ঢাকা-টাঙ্গাইল চার লেন মহাসড়ক

পাঁচ বছরের কাজ শেষ হচ্ছে নয় বছরে

শামীম রাহমান

২০১৩ সালের এপ্রিলে শুরু হয়ে শেষ হবে ২০১৮ সালের মার্চেএমন মেয়াদ ধরে অনুমোদন হয় জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়ন প্রকল্প। যদিও অনুমোদনের পর সময় যত গড়িয়েছে, নানা জটিলতায় ততই বেড়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। সঙ্গে বেড়েছে নির্মাণ ব্যয়। বর্তমানে প্রকল্পটির ভৌত কাজের অগ্রগতি ৯৯ দশমিক শূন্য শতাংশ। নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে চলে এলেও আরো ছয় মাস মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। ফলে পাঁচ বছরের প্রকল্প শেষ করতে সময় লাগতে যাচ্ছে নয় বছর।

প্রকৌশলীদের মতে, জাতীয় মহাসড়ক এন--এর ৭০ কিলোমিটার অংশ চার লেনে গড়ে তুলতে ডিপিপিতে নির্ধারিত মেয়াদের চেয়ে বেশি সময় লাগার কথাও নয়। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার লক্ষ্যে সড়কটির ৭০ কিলোমিটার অংশকে ভাগ করা হয় চার ভাগে। প্রত্যেক ভাগের জন্য নিযুক্ত করা হয় আলাদা ঠিকাদার। আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি শেষ করে মাঠ পর্যায়ে সড়কটির কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে।

মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে সাসেক সংযোগ সড়ক প্রকল্প: জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়ক (এন-) চার লেন মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে। চার লেন মহাসড়ক ছাড়াও ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য সড়কটিই দুই পাশে নির্মাণ হচ্ছে আরো দুটি লেন। প্রকল্পটির মাধ্যমে ৭০ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়ন, ৫৩টি সেতু ৭৬টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ, নয়টি ফ্লাইওভার, দুটি রেলওয়ে ওভারপাস এবং ছয়টি ফুটওভারব্রিজ তৈরি করা হচ্ছে।

চারটি ভাগের মধ্যে গাজীপুরের ভোগরা বাজার ইন্টারচেঞ্জ থেকে কালিয়াকৈর বাইপাস পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার বাস্তবায়ন করছে দক্ষিণ কোরিয়ার কায়রইঙ বাংলাদেশের স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের জয়েন্ট ভেঞ্চার। টাঙ্গাইল থেকে কালিয়াকৈর বাইপাস পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার বাস্তবায়ন করছে মালয়েশিয়ার এইচসিএম ইঞ্জিনিয়ারিং বাংলাদেশের আব্দুল মোমেন লিমিটেডের জয়েন্ট ভেঞ্চার। দুল্লামারি রোড থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত ২২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার বাস্তবায়ন করছে দক্ষিণ কোরিয়ার সামহোয়ান বাংলাদেশের মীর আখতার লিমিটেডের জয়েন্ট ভেঞ্চার। আর টাঙ্গাইল-এলেঙ্গার ১০ কিলোমিটার বাস্তবায়ন করছে দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিসিএল বাংলাদেশের ডিয়েনকো লিমিটেডের জয়েন্ট ভেঞ্চার।

প্রকল্প কার্যালয়ের তথ্য বলছে, ডিসেম্বর ২০২১ সাল পর্যন্ত ৬৮ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়ন, ২৬টি সেতু ৭২টি বক্স কালভার্ট, চারটি ফ্লাইওভার, দুটি রেলওয়ে ওভারপাস এবং ১১টি আন্ডারপাসের কাজ শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে ভৌত অগ্রগতি ৯৯ দশমিক শূন্য শতাংশ বলে জানিয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। সবশেষ সংশোধনী অনুযায়ী, চার লেন মহাসড়কটির কাজ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের জুনে। তবে সময়ের মধ্যে বাকি কাজগুলো শেষ করা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। একাধিক ফ্লাইওভার, সেতু, কালভার্টসহ বিভিন্ন অনুষঙ্গের কাজ সম্পন্ন করতে সম্প্রতি মেয়াদ আরো ছয় মাস বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।

সড়ক জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের এপ্রিলে একনেকে অনুমোদিত হয় জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প। তখন নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল হাজার ৭৮৮ কোটি। বাস্তবায়ন কাল ছিল ২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত। তবে নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ করতে না পারা, অদূরদর্শী কর্মপরিকল্পনা এবং নতুন কিছু অনুষঙ্গ যুক্ত হওয়ায় প্রকল্পটির ডিপিপি এখন পর্যন্ত চারবার সংশোধন করা হয়েছে। ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের মেয়াদ বেড়েছে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে হাজার ২১৪ কোটি টাকা। তবে মেয়াদেও প্রকল্পটির কাজ শেষ না হওয়ায় আরেক দফা প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে পঞ্চমবারের মতো সংশোধন হবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়ন প্রকল্প।

প্রস্তাবিত সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে মেয়াদ বাড়লেও নির্মাণ ব্যয় কিছুটা কমছে। বর্তমানে প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় হাজার ২১৪ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। হিসেবে নির্মাণ ব্যয় কমছে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা।

মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়ক (এন-) চার লেন মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. ইসহাকের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে যোগাযোগ করা হলে সওজ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর বণিক বার্তাকে বলেন, প্রকল্পের বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আমি যতদূর জানি একটি ফ্লাইওভারের কাজ কিছুটা বাকি আছে, যা কয়েকদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। আমরা চলতি বছরের মধ্যে মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতের কাজ সম্পন্ন করতে পারব। পাশাপাশি বছরের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে পুরো সড়কটি উদ্বোধন করা হবে বলেও জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন