সর্বোচ্চ দৈনিক শনাক্ত হারের রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহামারী শুরুর পর সংক্রমণের এমন ঊর্ধ্বগতি এবারই প্রথম। এর মধ্যে গতকাল প্রাণঘাতী ভাইরাসের দৈনিক সংক্রমণ শনাক্তের হার সর্বোচ্চ হয়েছে। একই সঙ্গে সেদিন আরো ২০ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। দেশের নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সরকারের করোনাবিষয়ক তথ্য বলছে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ হাজার ৪৪০ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর থেকে দেশে একদিনে শনাক্তের হারে এটাই সর্বোচ্চ। এর আগে গত বছরের ২৪ জুলাই শনাক্তের সর্বোচ্চ হার ছিল ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৭১ জনে। সর্বশেষ ২০ জনসহ মোট মারা গেছেন ২৮ হাজার ৩০৮ জন করোনা রোগী। গতকাল আরো হাজার ৩২৬ জন কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে ওঠায় মোট সুস্থতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৬২ হাজার ৩৬৯ জনে। ফলে দেশে বর্তমানে সক্রিয় করোনা রোগী লাখ ৭২ হাজার ১০৩ জন। আগের দিন সংখ্যা ছিল এক লাখ ৫৮ হাজার। গত ২০ জানুয়ারি ছিল ৮০ হাজার ৯২৬ জন। মাত্র এক সপ্তাহে সক্রিয় করোনা রোগী বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে।

ডিসেম্বরের প্রথম দিকেও দেশে করোনা শনাক্ত শতাংশের নিচে ছিল। তবে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে এসে সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। গত মাসের শেষদিকে যেখানে দৈনিক রোগী শনাক্ত ৫০০-এর ঘরে ছিল, সেখানে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায় ১০ জানুয়ারি। এর পর থেকে নতুন রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।

তথ্য বলছে, চারদিন ধরে দৈনিক ১৫ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হলো। মঙ্গলবার ১৬ হাজার ৩৩ জন, বুধবার ১৫ হাজার ৫২৭, বৃহস্পতিবার ১৫ হাজার ৮০৭ গতকাল ১৫ হাজার ৪৪০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগে গত বছরের ২৮ জুলাই ১৬ হাজার ২৩০ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল, মহামারীর মধ্যে সেটাই সর্বোচ্চ শনাক্তের সংখ্যা। গতকাল আরো ২০ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। একদিনে মৃতের সংখ্যা গত সাড়ে তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত অক্টোবর ২১ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে এর সংক্রমণ বাড়ছে। আগের ধরনগুলোর তুলনায় ওমিক্রন দ্রুত ছড়ায়। দেশেও ধরন শনাক্ত হয়েছে। এর আগে গত বছরের মাঝামাঝি করোনার ডেল্টা ধরনের দাপটে দেশে করোনায় মৃত্যু, শনাক্ত শনাক্তের হার বেড়েছিল। বর্তমানে করোনার বিস্তার রোধে সরকারের বিধিনিষেধ চলছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুল-কলেজ সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ১১ দফা বিধিনিষেধ ১৩ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। নির্দেশনা কার্যকর করতে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে প্রায় ২০টি জেলায় শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের ওপরে রয়েছে। গত এক মাসে দেশে লাখ ৭৮ হাজারের বেশি মানুষ কভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছে। একই সঙ্গে সময়ে সুস্থ হয়েছে ১৪ হাজার ৩২৫ জন করোনা রোগী। রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, দেশে সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা যে গতিতে বাড়ছে, তাতে দৈনিক ৫০ হাজার রোগী শনাক্ত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। বর্তমানে হাসপাতালে রোগী ভর্তি হার কম। তবে রোগী অস্বাভাবিক হারে বাড়লে হাসপাতালেও রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে সংকটাপন্ন রোগী মৃত্যুর হার।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের মার্চ। আর গত ২৫ জানুয়ারি রোগীর সংখ্যা ১৭ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যু হয়। আর গত বছর ডিসেম্বর কভিডে মোট মৃত্যু ২৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে গত বছরের ১০ আগস্ট দুই দিনই সর্বোচ্চ ২৬৪ জন করে করোনা রোগীর মৃত্যু হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে শতাধিক দেশে ভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে ২০২০ সালের ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন