যেমন ছিল ভোটের দিনে এফডিসি...

মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয় সকাল ৯টায়। তার এক-দেড় ঘণ্টা আগে থেকেই বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের (বিএফডিসি) সামনে বাড়তে থাকে উত্সুক জনতার ভিড়। ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে অর্ধশতাধিক পুলিশ। তখন এক-দুইটা গাড়ি ঢুকছিল এফডিসিতে। মানুষের চাপের দরুন খুব সহজে ঢোকা যাচ্ছিল না এফডিসিতে। দুই প্যানেলের বেশির ভাগ প্রার্থী সকাল সকাল চলে আসেন বাংলা চলচ্চিত্রের আঁতুড়ঘরে। সকাল ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। একে একে আসতে থাকেন শিল্পীরা। এবার ভোটার তালিকাভুক্ত সাংবাদিক ছাড়া আর কারো প্রবেশের সুযোগ ছিল না। ফলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এফডিসি হয়ে ওঠে সাংবাদিক-শিল্পীদের মিলনমেলা। ভোট দেয়ার পাশাপাশি সহশিল্পীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় চলে সারাদিন। বরেণ্য অভিনেতা আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন চলছে বলে শিল্পীরা ভোটে জেতার জন্য নানা কথা বলছেন। তবে নির্বাচন শেষ হয়ে গেলেই এসব কাদা ছোড়াছুড়ি আর থাকবে না। এটাই শিল্পীদের বৈশিষ্ট্য। সবাই মিলেমিশে কাজ করবে। ভোটের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনে যারা হেরে যাবেন, তাদের কাছে প্রত্যাশা বেশি।

দুপুরে একে-অন্যকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন দুই সভাপতি প্রার্থী ইলিয়াস কাঞ্চন মিশা সওদাগর। সময় গণমাধ্যমকে উদ্দেশ করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ভোট কীভাবে করতে হয়, প্রার্থীদের আচরণ কেমন হবে তা আমাদের দুই সভাপতি প্রার্থীর আচরণই বলে দিচ্ছে। নির্বাচনে সাধারণত একজন আরেকজনকে ধাওয়া করে; কিন্তু আমরা শিল্পী। আমাদের মধ্যে এসব নেই। সুষ্ঠুভাবে ভোট হচ্ছে এটাই শিল্পীদের পরিচয় দেয়। মিশা সওদাগর বলেন, কাঞ্চন ভাইয়ের সঙ্গে নির্বাচন করতে পেরে আমি সম্মানিত। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ, ভালো অভিনেতা। তবে আমি জয়ের ব্যাপারে ৬০ ভাগ আশাবাদী। মিশা ৬০ ভাগ আশাবাদী বলার পরিপ্রেক্ষিতে কাঞ্চন হাসিমুখে বলেন, শিল্পীরা সবাই খুব ভালো অভিনয় করে। যারা ভালো অভিনয় করেন তাদের ব্যাপারে আগেই কিছু বলতে চাই না। আমি ভোটের ফলাফলে বিশ্বাসী। ভোট দেয়ার পর চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ভোট নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি কাম্য নয়। কারণ এটা আমাদের পরিবার। পরিবারের কথা বাইরের লোকের সামনে আসুক, এটা চাই না। ঘরের কথা পরে কেন জানবে। অপু আরো বলেন, এফডিসিতে প্রবেশ করে খুব শান্তি পেয়েছি। শুধু শিল্পী আর সাংবাদিক ভাইবোনেরা আছেন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। আরামে ভোট দিয়েছি। এটা কোনো কাটাকাটি বা মারামারির নির্বাচন নয়। আমার মনে হলো মিলনমেলায় এসেছি। অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল সহসভাপতি পদে লড়ছেন মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে। ভোট দিয়ে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনের পরিবেশ বেশ সুন্দর। আরাম পাচ্ছি। বাইরের লোক নেই। শিল্পীরা ধীরে ধীরে আসতে শুরু করেছেন সকাল থেকেই। শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ চলছে। আমি চলচ্চিত্রের মানুষের জন্য সবসময় কাজ করেছি। আগামীতেও করব। সেই কাজটি আরো সুন্দরভাবে করার জন্যই নির্বাচন করা। মৌসুমীও নির্বাচন করছেন মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে। তিনি বলেন, খুব সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হচ্ছে। এর আগে এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখিনি। অনেক দিন পর একটা উৎসবমুখর পরিবেশ দেখতে পাচ্ছি এফডিসিতে। জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। আশা করছি, আমাদের পুরো প্যানেল জয়লাভ করবে। রেজাল্ট যাই হোক মেনে নেব।

দুপুর ১২টায় ভোট দিতে আসেন অভিনেতা জাহিদ হাসান। সময় কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের প্রার্থী জাহিদ হাসানের কাছে ভোট চাইতে ছুটে যান ফেরদৌস। প্রায় মিনিট আলাপ করে নিজের জন্য ভোট চান। সেই সঙ্গে নিজের প্যানেলের জন্যও ভোট কামনা করে ভালোবাসা চাইলেন ফেরদৌস।

এক সময়ের জনপ্রিয় নায়ক শাকিল খানও কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল থেকে প্রার্থী হয়েছেন। এতদিন পর নির্বাচনে আসা প্রসঙ্গে শাকিল বলেন, সত্যিকার অর্থে এবার শিল্পী সমিতির নির্বাচন করার ইচ্ছা ছিল না। কাঞ্চন ভাই যখন আমাকে বললেন, শাকিল আমরা একটা সুন্দর প্যানেল করেছি। তুমি আমাদের সঙ্গে থাকতে পারো। পরে তার কথাতেই আমি নির্বাচনে এসেছি। তিনি বলেন, আমি জয়ী হওয়ার জন্য নির্বাচনে আসিনি। এসেছি সবার সমন্বয়ে যেন সুন্দর একটি নির্বাচন হয়, তা নিশ্চিত করতে। এখানে কোটি কোটি টাকার খেলা নেই।

চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী ভোট দিয়ে বের হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, যারাই ভোটে প্রার্থী হয়েছেন, সবাই আমাদের সিনিয়র, আপন মানুষ। ভোট দেয়ার সময় শিল্পীদের জন্য সত্যিকার অর্থে যারা কাজ করবেন, তাদের কথা মাথায় ছিল। বুবলীর বিশ্বাস, নির্বাচনে যেই জয়ী হোক না কেন, নির্বাচনের পর সবাই একত্রে কাজ করবেন। সব মিলিয়ে ভোট দেয়ার পর তার ভালোলাগা কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। দীঘি এবার প্রথম ভোট দিলেন। তার বাবা সুব্রত আছেন নির্বাচনের মাঠে। ভোটের আগে দীঘি বলেন, এতদিন আমি সবার কাছে বাবার জন্য ভোট চাইতাম। এবার নিজে ভোট দিচ্ছি। দারুণ অনুভূতি হচ্ছে। সবাইকে একসঙ্গে দেখে ভালো লাগছে। বলতে গেলে আমার জন্মই এফডিসিতে। সেই এফডিসি আজ উৎসবমুখর।

তবে সবার হাসি আনন্দের মাঝেও ছিল কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা। দুপুর ১২টার দিকে জায়েদ খানের সামনেই নিপুণ অভিযোগ করেন, জায়েদ খান ভোটারদের টাকা দিচ্ছে। তার গায়ের চাদরের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, জায়েদ খান চাদরের নিচ দিয়ে ভোটারদের টাকা দিচ্ছেন। আমি এখন জায়েদ খানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকব। আমিও এখানে দাঁড়িয়ে ভোট চাইব। সময় জায়েদ খান সাংবাদিকদের তার চাদর ঝেড়ে দেখান এবং অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি ভোটারদের সঙ্গে হাত মেলাই, বুক মেলাই। দেখলেই জড়িয়ে ধরি। এজন্য তারা আমাকে ভোট দেয়। ভোটারদের নিজ হাতে ব্যাজ পরিয়ে দিচ্ছিলাম। এটাকেই টাকা দিচ্ছি বলে অভিযোগ করল। আসলে পরাজয়ের ভয় থেকে এসব বলছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন