রেকর্ড সংক্রমণ সত্ত্বেও বিধিনিষেধ শিথিলের ঘোষণা

বণিক বার্তা ডেস্ক

করোনা ভাইরাসের  অতিসংক্রামক নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রভাবে এখনো দেশে দেশে ঊর্ধ্বমুখী আক্রান্তের সংখ্যা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা প্রতিদিনই রেকর্ড ছুঁয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে রেকর্ড সর্বোচ্চ আক্রান্তের দিনে ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে এসেছে দাবি করেছে জার্মানি। এর আগে লন্ডনের পর বিধিনিষেধ শিথিল হয়েছে দিল্লিতেও।

গতকাল জার্মানিতে দৈনিক সংক্রমণ সংখ্যা যাবত্কালের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে গেলেও গতকাল সংখ্যা কিছুটা কমে আসে। দেশটির সংক্রামক রোগবিষয়ক প্রতিষ্ঠান রবার্ট কচ ইনস্টিটিউটের হিসাবে বৃহস্পতিবার আক্রান্ত শনাক্ত হয় লাখ হাজার ১৩৬ জনের। তবে গতকালের হিসাবে পূর্ববর্তী একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় লাখ ৯০ হাজার ১৪৮ জনে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুসারে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৯৫ শতাংশই অতিসংক্রামক ওমিক্রন ধরনের। গত সপ্তাহে ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী ছিল ৮৯ শতাংশ। বার্লিনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে রবার্ট কচ ইনস্টিটিউটের প্রধান লোথার উইলার এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, কভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ফের বাড়ছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিতে কভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা শীর্ষ তালিকায় রয়েছে।

ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেনের পরই সর্বোচ্চ আক্রান্ত এখন জার্মানিতে। সংক্রমণের উচ্চহার সত্ত্বেও ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে বলে দাবি করেছে জার্মানির সরকার। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি করেন। বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, গতকাল জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী কার্ল লাউটারবাচ বলেছেন, বর্তমানে ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বার্লিনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, টিকা না নেয়া বয়স্কদের মধ্যে আক্রান্তের হার গড় আক্রান্তের চেয়ে অনেক কম। এছাড়া ওমিক্রন ঢেউ অনুমানের চেয়ে কিছুটা কমই আক্রান্ত করছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, জার্মানিতে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখে পৌঁছার আশঙ্কা করা হয়েছিল। তিনি মনে করেন, মিউটেশনের কারণে মাসের পরই আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসবে। লাউটারবাচ জানান, আক্রান্তের সংখ্যা কমে এলেই করোনা সংক্রান্ত সব বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হবে। এটিই বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে কভিড সংক্রমণের হার কমে আসায় বিধিনিষেধ শিথিল হচ্ছে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। তুলে নেয়া হয়েছে জারীকৃত সপ্তাহান্তের কারফিউ। এনডিটিভি জানিয়েছে, রাজধানী দিল্লিতে জারি করা সপ্তাহান্তের কারফিউ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে রাতের বেলার কারফিউ আপাতত বহাল থাকছে। বন্ধ থাকছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শর্তসাপেক্ষে খুলে দেয়া হয়েছে রেস্টুরেন্ট, বার, সিনেমা হল বাজার। দিল্লি ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটির (ডিডিএমএ) বৈঠক শেষে গতকাল বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হয়। রেস্টুরেন্ট, বার সিনেমা হলে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে আসন সংখ্যা ৫০ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। এছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথি থাকতে পারবেন সর্বোচ্চ ২০০ জন। দিল্লি সরকার জানিয়েছে, সংক্রমণের হার কমে এলে পর্যায়ক্রমে সব খুলে দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ছিল। সেই সিদ্ধান্তের আলোকেই এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যে কভিড পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সংক্রমণের হারও অনেক কমেছে।

স্বস্তির খবর আছে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ইউরোপেও। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের পর বিধিনিষেধ শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড ডেনমার্ক। মহামারীর ভয়াবহতার মধ্যে ফেব্রুয়ারি থেকেই বিধিনিষেধ শিথিলের কথা জানিয়েছে ফিনল্যান্ড সরকার। টুইটারে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী হানা সার্কিনেন বলেন, হাসপাতালে এখনো অনেক রোগী রয়েছে। তবে গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা কমে এসেছে। নাগরিকদের টিকা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখন থেকে রেস্টুরেন্ট রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। তবে ধারণ ক্ষমতার ৭৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বার খোলা রাখা যাবে। তবে বন্ধের কমপক্ষে ঘণ্টা আগে মদ পরিবেশন করা যাবে না।

এদিকে নেদারল্যান্ডসের সরকারও শিথিল করে আনছে করোনার বিধিনিষেধ। ইউরোপের সবচেয়ে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা দেশটিতে এখন রেস্টুরেন্ট, বার, জাদুঘর, থিয়েটারসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক ভেনু খোলা রাখা যাবে। অনুমিত সংখ্যার চেয়ে কম আক্রান্ত হওয়ায় ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট রাজধানী হেগে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়ে দেয়া ঘোষণায় বলেছেন, নেদারল্যান্ডসে খুলে দিতে আজ আমরা একটি বড় পদক্ষেপ নিচ্ছি। যদিও এটি ঝুঁকিমুক্ত নয়। রেস্টুরেন্ট, বার, জাদুঘর, থিয়েটারসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক ভেনু খোলা থাকবে রাত ১০টা পর্যন্ত।

ফেব্রুয়ারি থেকে বিধিনিষেধ শিথিল করেছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ ডেনমার্ক। রেকর্ড সংক্রমণ সত্ত্বেও এমন ঘোষণার কারণ হিসেবে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তারা মনে করছেন এর মাধ্যমে আক্রান্তের সংখ্যা চূড়া ছুঁয়েছে। এখন তা ক্রমেই কমে আসবে। এর ফলে ফেব্রুয়ারির পর থেকে রেস্টুরেন্ট বার দ্রুত বন্ধ করা এবং মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা থাকবে না। অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কার্ল নেহাম্মার জানিয়েছেন, ৩১ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে টিকা না নেয়া ব্যক্তিদের লকডাউন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার থেকে ইংল্যান্ডে মাস্ক পরা কভিড পাস দেখানোর বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বিষয়ে জানান, টিকাদানে সাফল্য কভিডসংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে মানুষের ভালো বোঝাপড়া তৈরির প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন