কুয়েট শিক্ষক সেলিমের পরিবারে ক্ষোভ-হতাশা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, খুলনা

খুলনা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবার মামলা করতে গেলেও পুলিশ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে খানজাহান আলী থানার ওসি প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, মামলা না নেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। অধ্যাপক সেলিমের বাবার লিখিত অভিযোগ তারা পেয়েছেন। তাতে বেশ কয়েকজন ছাত্রের নাম রয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ওসি প্রবীর বলেন, গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায় অধ্যাপক সেলিমের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। কিন্তু ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি।

সেলিমের বাবা মো. শুকুর আলী মোল্লা ভগ্নিপতি আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করে বলেন, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় মামলার জন্য খুলনার খানজাহান আলী থানায় যান তারা।

সেখানে দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর ওসি থানায় আসেন এবং কাগজপত্রে লেখায় কিছু ত্রুটি রয়েছে বলে তাদের জানান। সংশোধন করে বিকালে তারা আবার থানায় গেলে ওসি তখন মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর তারা লিখিত অভিযোগ রিসিভ করে রাখার অনুরোধ জানান। কিন্তু পুলিশ রিসিভ করে কোনো কপি তাদের দেয়নি। পরে তারা মামলার এজাহার থানায় রেখে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাঁশগ্রামে নিজ বাড়িতে ফিরে যান।

অধ্যাপক সেলিমের মৃত্যুর ৫৬ দিন পর কেন মামলার উদ্যোগএমন প্রশ্নে তার বাবা শুকুর আলী বলেন, সেলিমের মৃত্যু কীভাবে এবং কেন হয়েছে, তা বিস্তারিত জানতে তাদের সময় লেগেছে। এছাড়া তিনি অসুস্থ ছিলেন। সে কারণে মামলা করতে খুলনায় আসতে দেরি হয়েছে। মামলার আবেদনে তিনি কুয়েটের ৪৪ ছাত্রের নাম উল্লেখ করেছেন।

এদিকে অধ্যাপক সেলিমের মৃত্যুর পর কুয়েট শিক্ষক সমিতি সেলিমের পাওনা টাকা দ্রুত পরিশোধ এবং তার পরিবারকে অতিরিক্ত কোটি টাকা প্রদান, তার স্ত্রী সাবিনা খাতুনের শিক্ষাগতযোগ্যতা অনুযায়ী কুয়েটে স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা এবং মৃত্যুর ঘটনায় বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরুর জন্য কুয়েট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও ব্যাপারে আশ্বস্ত করে।

কিন্তু অধ্যাপক সেলিমের স্ত্রী কুয়েটে চাকরির জন্য আবেদন করলেও তা ঝুলে আছে। পাওনা ক্ষতিপূরণের কোনো টাকা তারা পাননি। এসব নিয়েই ক্ষোভ-হতাশা তাদের।

সাবিনা বলেন, তিনি তার যোগ্যতা অনুযায়ী কুয়েটে একটা চাকরির জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আশ্বাস দিলেও এখনো চাকরি মেলেনি।

তিনি বলেন, যদি চাকরি না হয় তাহলে তার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস আনিকার () লেখাপড়া সংসার কীভাবে চালাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কুয়েট কর্তৃপক্ষ কোনো পাওনা এবং ক্ষতিপূরণ দেয়নি বলেও জানান সাবিনা।

ব্যাপারে কুয়েটের জনসংযোগ তথ্য শাখার মুখপাত্র রবিউল ইসলাম সোহাগ বলেন, অধ্যাপক সেলিমের স্ত্রীর চাকরির আবেদন কুয়েট কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন এবং তার পাওনা পরিশোধের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন।

গত বছরের ৩০ নভেম্বর কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী দেখা করে আসার পর ক্যাম্পাসের কাছে ভাড়া বাসায় ফিরে মারা যান কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক সেলিম হোসেন (৩৮)

অভিযোগ ওঠে, সেজানসহ তারা অধ্যাপক সেলিমকে লাঞ্ছিত করেছেন, যা তাকে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এবং অধ্যাপক সেলিমের পরিবার এটিকে হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করলেও সেজান অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন