ভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলার চেষ্টা করেছি

বাংলাদেশের শীর্ষ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে জনপ্রিয় নাম ফাখরুল আরেফীন খান লালন শাহকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করে নজরে এসেছিলেন নির্মাতা। অসাধারণ সব কাজের জন্য দুবার জিতে নিয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। স্বাধীনতা সংগ্রামের রোমাঞ্চকর কাহিনী নিয়ে ফাখরুল আরেফীন খান নির্মাণ করেছেন জেকে ১৯৭১ সিনেমা। আসন্ন সিনেমাটি আর কর্মজীবন নিয়ে গুণী নির্মাতা কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাত্কারে সাবিহা জামান শশী

গণ্ডি সিনেমার জন্য দ্বিতীয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন, এতে আপনার অনুভূতি?

যেকোনো জাতীয় পুরস্কার মানুষকে সম্মান এনে দেয়। সম্মানের পেছনে  আমার অনুভূতি নিজেকে আরো বড় প্রেক্ষাপটে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা। আমি প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলাম প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের জন্য। এবারে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমায় সংলাপের জন্য। দ্বিতীয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার পর মনে হচ্ছিল দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল।

যুদ্ধ নিয়ে অনেক সিনেমা হয়েছে। আপনার আসন্ন জেকে ১৯৭১ সিনেমাটির বৈশিষ্ট্য কী?

প্রথমত, এটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে করা। আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোনো সিনেমা নেই। আমরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, এছাড়া অনেক যুদ্ধের সিনেমা দেখতে পারি, যেগুলো বিশ্বব্যাপী মানুষ দেখতে পায়। সে হিসেবে জেকে ১৯৭১ সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী মানুষ দেখার সুযোগ পাবে। চারটি ভাষায় সিনেমাটির শুটিং করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের যুদ্ধ আন্তর্জাতিক যুদ্ধে পরিণত হয়েছিল মানবিকতার জায়গা থেকে। আমাদের দেশের সঙ্গে যার কোনো সম্পর্ক নেই, এমন একটি তরুণের যুদ্ধের গল্প এটা। আমাদের দেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করে তাকে  জেলের ভেতরে থাকতে হয়। তার আত্মত্যাগ নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা নির্মাণ করা হলো। একটি অনন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি, বাকিটা দর্শক বলবেন।

যুবক জঁ ক্যা চরিত্রে শুভ্র সৌরভ দাশকে নেয়ার কারণ...

প্রথম কারণ বাঙালি। আমি বাংলায় ডিরেকশন দিলেও সেটা তার জন্য বোঝা সহজ। সৌরভের ভেততে ফ্রেঞ্চ হয়ে ওঠার একটা প্রবণতা ছিল। সে ফ্রেঞ্চ ভাষা শিখেছে। আমরা সৌরভকে এক বছর সময় দিয়েছি চরিত্রটি নিজের ভেতরে ধারণ করার জন্য। সৌরভ সেটা পেরেছে। ওর আগ্রহ, চেষ্টা, অভিনয় করার দক্ষতা সব মিলিয়েই আমরা ওকে নির্বাচন করেছিলাম।

জেকে ১৯৭১ সিনেমাটি এখন কী পর্যায়ে?

সিনেমাটা বানানো শেষ। শিগগিরই আমরা সেন্সর বোর্ডে জমা দেব। আশা করছি বছরেই সিনেমাটি মুক্তি দেয়া হবে, যদি পরিস্থিতি অনুকূল থাকে। ইনশাল্লাহ।

সিনেমাটির শুটিং কোন দেশে হয়েছে?

সিনেমাটির বেশির ভাগ শুটিং হয়েছে ভারতে। ফ্রান্সে গিয়ে শুটিংয়ের কথা থাকলেও কভিড-১৯ পরিস্থিতির জন্য আমরা সেটা পারিনি। ভিএফএক্সের মাধ্যমে ফ্রান্সের দৃশ্যগুলো নিয়েছি।

সিনেমাটি কোন দেশগুলোয় মুক্তি পাবে?

বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও সিনেমাটি বাংলাদেশ ভারতে মুক্তি পাবে। অন্য দেশগুলোয় জেকে ১৯৭১ মুক্তির কথা চলছে।

ফ্রান্সে গিয়ে থিয়েটার আর্টিস্টদের অডিশন নেয়ার কথা ছিল। এটা কেমন হয়েছিল?

করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। পরে আমরা মুম্বাই থেকে আর্টিস্টদের অডিশন নিয়েছি।

জেকে ১৯৭১-এর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেতা ফ্রান্সিসকো রেমন্ড রাশিয়ান অভিনেত্রী ডেরিয়া গভ্রুসেনকোর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

দুজনেই অনেক ভালো কাজ করেন। সিনেমাটির জন্য অনেক দিন কাজ করেছি। সব মিলিয়ে ভালো লেগেছে।

সিনেমাটি কাজ করতে কতদিন সময় লেগেছিল?

আমরা ১৮ দিনে শুটিং শেষ করেছি। তবে ২০১৫ সাল থেকেই জেকে ১৯৭১ নিয়ে আমি কাজ করেছি। মূল কাজটা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে।

বেশির ভাগ সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে কাজ করছেন এবং সাফল্য পাচ্ছেন। এর পেছনে দেশের প্রতি ভালোবাসা ছাড়া আর কোনো কারণ রয়েছে কি?

স্বাধীনতা যুদ্ধ আমরা ভিন্নভাবে সিনেমায় দেখাতে পারতাম। গত ৫০ বছরে আমরা একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলার চেষ্টা করেছি। যে কারণে আমরা চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে পারিনি। তাই আমরা চেষ্টা করেছি ভিন্নভাবে ভালো গল্প বলার। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ গর্ব করার মতো বিষয়, যার গল্প আমরা ভিন্নভাবে বিশ্বকে বলতে পারি।

সিনেমাটি নির্মাণের সময় কি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পেয়েছিলেন?

আমাদের সরকার বিষয়ে বেশ সহায়ক। এর আগে আমার ভুবন মাঝি সিনেমায় সরকার থেকে অনুদান পেয়েছি। এবারও জেকে ১৯৭১ নির্মাণের জন্য আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে সহায়তা চেয়েছিলাম। তবে এবার সেটা না পেলেও আমাকে বিশেষভাবে সহায়তা করেছেন সামিট গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. ফরিদ খান নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মিশুক।

ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?

বর্তমান অবস্থাটা একটু নাজুক। তবে বিশ্বাস আমরা পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারব। এখন অনেক তরুণ নির্মাতা এসেছেন, যারা ভিন্নভাবে, ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে সিনেমা করছেন। এছাড়া সরকারের একটি প্রজেক্ট রয়েছে সিনেমা হল নির্মাণের। আমার বিশ্বাস দ্রুত এর পরিবর্তন হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন