দুই বছরে মেক্সিকোর প্রবাসী আয়ে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত ছিল। গত বছরের হিসাব যোগ করা হলে প্রথমবারের মতো উত্তর আমেরিকার দেশটির প্রবাসী আয় ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এর মাধ্যমে এটি বৈদেশিক মুদ্রার উৎস হিসেবে অন্যান্য খাতকে ছাড়িয়ে যাবে। তবে প্রবাসী আয়ের পরিসংখ্যান মেক্সিকোর সরকারকে সন্তুষ্ট করলেও প্রশ্ন উঠেছে মেক্সিকানদের কি সবসময়ই তাহলে দেশত্যাগ করতে হবে? পাশাপাশি এ অর্থপ্রবাহ কি টেকসই না মহামারীর কারণে মার্কিন সরকার প্রদত্ত আর্থিক সহযোগিতার সাময়িক উল্লম্ফন মাত্র? খবর এপি।
মেক্সিকোর বেশকিছু গ্রামীণ অঞ্চলের প্রতিটি দোকান, ব্যবসা ও পরিবার প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভরশীল। এক দশকে দেশটির জিডিপিতে প্রবাসী আয়ের অবদান দ্বিগুণ হয়েছে। সরকারি তথ্য মোতাবেক, ২০১০ সালে জিডিপিতে প্রবাসী আয়ের হার ছিল ২ শতাংশ। ২০২০ সালে তা বেড়ে ৩ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হয়। এক দশকে প্রবাসী আয় থেকে মেক্সিকোর পরিবারগুলোর আয় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
গত বছরের প্রথম ১১ মাসেই প্রবাসী আয় প্রায় ২৭ শতাংশ বাড়ে। বর্তমানে ভারত ও চীনের পর সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় করা দেশ হিসেবে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মেক্সিকো। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট প্রবাসী আয়ের ৬ দশমিক ১ শতাংশ পূরণ করে দেশটি। কভিড-১৯ মহামারী প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রবাসী আয় প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায় দেশটিতে। মহামারীর ফলে ২০২০ সালে মেক্সিকোর জিডিপি সাড়ে ৮ শতাংশ সংকোচন হয়। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ফলে গত বছর তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত ৪ দশমিক ৭ শতাংশ ক্ষতিপূরণ হওয়া সত্ত্বেও বছরের শেষ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধিতে শ্লথগতি দেখা দেয়। এদিকে বাড়ে মূল্যস্ফীতির হারও।
মেক্সিকোর সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার এডুকেশনের সামাজিক নৃবিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক অগাস্টিন এস্কোবার বলেন, কোনো পরিবার অসুস্থ বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারা বেশি প্রবাসী আয় পায়। কারণ তারা এ বিষয়ে আর্থিক সাহায্য চায়। আমার মতে, এটাই গত বছর হয়েছিল। প্রশ্ন হলো, ভবিষ্যতে এটা কতদিন ব্যাহত থাকবে?
মার্কিন ফেডারেল ব্যাংকের লিবার্টি স্ট্রিট ইকোনমিকস ব্লগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে এপ্রিল-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মহামারীতে কেয়ারস অ্যাক্টের অধীনে আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার আর্থিক সহযোগিতা পায় মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা ও ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে জন্মগ্রহণকারী যুক্তরাষ্ট্রের আবাসিকরা।
কোমাচুয়েনের স্থানীয়রা জানিয়েছে, শিশুদের পড়াশোনা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠায় প্রবাসী আয়ের অর্থ ব্যয় হয়। তবে ফেডারেল ব্যাংকের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রবাসী আয়ের অধিকাংশ অর্থ ব্যয় হয় খাদ্য, ওষুধ ও বাসস্থানের নিত্যনৈমিত্তিক চাহিদায়।
এদিকে মেক্সিকোর সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় যাচ্ছে গুয়ানোয়াটো, জাকাটেকাস, জালিসকো ও মিচোয়াকানসহ দেশের সহিংসতাপূর্ণ রাজ্যগুলোয়। এ বিষয়ে এস্কোবার বলেন, দেশান্তর ও অপরাধ কখনো কখনো সহাবস্থানে থাকে। বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় পেয়ে অনেকে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। এতে মানুষের মধ্যে আবার দেশে থাকার ভয় জাগে।
এস্কোবার বলেন, মিচোয়াকানের পরিবারগুলো রেমিট্যান্সের বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করে। বাড়ি থেকে দূরে কোনো ব্যাংকের শাখা থেকে তারা রেমিট্যান্সের অর্থ তোলে। অপহরণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কাতেই এমনটা করে পরিবারগুলো।