৬০০ দিনের বেশি বন্ধ, স্কুলে ফিরতে চায় দিল্লির শিক্ষার্থীরা

বণিক বার্তা অনলাইন

গত দুই বছর ধরে চলমান নভেল করোনাভাইরাসজনিত মহামারীর প্রথম থেকেই বেশ বিপর্যয়ের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লিকে। এ বছর করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের ছোবলে ফের নাকানি চুবানি খেয়েছে শহরটি। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অসংখ্যবার জারি করা হয়েছে লকডাউন, শাটডাউন বা সাপ্তাহিক কারফিউ। ২০২০ সালের মার্চে শহরটিতে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলে মার্চেই স্কুল বন্ধ ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। শহরে আক্রান্তের সংখ্যা কমে এলে গতকাল বিধিনিষেধ শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি প্রশাসন। কিন্তু স্কুল বন্ধ ঘোষণার ৬০০ দিনের বেশি পার হয়ে গেলেও স্কুলে ফিরতে পারেনি শহরটির ৪০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

ধরিনি মথুর নামে এক অভিভাবক সিএনএনকে জানান, তার ছেলে যখন অনলাইলে প্রি-স্কুল শুরু করে তখন সে মাত্র চার বছরে পা দিয়েছে। প্রায় দুই বছর পর এখনো সে কম্পিউটারের সামনে বসে শিক্ষক-সহপাঠীদের সংস্পর্শ ছাড়া ভার্চুয়ালি শেখার চেষ্টা করছে। স্কুল বন্ধ থাকার তার সন্তানের শিক্ষার ওপর বাজে প্রভাব পড়ছে জানান মথুর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এত লম্বা সময় ধরে স্কুল বন্ধ রাখার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দিল্লির মতো প্রকট বৈষম্যপূর্ণ শহরের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর ওপর। এই বিলম্বিত শিক্ষাগ্রহণের ফলে দারিদ্র বৃদ্ধি, আয় ক্ষমতা কমে যাওয়া ও ফলস্বরূপ লাখ লাখ মানুষকে মানসিক ও শারীরিক চাপ সহ্য করতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। শুধু দিল্লিতেই নিম্নবিত্ত পরিবারের কয়েক লাখ শিশু আছে যারা ন্যূনতম স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে বাস করার সুযোগ পায় না, যাদের ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন কেনার সামর্থ নেই, সব মিলিয়ে তাদের হয়ত শিক্ষার সুযোগ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হতে হবে।

গত বছরের আগস্টে স্কুল খুলে দেয়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানান মথুর। প্রায় ছয় মাস পর গতকাল বৃহস্পতিবার স্কুল খোলার সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনায় বসেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সভায় মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বিধিনিষেধ শিথিল করার প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ও দিল্লি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান অনিল বাইজালের কাছে। বিধিনিষেধ শিথিল করে অফিস-আদালত খোলার ব্যাপারে কর্মকর্তাদের সায় মিললেও, স্কুল খোলার ব্যাপারে সায় দেননি কেউ।

গত বুধবার দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মনিশ সিসোদিয়া টুইটারে লেখেন, নিরাপদ নয় বলে আমরা স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে কিন্তু এখন অতিরিক্ত সতর্কতা শিশুদের ক্ষতি করছে। আমরা যদি এখন স্কুল না খুলি, শিশুদের একটা প্রজন্ম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়বে।

সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে স্কুল বন্ধ রাখা দেশের তালিকায় ভারতের অবস্থান দ্বিতীয়। ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৮২ সপ্তাহ বা ৫৭৪ দিন বন্ধ ছিল ভারতের স্কুলগুলো। তবে কভিড নীতিমালা রাজ্যভেদে ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় স্কুলগুলো পুরো ভারতব্যাপী এক যোগে বন্ধ ছিল না। ৮৩ সপ্তাহ স্কুল বন্ধ রেখে প্রথম অবস্থানে আছে উগান্ডা।

মহামারীর প্রথম বছর মার্চে বন্ধ ঘোষণার পর পুরো বছর একটানা বন্ধ ছিল দিল্লির স্কুলগুলো। ২০২১ সালের প্রথমদিকে সংক্ষিপ্ত পরিসরে খোলা হলেও এপ্রিলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়লে স্কুলগুলো ফের বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় দিল্লি প্রশাসন। সংক্রমণ কমে এলে নভম্বরে খুলে দেয়া হয় কিন্তু মারাত্মক বায়ু দূষণের কারণে ডিসেম্বর ফের স্কুল বন্ধের ঘোষণা আসে। এরপর ওমিক্রণ ঢেউয়ের কবলে পড়ে আর খোলা হয়নি স্কুলগুলো।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন