ইউক্রেন সংকটে রেকর্ড উচ্চতায় কয়লার বৈশ্বিক দাম

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইউক্রেনে চলমান অস্থিরতার কারণে কয়লার বৈশ্বিক দাম সর্বোচ্চ পরিমাণ বেড়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার বৈরিতার কারণে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের আশঙ্কায় এমনটা হয়েছে। পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ক্রেতারা জীবাশ্ম জ্বালানি সংগ্রহের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। খবর রয়টার্স।

নিউক্যাসল কয়েল ইনডেক্স বাজার আদর্শ অনুসারে কয়লার দাম চলতি মাসে এক-তৃতীয়াংশের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি টন ২৬২ ডলার। ইন্দোনেশিয়া কর্তৃক মাসব্যাপী কয়লা রফতানি নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ইউক্রেনে যেকোনো ধরনের রুশ সামরিক আগ্রাসন দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা কোনো ধরনের সামরিক আগ্রাসনের ফলে রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। ইউরোপীয় অঞ্চলে মোট প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদার ৩৫ শতাংশ পূরণ করে রাশিয়া। অন্যদিকে গত গ্রীষ্ম থেকে গ্যাস সংকটের দরুন স্থানীয় বাজারে জ্বালানি পণ্যটির দাম বছরের শেষ দিকে সর্বোচ্চ পরিমাণ স্পর্শ করেছে।

কোনো ধরনের জ্বালানি সংকট মোকাবেলাসহ নানাবিধ দুশ্চিন্তার মধ্যেই ইউরোপীয় ক্রেতারা তাদের কয়লা আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ার কয়লা আমদানি নিষেধাজ্ঞা থেকে এখনই উত্তরণের কোনো দৃশ্য দেখা যাচ্ছে না আন্তর্জাতিক বাজারে। ফলে চাহিদার শীর্ষে থাকা শীতকালে পর্যাপ্ত কয়লার সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ভারতীয় কয়লা বাজার কয়লাশাস্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা পুনিত গুপ্তা বলেন, সামনের দিনগুলোয় স্পট কার্গো অনেকটা দুর্লভ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় অঞ্চলে ইন্দোনেশিয়ার রফতানি নিষেধাজ্ঞা গ্যাসের দামের কারণে কয়লার দামও বাড়তে শুরু করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইউরোপে কয়লার ব্যবহার ব্যাপক হারে কমতে শুরু করেছে। ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের তথ্য অনুসারে২০২০ সালে কয়লার বৈশ্বিক ব্যবহারে ইউরোপীয় ভোক্তাদের দখল ছিল মাত্র দশমিক শতাংশ। তবে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে অঞ্চলটির ক্রেতারা ব্যাপক হারে কয়লার মজুদ বাড়িয়ে চলছে।

জলবায়ু হুমকি মোকাবেলায় ইউরোপের অনেক দেশই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দিলেও কিছু দেশ জরুরি সময়ের জন্য এগুলো চালু রেখেছে। আবার অনেক দেশ গ্যাসের উচ্চমূল্যের কারণে কয়লা ব্যবহার চালু রেখেছে।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক পণ্যের তথ্য বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কেপলার জানায় জানুয়ারিতে ইউরোপের তাপ কয়লার আমদানির পরিমাণ দাঁড়াবে মোট ৫৫ লাখ ৮০ হাজার টন, যা ২০১৯ সালের নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ মাসিক পরিমাণ। একই সঙ্গে ২০২১ সালের মাসিক গড় পরিমাণের তুলনায় ১০ লাখ টন বেশি।

ইউরোপীয় অঞ্চলে কয়লার এমন ব্যবহার বৃদ্ধির চিত্র জ্বালানি পণ্যটির দাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। গত অক্টোবরে চীন ভারতের কয়লার সংকট পণ্যটির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছিল। অন্যদিকে ইউরোপে কয়লার ব্যবহার বৃদ্ধির চিত্র পণ্যটির দ্বিতীয় শীর্ষ ভোক্তা ভারতকে প্রভাবিত করতে পারে। সামনের সপ্তাহগুলোয় সরবরাহ ঘাটতির কারণে ধাতব কয়লা সংগ্রহে ভারতকে উচ্চমূল্য পরিশোধ করতে হতে পারে বলে জানান কোমিন ইন্ডিয়া রিসোর্স প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজেন্দ্র সিং। তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়ার কয়লা রফতানি নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ইউক্রেন-রাশিয়ার ভৌগোলিক ইস্যু রসদ সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরো কঠিন করে তুলবে।

শীর্ষ কয়লা ব্যবহারকারী দেশ চীনের প্রায় ৯০ শতাংশ চাহিদা মেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। তবু দেশটির ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার সরবরাহ শৃঙ্খল নিয়ে চিন্তিত। মূলত দেশটির ৬০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কয়লাভিত্তিক হওয়ায় যেকোনো সংকটে তা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ইউক্রেন-রাশিয়ার সংকটের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞাও আমদানিকারকদের উদ্বেগের মধ্যে রেখেছে। ভারতের শ্রী সিমেন্টের যুগ্ম-প্রেসিডেন্ট কিরিট সি গান্ধি বলেন, -১০ দিনের মধ্যে রফতানি নিষেধাজ্ঞা শিথিল না হলে দাম আরো বাড়বে। ভোক্তারা আর অপেক্ষা করতে পারবে না, কারণ এখনই কেনার সর্বোচ্চ মৌসুম।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন