স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বিএসইসির বৈঠক

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সামনের দিনগুলোয় তাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে স্টেকহোল্ডারদের  বৈঠকে তারা প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়া সভায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছে বিএসইসি। এক্ষেত্রে তহবিল গঠনের উদ্যোগে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

সভায় বিএসইসির পক্ষে সংস্থাটির কমিশনার অধ্যাপক . শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম পরিচালক শেখ মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে স্টেকহোল্ডারদের পক্ষে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও, অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডসের (এএএমসিএমএফ) প্রেসিডেন্ট হাসান তাহের ইমাম, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলের (সিএমএসএফ) প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেনসহ রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

সভায় পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সময় স্টেকহোল্ডাররা বাজারের ছন্দপতনের কারণগুলো তুলে ধরেন। বাজার মধ্যস্থতাকারীদের তারল্য সহায়তার জন্য বিএমবিএর প্রস্তাবিত ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল নিয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। তহবিলের গঠন পদ্ধতি, বিনিয়োগ ঝুঁকির বিষয়ে আলোচনা করা হয়। নীতিগতভাবে কমিশন ধরনের তহবিল গঠনের বিষয়টিকে সমর্থন করেছে। এক্ষেত্রে কীভাবে তহবিল গঠন করা হবে বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে সে বিষয়ে বিশদ পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব দেয়ার কথা বলেছে কমিশন। সভায় পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় আইসিবি কীভাবে আরো সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তির জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

সভা শেষে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বিএমবিএর প্রস্তাবিত ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব পোর্টফোলিওর মাধ্যমে সামনের মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। বিএমবিএর প্রেসিডেন্ট বিষয়টি তদারকি করবেন। স্টক ডিলারদের প্রত্যেকে পুঁজিবাজারে কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করবে বলে ডিবিএর প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে বাজারে ২০০-৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ আসবে। সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলো সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় বিনিয়োগ করেছে। সামনের দিনগুলোতেও তারা নিজস্ব ফান্ডের পোর্টফোলিওর মাধ্যমে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে। সিএমএসএফকে কীভাবে আরো কার্যকরভাবে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা হয়েছে। সামনের মাস থেকেই এর আংশিক বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে জানান তিনি।

গতকালের বাজার পরিস্থিতি: গতকাল সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স এদিন ১১ পয়েন্ট কমেছে। পাশাপাশি এক্সচেঞ্জটিতে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) গতকাল সূচক দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ কমেছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল লেনদেন শুরুর পর প্রথম ঘণ্টায় ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানে ছিল সূচক। এর পর থেকেই শেয়ার বিক্রির চাপে পয়েন্ট হারাতে থাকে সূচক। শেষ পর্যন্ত গতকাল দিনশেষে ১১ পয়েন্ট কমে হাজার ৭৫৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে ডিএসইএক্স। আগের কার্যদিবসে যা ছিল হাজার ৭৬৫ পয়েন্টে।  গতকাল সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল), বেক্সিমকো লিমিটেড, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস বিএসআরএম লিমিটেডের শেয়ারের।

ডিএসইর ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ গতকাল পয়েন্ট কমে হাজার ৪৬৬ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে। আগের দিন শেষে যা ছিল হাজার ৪৭১ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিনশেষে পয়েন্ট কমে হাজার ৪৬৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের দিন শেষে যা ছিল হাজার ৪৬৩ পয়েন্টে।

ডিএসইতে গতকাল ৮০১ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। এর আগের কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ৯৮১ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৭৯টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিনশেষে দর বেড়েছে ১০৯টির, কমেছে ২০৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৬৫টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন