সিলিকন ভ্যালির বড় চমকের অপেক্ষা কবে শেষ হচ্ছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

বড় বড় আইডিয়া এবং প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য সিলিকন ভ্যালির খ্যাতি বিশ্বজোড়া। গত কয়েক দশকে একের পর এক চমক উপহার দিয়েছে সিলিকন ভ্যালি। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইন্টারনেট, গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিন, সোস্যাল মিডিয়ার মতো সর্বব্যাপী প্লাটফর্মের মতো বড় ধরনের উদ্ভাবন দেখাতে পারছে না তারা। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং স্বচালিত গাড়িকে সিলিকন ভ্যালির পরবর্তী বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হলেও তার বাস্তব রূপ সবার সামনে আসেনি।

২০১৯ সালে সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগল জানায়, তারা কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে বেশ বড় সফলতা পেয়েছেন। এটা অনেকটা প্রথম উড়োজাহাজ কিটি হকের উড্ডয়নের সঙ্গে তুলনা করেছেন তারা। গুগলের দাবি, কোয়ান্টাম কম্পিউটারটি মাত্র মিনিট ২০ সেকেন্ডে এমন হিসাব করতে সক্ষম, যা সাধারণ কম্পিউটার ১০ হাজার বছরে শেষ করতে পারবে না। কিন্তু ঘোষণার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও কোয়ান্টাম কম্পিউটার যে কিছু করতে পারে তার বাস্তব রূপ দেখা যাচ্ছে না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে মানুষের অপেক্ষা আরো দীর্ঘতর হতে যাচ্ছে। একই কথা সত্য স্বচালিত গাড়ি, উড়ন্ত গাড়ি, উন্নততর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে।

সিলিকন ভ্যালিতে পৃথিবী পাল্টে দেয়ার মতো আইডিয়ার দুষ্প্রাপ্যতা দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যে আইডিয়ার বরাতে আয় করছে তা এক দশকেরও বেশি পুরনো। যেমন আইফোন মোবাইল অ্যাপের আইডিয়া। প্রযুক্তি দুনিয়ার আইডিয়াবাজরা কি তাদের মোটিভেশন/মজো হারিয়ে ফেলেছেন?

অবশ্য প্রযুক্তি টাইকুনরা ভিন্ন জবাব দিচ্ছেন। তারা নতুন যে প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন, তা নতুন অ্যাপ তৈরি বা অন্য প্রকল্পের চেয়ে অনেক কঠিন। মহামারীর দুই বছরে আমরা দেখেছি কীভাবে হোম কম্পিউটার, ভিডিও কনফারেন্সিং সেবা, ওয়াই-ফাইয়ের মতো সেবায় বৈচিত্র্য এনেছে। এমনকি গবেষকরা সবচেয়ে দ্রুততর সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন, তাতে স্পষ্ট হয়েছে প্রযুক্তির উল্লম্ফন অব্যাহত রয়েছে। 

কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মতো প্রযুক্তির পরবর্তী বড় প্রকল্পকে আরো সময় দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। দীর্ঘদিন হোয়াইট হাউজের কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রচেষ্টার নেতৃত্বে থাকা জ্যাক টেইলর বলেন, কোয়ান্টাম কম্পিউটার অতীতের অন্য যেকোনো প্রকল্পের চেয়ে সবচেয়ে কঠিন কাজ। বর্তমানে কোয়ান্টাম স্টার্টআপ রিভারলেনের চিফ সায়েন্স অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা টেইলর বলেন, প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াই করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রকল্পকে এগোতে হচ্ছে। গত কয়েক দশকের মধ্যে প্রযুক্তি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় উদ্ভাবন মাইক্রোচিপ, ইন্টারনেট, মাউসচালিত কম্পিউটার, স্মার্টফোন কিন্তু পদার্থবিদ্যার নীতিকে উড়িয়ে দিচ্ছে না।

সিলিকন ভ্যালির ইতিহাস বিশেষজ্ঞ ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের অধ্যাপক মার্গারেট মারা বলেন, হার্ডওয়্যার সফটওয়্যার অবকাঠামো যদি না থাকত তাহলে ভাবুন মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাব কেমন হতো। মোবাইল ক্লাউড কম্পিউটিং অসংখ্য ব্যবসার নতুন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করেছে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মতো অবশ্য বড় চ্যালেঞ্জের মুখে নেই স্বচালিত গাড়ি এআই প্রকল্প। তবে কীভাবে জুতসই কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করা যায়, তা নিয়ে গবেষকরা যেমন মাথা কুটে মরছেন, তেমনি কোন মডেলের স্বচালিত গাড়ি নিরাপদে চালানো যাবে তা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছেন। মানবমস্তিষ্কের বিকল্প হিসেবে কাজ করার মতো এআই উদ্ভাবনেও একই চ্যালেঞ্জ দেখছেন গবেষকরা। এমনকি অগমেন্টেড রিয়ালিটির (এআর) আইগ্লাস প্রযুক্তি যে সহজ কিছু না, এমনটা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

মেটার ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু বসওয়ার্থ বলেন, হালকা-পাতলা এআর আইগ্লাস তৈরির বিষয়টি যেন ১৯৭০-এর দশকে মাউসচালিত ব্যক্তিগত কম্পিউটার (পিসি) নিয়ে আসার মতো চ্যালেঞ্জিং বিষয়। সম্প্রতি সবচেয়ে শক্তিশালী কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে বেশ অগ্রগতির কথা জানিয়েছে মেটা। এনভিডিয়ার হাজারো প্রসেসর দিয়ে তৈরি হচ্ছে মেটার ওই কোয়ান্টাম কম্পিউটার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েক বছরে ফেসবুক, গুগল বা অন্যান্য কোম্পানি প্রযুক্তিতে যে পরিবর্তন এনেছে, তার বড় অংশ জুড়ে রয়েছে সফটওয়্যার। কোয়ান্টাম কম্পিউটার, স্বচালিত গাড়ি এআইয়ে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে হার্ডওয়্যারে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। খানিক সময় নিলেও এক্ষেত্রে শিগগিরই সিলিকন ভ্যালি সফলতার পরিচয় দেবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।   

-নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন