ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব

দুদিনে ২৭২ পয়েন্ট হারিয়েছে দেশের পুঁজিবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে গত বৃহস্পতিবার অস্থির হয়ে ওঠে বৈশ্বিক পুঁজিবাজার। ব্যতিক্রম ছিল না দেশের পুঁজিবাজারও। অবশ্য গত শুক্রবারেই বৈশ্বিক পুঁজিবাজার আবার ঘুরে দাঁড়ায়। এতে ধারণা করা হচ্ছিল চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার দেশের পুঁজিবাজারও ঘুরে দাঁড়াবে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ আরো জটিল দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কায় গতকাল বড় পতন হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। গত দুই কার্যদিবসে ২৭২ পয়েন্ট হারিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপে গতকাল লেনদেন শুরুর পর থেকেই পয়েন্ট হারাতে থাকে সূচক। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সূচক কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করলেও সেটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বেলা ১টার দিকে আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে সূচক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দিন শেষে ১৬৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৯ শতাংশ কমে হাজার ৬৭৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে ডিএসইএক্স। আগের কার্যদিবসে যা ছিল হাজার ৮৩৯ পয়েন্টে। সর্বশেষ ৪৭ সপ্তাহ আগে দেশের পুঁজিবাজারে এত বেশি দরপতন দেখা গেছে। গতকাল সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো লিমিটেড, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ারের।

ডিএসইর ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ গতকাল ৪৭ পয়েন্ট কমে হাজার ৪৬৮ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে। আগের দিন শেষে যা ছিল হাজার ৫১৫ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিন শেষে প্রায় ৩০ পয়েন্ট কমে হাজার ৪৪৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের দিন শেষে যা ছিল হাজার ৪৭৬ পয়েন্টে।

ডিএসইতে গতকাল ৯১৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের কার্যদিবসে লেনদেন ছিল হাজার ৫০ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৭৯টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ১০টির, কমেছে ৩৬৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল চারটি সিকিউরিটিজের বাজারদর।

বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হওয়ার কারণে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি ঋণাত্মক ইকুইটি সমন্বয়ের একটি প্রভাব ছিল। গত শুক্রবার বৈশ্বিক পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর কারণে আমরাও আশাবাদী ছিলাম যে আমাদের বাজারও ঘুরে দাঁড়াবে। আশা করছি দুয়েকদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক প্রবণতায় ফিরবে দেশের পুঁজিবাজার।

খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৪ দশমিক শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে বস্ত্র খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ দশমিক শতাংশ দখলে নিয়েছে ওষুধ রসায়ন খাত। ১০ দশমিক শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক খাত। চতুর্থ অবস্থানে থাকা বিবিধ খাতের দখলে ছিল লেনদেনের ১০ দশমিক শতাংশ। এছাড়া প্রকৌশল খাতের দখলে ছিল মোট লেনদেনের দশমিক শতাংশ। গতকাল সব খাতের শেয়ারেই নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এর মধ্যে শতাংশ নেতিবাচক রিটার্নের ভিত্তিতে শীর্ষে ছিল সাধারণ বীমা খাত।

ডিএসইতে গতকাল লেনদেনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হলো ইউনিয়ন ব্যাংক, আইএফআইসি, প্যাসিফিক ডেনিম, ন্যাশনাল ব্যাংক, ড্রাগন সোয়েটার, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, কেয়া কসমেটিকস, ওয়ান ব্যাংক, ডেল্টা স্পিনিং বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) লিমিটেড।

ডিএসইতে গতকাল দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হলো প্যাসিফিক ডেনিম, ইয়াকিন পলিমার, এডিএন টেলিকম, আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট অগ্রণী ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড, ডরিন পাওয়ার, সোনালি পেপার, পেনিনসুলা চিটাগং, হাওয়েল টেক্সটাইল, ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স ম্যারিকো বাংলাদেশ।

অন্যদিকে এক্সচেঞ্জটিতে দরপতনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে অলটেক্স, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, পেপার প্রসেসিং, আরামিট সিমেন্ট, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স মুন্নু এগ্রো।

দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল প্রধান সূচক সিএসসিএক্স ২৯১ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ৭০৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ১১ হাজার ৯৯৯ পয়েন্টে। সিএসইর সব শেয়ারের সূচক সিএএসপিআই গতকাল ৪৯১ পয়েন্ট কমে ১৯ হাজার ৫০১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ১৯ হাজার ৯৯২ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ৩০৪টি কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে নয়টির, কমেছে ২৮৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১১টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে মোট ৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের সংকট দীর্ঘায়িত হলে স্বাভাবিকভাবেই বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরো বাড়বে। এলএনজির দামও ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে জ্বালানি খাতে দেশের ব্যয় বাড়বে। অন্যদিকে ইউক্রেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গম রফতানিকারক দেশ হওয়ার কারণে পণ্যটির সরবরাহ ব্যবস্থায়ও বিঘ্ন ঘটবে। ফলে সামনের দিনগুলোতে গমের দামও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। এসব কারণে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আর এসব বিষয়ের সার্বিক প্রভাব দেখা গেছে দেশের পুঁজিবাজারে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে এমন একটি শঙ্কা রয়েছে। কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করছেন। অন্যদিকে দাম কমে আকর্ষণীয় অবস্থানে আসায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার কেনার প্রবণতা দেখা গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন