ভারতে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্ট

বণিক বার্তা ডেস্ক

ব্রিটিশ আমলে প্রণীত রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে দায়ের হওয়া সব মামলা স্থগিত করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালত কেন্দ্রীয় রাজ্য সরকারকে আইনে মামলা গ্রহণ, তদন্ত অব্যাহত রাখা এবং বিষয়ে জোরপূর্বক কোনো ব্যবস্থা নেয়া থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। দণ্ডবিধির ১২৪/ (রাষ্ট্রদ্রোহ) ধারা পুনর্বিবেচনার আগ পর্যন্ত নির্দেশনা বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। গতকাল ভারতের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানার নেতৃত্বে বিচারপতি হিমা কোহলি বিচারপতি সূর্যকান্তের বেঞ্চ এসব নির্দেশ দেন। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

আদালত আরো জানিয়েছেন, তারা আইনটি খতিয়ে দেখবেন। যতদিন তারা আইনের পর্যালোচনা করবেন ততদিন নতুন করে কাউকে আইনে গ্রেফতার করা যাবে না। এছাড়া যারা এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন তারা আদালতে জামিন চাইতে পারবেন। নতুন কাউকে গ্রেফতার করলে তিনি সুপ্রিম কোর্টে আসতে পারবেন।

সুপ্রিম কোর্ট তার আদেশে উল্লেখ করেন, এটা স্পষ্ট কেন্দ্রীয় সরকার এতে সম্মত যে ১২৪/  ধারাটি বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আইনটি যখন প্রণীত হয় তখন দেশটি ছিল ঔপনিবেশিক আইনের অধীনে। আইনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বর্তমানে ব্যবহার উপযুক্ত হবে না, এটিই স্বাভাবিক। তাই পরবর্তী পুনঃপরীক্ষা শেষ এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশটি বহাল থাকবে। নির্দেশে উল্লেখ করা হয়েছে, বিনোদ দুয়া বনাম ভারত ইউনিয়নের রায়ে সুপ্রিম কোর্টের ব্যাখ্যা যথাযথভাবে অনুসরণ করা এবং মেনে চলা উচিত।

সুপ্রিম কোর্টে আবেদনকারীদের পক্ষে দাঁড়ান আইনজীবী কপিল সিবাল। তিনি শুনানির সময় বলেন, ভারতজুড়ে ৮০০টি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়েছে। এর জেরে ১৩ হাজার মানুষ জেলে আছে।

দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিহারে সর্বোচ্চ ১৬৮টি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে। এরপর তামিলনাড়ুতে ১৩৯টি, উত্তর প্রদেশে ১১৫টি এবং ঝাড়খণ্ডে ৬২টি মামলা হয়েছে।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য উদ্ধৃত করে ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলার সংখ্যা ১৬০ শতাংশ বেড়েছে।

২০২১ সালের জুনে সাংবাদিক বিনোদ দুয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ বাতিল করার সময় কেদারনাথ সিং বনাম বিহার রাজ্যের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, কেবল এমন কার্যকলাপ যা সহিংসতা অবলম্বন করে জনসাধারণের শান্তি বিঘ্নিত করা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার প্রবণতাকে শাস্তি দেয়া হবে। ১৯৬২ সালে কেদারনাথ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট আইনকে সাংবিধানিক ঘোষণা করে জানান, সরকারের সমালোচনা করা হলে তাকে কোনোভাবেই দেশদ্রোহ বলা যাবে না। সুপ্রিম কোর্ট গত বছর প্রশ্ন তোলে, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও কি আইনের প্রয়োজন আছে? তারা জানায়, সরকার পুরনো প্রচুর আইনকে বাতিল করেছে। তাহলে আইনের পর্যালোচনা কেন করা হবে নাব্রিটিশ ভারতে ১৮৬২ সালে দণ্ডবিধি চালু হয়। তখন সেখানে রাষ্ট্রদ্রোহ নিয়ে কোনো সেকশন ছিল না। ১৮৭০ সালে ধারাটি যুক্ত হয়। বালগঙ্গাধর তিলককে প্রথম ধারা অনুসারে গ্রেফতার করা হয়। পরে মহাত্মা গান্ধীকেও ইয়ং ইন্ডিয়া লেখার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আইনে বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেফতার করা যায় এবং তাকে জেলে পাঠানো যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন