদা পূরণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইউরোপের দেশগুলোর নির্ভরতা বাড়ছে। রাশিয়ার বিকল্প উৎস হিসেবে দেশটি থেকে প্রতি মাসেই বিপুল পরিমাণ এলএনজি কিনছে ইউরোপ। গত মাসে দেশটি থেকে সর্বাধিক এলএনজি কিনে শীর্ষ আমদানিকারকের তকমা ধরে রেখেছে অঞ্চলটি। পণ্যবাহী কার্গোর তথ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রেফিনিটিভ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে তথ্য জানিয়েছে।

বিশ্লেষকরা জানান, ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাস চাহিদার ৪০ শতাংশই পূরণ হয় রাশিয়া থেকে আমদানীকৃত গ্যাসের মাধ্যমে। কিন্তু ইউক্রেনে হামলার প্রতিক্রিয়ায় দেশটি থেকে গ্যাস আমদানি কমিয়ে আনছে ইউরোপ। বিকল্প উৎস হিসেবে অঞ্চলটি যুক্তরাষ্ট্রকে সবচেয়ে বেশি প্রাধ্যান্য দিচ্ছে। অন্যদিকে যেসব দেশ বন্ধুভাবাপন্ন নয়, সেসব দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ অথবা কমিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে মস্কো। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে বুলগেরিয়া পোল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় রাশিয়া।

টানা পাঁচ মাস ধরে মার্কিন এলএনজির শীর্ষ আমদানিকারক ইউরোপ। যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ এলএনজি রফতানি করে তার ৬৪ শতাংশই অঞ্চলটিতে সরবরাহ করা হচ্ছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান কেপলারের ঊর্ধ্বতন পণ্যবাজার বিশ্লেষক রেইড আয়েনসন বলেন, মার্কিন এলএনজি ক্রয়ের ক্ষেত্রে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে ইউরোপ। আগামী মাসগুলোতেও এটি অব্যাহত থাকবে।

রেফিনিটিভের দেয়া তথ্য বলছে, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি রফতানি প্রায় শতাংশ কমেছে। সময় দেশটি সব মিলিয়ে প্রায় ৭১ লাখ টন এলএনজি রফতানি করেছে। অথচ মার্চে দেশটি রেকর্ড এলএনজি রফতানি করেছিল। রফতানির পরিমাণ ছিল ৭৬ লাখ ৭০ হাজার টন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি প্লান্টগুলোয় পরিকল্পিত রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমের কারণেই মূলত জ্বালানি পণ্যটির রফতানি কমেছে। রক্ষণাবেক্ষণের কারণে তরলীকরণ সক্ষমতা ছিল কম। তবে রফতানি কমলেও তা প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে।

শীতকালীন চাহিদা যখন তুঙ্গে থাকবে, তখন দেশটির অপারেটরদের হয়তো রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চালিয়ে যেতে হবে, নয়তো ঝুঁকি নিয়েই উৎপাদনকাজ চালিয়ে যেতে হবে।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটের আমেরিকাস এলএনজি অ্যানালিটিকসের প্রধান বিশ্লেষক রস ওয়েনো বলেন, গত বছর থেকেই জোরালোভাবে যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি প্লান্টগুলো উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। লম্বা সময় ধরে উৎপাদন চলতে থাকায় নিত্যনতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র গত মাসে যে পরিমাণ এলএনজি রফতানি করেছে, তার ১৩ শতাংশ এশিয়ায় শতাংশ লাতিন আমেরিকায় সরবরাহ করা হয়। ২১টি ভেসেল নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারেনি।

রেফিনিটিভ জানায়, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় এলএনজির বৈশ্বিক দাম কমেছে। চলতি সপ্তাহে ইউরোপিয়ান বাজার আদর্শ এলএনজির দাম প্রতি এমএমবিটিইউ ৩০ ডলারে নেমেছে। মার্চের একই সপ্তাহে দাম ছিল ৩৯ ডলার ২২ সেন্ট। অন্যদিকে চলতি সপ্তাহে এশিয়া স্পট গ্যাসের দাম প্রতি এমএমবিটিইউ ২৩ ডলার ৫০ সেন্টে নেমেছে। মার্চের একই সপ্তাহে দাম ছিল ৩৫ ডলার।

প্রসঙ্গত, গত বছর থেকেই বিশ্ববাজারে এলএনজির আমদানি চাহিদা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এর প্রধান কারণ ওই সময় করোনার প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতিগুলো গতিশীল হতে শুরু করে। ফলে শিল্প খাতে জ্বালানিটির ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়। বিশেষ করে চীনে এলএনজির চাহিদা ছিল সর্বাধিক।

সম্প্রতি প্যারিসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ অব এলএনজি ইম্পোর্টার্স জানায়, গত বছর এলএনজির বৈশ্বিক আমদানি দশমিক শতাংশ বেড়েছে। আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭ কোটি ২৩ লাখ টনে, যা ২০২০ সালের তুলনায় কোটি ৬২ লাখ টন বেশি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন