চিকিৎসকের পরামর্শ

ঈদের দিনটি অর্ধেক রোজা বলে মনে করতে হবে

বণিক বার্তা অনলাইন

ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে নানা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন দেশের ছোট বড় সব সব বয়সী মানুষ। দীর্ঘ ৩০ দিন রোজা রাখার পর আসে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনটি। এ খুশির দিনটি ম্লান হয়ে যেতে পারে আপনার একটু অসচেতনায়। কারণ একমাস রোজা রাখার পর হঠাৎ নানা ধরনের খাবার গ্রহণ করলে শরীরে অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। তাই খুশির দিনে স্বাস্থ্য সচেতনতায় অল্প পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। 


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদের দিন হঠাৎ গরুর মাংস, খাসির মাংস, সেমাই, রোস্ট, পায়েস, কোমল পানীয় বা বোরহানীর মতো খাবার ও পাণীয় বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। দেখা দিতে পারে অস্বস্তি ভাব, পেট ভার হয়ে থাকা, বমি বমি ভাব, বুক জ্বালা পোড়া, ক্ষুদা মন্দার মতো সমস্যা।


এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোঅ্যান্টারোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. আনওয়ারুল কবীর বণিক বার্তাকে বলেন, এ এক মাসে আমাদের খাবার হজম প্রক্রিয়ার ‍পুরোটাই পরিবর্তন হয়ে যায়। তাই এটি আগের অবস্থানে নিয়ে আসতে গেলে একটু ধীরগতিতে এগোতে হবে। হুট করে বেশি পরিমাণে খাবার গ্রহণ করা যাবে না।


তিনি বলেন, ঈদের দিন সকালে হালকা পরিমাণে খাওয়া উচিত। বরং না খেলে আরো ভালো। দুপুরের দিকে কিছুটা খাওয়া উচিত। সেটাও পেট ভর্তি না করে একটু কম পরিমাণে খাওয়া ভালো। আর বিকেল বা রাতে খেলেও কম করে খেতে হবে।


তবে আমাদের অনেকে ঈদের দিন বিভিন্নজনের বাড়িতে যেতে হয়। স্বজনদের খাবার খাওয়ার অনুরোধ রাখতে গিয়ে পেট ভরে খেতে হয়। এ পরিস্থিতিতে আপনি কী করবেন?


জবাবে অধ্যাপক মো. আনওয়ারুল কবীর বলেন, এভাবে দিন গেলে শরীরের অবস্থা খুব বেশি ভালোভাবে কাটবে না। বিশেষ করে যারা এভাবে অনিয়ন্ত্রিত খাবার খান, তাদের প্রত্যকের ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে দেখা দিতে পারে, পেটে অস্বস্তি, পেট ভার হয়ে থাকা, বমি বমি ভাব, বুক জ্বালা পোড়া করা ও ক্ষুদা মন্দার মতো সমস্যা। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আপনাকে অবশ্যই কম পরিমাণে খেতে হবে। 


এ চিকিৎসক আরো বলেন, পরিপাকপ্রক্রিয়ার বিভিন্ন সমস্যা এড়িয়ে যেতে চাইলে ঈদের দিনটাকে হাফ রোজা মনে করতে হবে। এটি করতে পারলে ঈদের দিনের আনন্দ ভাগাভাগি করা যাবে। এভাবে পরপর দুই দিন অর্ধেক রোজা মনে করে চলতে হবে। এসময়ে খাবারের পর পরই পানি খাওয়া যাবেনা। এছাড়া কোমল পানীয়, বোরহানি না খাওয়া সবচেয়ে ভালো। সলিড আর লিকুইড (কঠিন ও তরল) একসঙ্গে খাওয়া যাবেনা। যে খাবারই খান না কেন তা অল্প অল্প করে খেলে আর কোনো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। 


এবারের ঈদ উদযাপিত হচ্ছে তীব্র গরমের মধ্যে। তাই খাবার খাওয়া নিয়ে বাড়তি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এসময় শরীরে তাপ তৈরি করে এমন খাবার না খাওয়ার পরামর্শ তাদের। এছাড়া চর্বি, বেশি ক্যালোরিযুক্ত ও মাংস জাতীয় খাবার সম্ভব হলে একেবারেই এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। বরং সবজি, ফল, শসা ও পানি বেশি বেশি করে পান করলে শরীর সুস্থ থাকবে। 


যদি কারো পেটে সমস্যা দেখা দেয় কী করা উচিৎ জানতে চাইলে ডা. মো. আনওয়ারুল কবীর বলেন, এমন সমস্যা দেখা দিলে খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি লুজ মোশন বা ডায়রিয়া দেখা দেয় একটা পাকা কলা খেয়ে ফেলতে হবে। খুব বেশি খারাপ লাগলে অ্যান্টাসিড ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। এটির কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে বেশি বেশি গ্যাস্ট্রিকের বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন পরিহার করাই ভালো। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন