সিএফওদের সঙ্গে বিএসইসির বৈঠক

পুঁজিবাজারে ২ শতাংশ বিনিয়োগ বাড়াবে তালিকাভুক্ত ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুঁজিবাজারে তারল্যপ্রবাহ বাড়াতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো। যেসব ব্যাংকের মূলধনের ২৫ শতাংশের নিচে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ রয়েছে, তারা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সেটি শতাংশ করে বাড়াবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে এক বৈঠক থেকে গতকাল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর প্রধান অর্থ কর্মকর্তাদের (সিএফও) সঙ্গে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বিএসইসি ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির কমিশনার . শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। সময় বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান মোহাম্মদ রেজাউল করিম উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, দুই পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে বৈঠকে তিনটি বিষয়ে একমত হয়েছে। প্রথমটি হলো পুঁজিবাজারে যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগ এখনো তাদের মূলধনের ২৫ শতাংশের নিচে রয়েছে, তারা সেটি দ্রুত শতাংশ করে বাড়াবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোকে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক ব্যাংক এখনো তহবিল গঠন করতে পারেনি। যারা এখনো তহবিল গঠন করেনি, তারা দ্রুত সেটি গঠন করে বিনিয়োগ করতে সম্মত হয়েছে। বৈঠকে বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, মূলধন বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলোর বন্ড ইস্যুর প্রস্তাবগুলো দ্রুত অনুমোদন দেয়া হবে। যাতে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে পারে।

বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, পুঁজিবাজারের তারল্যপ্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর সিএফওদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে তারল্যপ্রবাহ বাড়াতে বিভিন্ন দিক নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়। এতে তিনটি বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রথমে রয়েছে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের সর্বোচ্চ যে ২৫ শতাংশ সীমা রয়েছে, তারা কয়েকদিনের মধ্যে শতাংশ বিনিয়োগ বাড়াবেন। এছাড়া ব্যাংকগুলোকে ক্যাপিটাল মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের নির্দেশনা রয়েছে। যেসব ব্যাংক এখনো বিশেষ তহবিল গঠন করেনি তারা দ্রুত গঠন করবে এবং যাদের ফান্ড রয়েছে তারা সম্মিলিতভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে সাপোর্ট দেবে। তৃতীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, টায়ার- টায়ার- অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর মূলধন শক্তিশালী করার জন্য যেসব ব্যাংক পারপিচুয়াল সাব-অর্ডিনেটেড বন্ডের অনুমোদনের জন্য আবেদন করবে, সেটি অতি দ্রুত প্রসেস করে দেয়া হবে। এছাড়া মূলধন উত্তোলনের জন্য ব্যাংকের অন্যান্য যেসব প্রক্রিয়া থাকবে, সে ক্ষেত্রেও কমিশন সার্বিকভাবে সহায়তা করবে। তিনটা সিদ্ধান্ত যদি বাস্তবায়ন করা যায় এবং পারপেচুয়াল সাবঅর্ডিনেট বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে যদি ব্যাংকের মূলধন বৃদ্ধি পায়, সে ক্ষেত্রে তারা মূলধনের ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। এর মাধ্যমে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়বে।

নেগেটিভ ইকুইটি সমন্বয়-সংক্রান্ত ইস্যু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের পুঁজিবাজার অস্তির হয়ে ওঠে। অবস্থায় বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে পদক্ষেপ নেয় বিএসইসি। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সিকিউরিটিজের সর্বনিম্ন হার নির্ধারণ করে দেয় কমিশন। বিএসইসির সাময়িক পদক্ষেপ হিসেবে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের দর কমার ক্ষেত্রে শতাংশ সার্কিট ব্রেকার নির্ধারণ করা হয়। ফলে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের দর আগের দিনের সমাপনী মূল্যের তুলনায় সর্বোচ্চ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারবে। তবে সিকিউরিটিজের দর বাড়ার ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার আগের মতোই অপরিবর্তিত থাকবে। পাশাপাশি বাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরামর্শ দেয় কমিশন। বিএসইসির এমন পদক্ষেপে ওই দিনই বড় দরপতনের হাত থেকে রক্ষা পায় দেশের পুঁজিবাজার। একই কারণে গতকাল সূচকে বড় উত্থান হয়েছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল লেনদেন শুরুর পর থেকেই দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্সে পয়েন্ট যোগ হতে থাকে। মাঝে শেয়ার বিক্রির চাপে কিছুটা নিম্নমুখী হলেও শেষ পর্যন্ত সূচকটিতে বড় পয়েন্ট যোগ হয়। দিনশেষে সূচকটি ১৫৬ পয়েন্ট বেড়ে হাজার ৬৩০ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে। যেখানে আগের দিন শেষে ছিল হাজার ৪৭৪ পয়েন্টে। সূচকের উত্থানে গতকাল সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল স্কয়ার ফার্মা, রেনাটা, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারের।

ডিএসইর ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ গতকাল ৪১ পয়েন্ট বেড়ে দিনশেষে হাজার ৪১৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের দিন শেষে যা ছিল হাজার ৩৭৪ দশমিক শূন্য পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিনশেষে ৩০ পয়েন্ট বেড়ে হাজার ৪২৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের দিন শেষে যা ছিল হাজার ৩৯৯ পয়েন্টে।

ডিএসইতে গতকাল লেনদেন হওয়া ৩৭৮টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ৩৬৫টির। কমেছে ৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১০টি সিকিউরিটিজের বাজারমূল্য। এদিন ডিএসইতে মোট ৭৭৩ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ৭৪৬ কোটি টাকা।

দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএসসিএক্স গতকাল প্রায় ২২৭ পয়েন্ট বেড়ে ১১ হাজার ৬৪১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ১১ হাজার ৪১৪ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ২৯৩টি কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৫০টির, কমেছে ৩২টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১১টির বাজারদর। সিএসইতে গতকাল মোট ২৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ২২ কোটি টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন