ঠাকুরগাঁওয়ে খাল খননে তিন ফসলের স্বপ্ন কৃষকের

আহমেদ ইসমাম, ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার গোরকই বিলে খনন করা লোলতই খাল ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

কৃষিতে সমৃদ্ধ উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। জমির ফলন বাড়াতে জেলার কৃষক নানা পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন। একটি খাল খননে বিভিন্ন ফসলের বাম্পার ফলন আশা করছেন হাজারো কৃষক। অতীতে ধানের চারা রোপণের পর বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে যেত। বছরের বেশির ভাগ সময় লেগে থাকত জলাবদ্ধতা। এত দিন এক ফসলের বেশি করতে না পারলেও এখন তিন ফসল চাষ করে তিন গুণ লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন চাষীরা। ঠাকুরগাঁওয়ের গোরকই বিলে প্রায় ১৫ কিলোমিটার খাল খনন হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে দিনবদলের স্বপ্ন দেখছেন তারা।

জেলার রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড়, নেকমরদ নন্দুয়ার ইউনিয়নের  কয়েক হাজার কৃষক ১৫ হাজার  একর জমি চাষ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।  আমন ধানের পর চাষীরা জমি সারা বছর ফেলে রাখতে বাধ্য হতেন। সময়মতো বর্ষার পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় সেসব জমিতে জলাবদ্ধতা লেগে থাকত। এতে চাষীরা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তেন। কোনো কোনো বছর পানি বেশি থাকলে আমন ধানও তারা ঠিকমতো ঘরে আনতে পারতেন না। অবস্থা নিরসনে কৃষক সহিদুল যোগাযোগ করেন উপজেলা কৃষি অফিসে। 

চাষীরা প্রস্তাব দেন পুরনো লোলতই খালটি পুনর্খননের। তাদের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ। এর পর তিনি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএডিসি) যোগাযোগ করেন। ফলে ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ১৫ কিলোমিটার খালটি খনন সম্ভব হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, এক সময় পানি জমে থাকা জমিগুলোয় এখন হাল-চাষ চলছে। খালটি খনন করায় জমির পানি চলে যাচ্ছে খালে। ফলে জলাবদ্ধ থাকছে না ফসলি জমি। কারণে ধান বা সরিষা ভুট্টার ফসল করা সম্ভব হচ্ছে। অন্যদিকে মাটি শুকনো হওয়ায় যেকোনো বাহন দিয়ে বিল থেকে ধান কেটে সহজেই কৃষক বাড়ি কিংবা গোলায় তুলতে পারছেন কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই।

খাল খননের উদ্যোক্তা চাষী রসিদুল বণিক বার্তাকে জানান, খালটি খনন করায় বিলের মাটি সোনায় রূপান্তর হয়েছে। আগে যেখানে আমরা বছরে একবার ধান চাষ করতে পারতাম, এখন সেখানে তিনবার চাষাবাদ করতে পারছি। এক ফসল চাষ করে একরপ্রতি দাম পেতাম ৫০-৬০ হাজার টাকা। এখন তিনটি ফসল চাষ করে প্রায় দেড় লাখ টাকা পাচ্ছি। আগে ধান কেটে মাথায় করে প্রায় আধা মাইল হাঁটতে হতো। এখন ট্রলিতে বহন করে মজুরি খরচ কম লাগছে। এছাড়া আগে গরু দিয়ে হাল দিয়ে চাষ করতে হতো এখন চাইলেই ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করতে পারছেন কৃষক।

খালের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা চাষী রহিম বলেন, এসব জমিতে সরিষা আবাদ করা যাবে কোনো দিন ভাবিনি। এবার চাষ করেছি। আশা করছি ভালো ফলন পাব।

বিএডিসি সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর বগুড়া, দিনাজপুর জেলা ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খালটি খনন করা হয়। প্রায় ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ কিলোমিটার খালটি খনন করা হয়। খালটি খনন করার সময় নানামুখী সমস্যায় পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে খালটির বেশির ভাগ জায়গা ব্যক্তিমালিকানার ওপর হওয়ায় কিছু চাষী তাদের জমি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

বিষয়টির সমাধানে এগিয়ে আসেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেব নাথ। তিনি চাষীদের খালের উপকারিতার কথা তুলে ধরেন। একপর্যায়ে চাষীরা জমি দিতে আগ্রহী হন। সঞ্জয় দেবনাথ বণিক বার্তাকে বলেন, প্রথমে কয়েকজন চাষী আমার কাছে খাল খননের প্রস্তাব দেন। সরেজমিন গিয়ে বুঝতে পারি খালটির গুরুত্ব। এর পরই আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। একপর্যায়ে প্রকল্প দিয়ে খালটি খনন করা হয়। 

কয়েকজন জমিদাতার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আমরা আগে ভেবেছিলাম জমি নষ্ট হবে। কিন্তু এখন সব কৃষকই লাভবান হচ্ছেন। একটু ক্ষতি হলেও সবাই খুশি।

তবে কিছু সমস্যার কথাও তুলে ধরেছেন চাষীরা। তারা জানান, খালটি যেভাবে খনন করা হয়েছে তা বেশি দিন টিকবে না। বর্ষায় দুই পাড়ের মাটি খালেই পড়ে যাচ্ছে। অবস্থা চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে খালটি ভরাট হয়ে যাবে।

বিষয়ে সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, সমস্যা সমাধানে কৃষকদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদের সমবায় ভিত্তিতে নিজেদেরই রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন