রেলের নতুন ৪০ লোকোমোটিভ বাড়াবে পশ্চিমাঞ্চলের সক্ষমতা

শুভব্রত আমান, কুষ্টিয়া

বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল জোনে (রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা খুলনা বিভাগ) সংযুক্ত হচ্ছে নতুন ৪০টি অত্যাধুনিক ইঞ্জিন লোকোমোটিভ। এরই মধ্যে দুই দফায় ১৬টি লোকোমোটিভ দেশে এসে পৌঁছেছে। ১৬টি ইঞ্জিনের মধ্যে সাতটি প্রস্তুত হয়েছে, যেগুলোর পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হয়েছে। এসব ইঞ্জিনের মধ্যে তিনটি এসেছে ঈশ্বরদী জংশনে। তিন বছর আগে চুক্তি হওয়া এসব ইঞ্জিন কিনতে খরচ হয়েছে হাজার ১১৬ কোটি ২২ লাখ টাকা।

কবে থেকে ইঞ্জিনগুলো নিয়মিত চলাচল করবে তা এখনো জানানো না হলেও রাজশাহী থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করেছে। গত বৃহস্পতিবার জোনের কপোতাক্ষ ট্রেনের সঙ্গে একটি নতুন ইঞ্জিন যুক্ত করা হয়। মূলত এটি ঈশ্বরদী পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে চলছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ইঞ্জিনগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি। এগুলো হাজার ৩০০ হর্স পাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন। সর্বোচ্চ গতি প্রতি ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার, যা দেশের রেললাইনের গড় গতিসীমার তুলনায় বেশি। শুধু তা- নয়, এসব ইঞ্জিনের সামনে পেছনে রয়েছে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। চালকের কক্ষে এসি সংযুক্ত রয়েছে, সামনে স্পষ্ট দেখার জন্য ইঞ্জিনগুলোয় ব্যবহার করা হয়েছে এলইডি লাইট। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ইঞ্জিনগুলোর ব্যবস্থাপনাও অনেক সহজ। পাঁচ বছর এগুলো নির্বিঘ্নে চলবে। এর পরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রতি ইঞ্জিনের সঙ্গে একজন করে জনবল দিয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় কোনো ত্রুটি দেখা দিলে তারাই তা নির্ণয় করে সংশোধন করবেন।

বিষয়ে রাজশাহী রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসীম কুমার বলেন, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সঙ্গে এসব অত্যাধুনিক ইঞ্জিন যুক্ত হওয়ায় রেলের পরিষেবা আরো বাড়বে। ইঞ্জিনগুলো উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন হওয়ায় যাত্রীদের ভ্রমণ আগের চেয়ে অনেক নির্বিঘ্ন হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে রেলের বহরে ইঞ্জিন রয়েছে ২৬৩টি। এর মধ্যে ১৭১টি মিটার গেজ ৯২টি ব্রড গেজ ইঞ্জিন। ব্রড গেজ ইঞ্জিনগুলোর মধ্যে ৪৩টি বা ৪৭ শতাংশ মেয়াদোত্তীর্ণ। এগুলোর মধ্যে ১৭টির আয়ুষ্কাল ৫০ বছরের বেশি, ১৪টির বয়স ৪০ বছরের বেশি ১২টির আয়ুষ্কাল ৩০ বছরেরও বেশি। ২০ বছরের কম ব্যবহূত হয়েছে এমন ইঞ্জিন রয়েছে ৪৯টি।

রেলের কর্মকর্তারা জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ এসব ইঞ্জিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালন ব্যয় বেশি। এগুলোয় জ্বালানি প্রয়োজন হয় প্রায় দ্বিগুণ। চলার পথে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে প্রায়ই। এছাড়া এগুলোর যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেলে এখন আর কিনতেও পাওয়া যায় না। বিকল্প হিসেবে রেলওয়ের স্থানীয় প্রকৌশলীরাই সেসব যন্ত্র নিজস্ব ওয়ার্কশপে তৈরি করে কাজ চালান। কিন্তু সেগুলো টেকসই হয় না।

এমন পরিস্থিতিতে নতুন ইঞ্জিন কিনতে চুক্তি করে সরকার। জানা গেছে, ৪০টি ব্রড গেজ ইঞ্জিন কেনায় দর প্রাক্কলন করা হয়েছিল হাজার ৪৭৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তবে ইঞ্জিনগুলোর জন্য অনেক কম দরপত্র প্রস্তাব করে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকারী প্রগ্রেস রেল লোকোমোটিভ ইনকরপোরেশন। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ইঞ্জিনগুলো কেনার চুক্তি হয়। এতে সাশ্রয় হয় ৩১৮ কোটি লাখ টাকা।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ রেলওয়ের রোলিং স্টক অপারেশন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কেনা হয়েছে এসব ইঞ্জিন। চুক্তির ২৪ থেকে ৩৬ মাসের মধ্যে ইঞ্জিনগুলো সরবরাহের কথা ছিল। তবে কভিড-১৯ সংক্রমণ শুরুর পর প্রকল্পটির অগ্রগতি কিছুটা ব্যাহত হয়।

রাজশাহী রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ইঞ্জিনগুলো যুক্ত হলে রেলের পশ্চিম জোনের চিত্র অনেক পাল্টে যাবে। পশ্চিম জোনে ২০১৩ সালের পর থেকে নতুন কোনো ট্রেন যুক্ত হয়নি। সে সময় ভারত থেকে ২৬টি ইঞ্জিন কেনা হয়েছিল। জোনে এমনিতে বর্তমানে যাত্রী পরিবহনের ক্ষমতা প্রয়োজনের মাত্র ৩৬ শতাংশ। ইঞ্জিনগুলো যুক্ত হলে রেলের যাত্রী পরিবহনে সক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে।

এছাড়া ২০২৪ সাল নাগাদ পদ্মা সেতু চালু হলে পর্যায়ক্রমে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ প্রলম্বিত হবে। অন্যদিকে, খুলনা-মোংলা বন্দর রেলপথ চালু হলেও রুটে ট্রেন সংখ্যা আরো বাড়বে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন