মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিইআরসি

গ্যাসের প্রস্তাব নিষ্পত্তির আগে বিদ্যুৎ নিয়ে আলোচনা নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদ্যুতের মূল্য বাড়াতে তত্পর হয়ে উঠেছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। নিয়ে কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) প্রস্তাবও পাঠিয়েছে। তবে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি-সংক্রান্ত বিষয়টি নিষ্পত্তির আগে এখনই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরুর কথা ভাবছে না কমিশন। অন্যদিকে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি-সংক্রান্ত প্রথম গণশুনানি আয়োজন করতেও মার্চের প্রথম সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।

চলতি মাসের শুরুতে বিইআরসিতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠিয়েছিল বিতরণ কোম্পানি। কিন্তু সে প্রস্তাব বিধিসম্মত না হওয়ায় ফেরত পাঠায় কমিশন। পরিস্থিতির মধ্যেই গত সপ্তাহে বিদ্যুতের পাইকারি মূল্যহার বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) অসম্পূর্ণ থাকায় সেটিও ফেরত পাঠিয়েছে কমিশন।

নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্রে জানা গিয়েছে, মুহূর্তে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর বিইআরসিতে পাঠানো প্রস্তাব খতিয়ে দেখতে কারিগরি কমিটি গঠন নিয়ে কাজ করছে কমিশন। কমিটি গঠন হলে গ্যাস কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব মূল্যায়নের কাজ শুরু হবে। বিষয়ে কমিশনের ভাষ্য হলো গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবটি বিইআরসি আইন প্রবিধানমালা অনুযায়ী হতে হবে। সেখানে মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ থাকতে পারে, আবার নাও পারে।

বিষয়ে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, গ্যাসের মূল্যহারের বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যুতের মূল্যহার নিয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। কারণ জ্বালানির মূল্যহারের ওপর নির্ভর করছে বিদ্যুতের মূল্যহার। ফলে একই সঙ্গে দুটি বিষয়ের কোনো প্রাসঙ্গিকতা দেখছে না কমিশন।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের সপক্ষে প্রায় একই যুক্তি দেখানো হয়েছে। এসব প্রস্তাবে গ্যাসের খুচরা মূল্য ১১৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। এতে রান্নার জন্য দুই চুলার সংযোগে ৯৭৫ থেকে বাড়িয়ে হাজার ১০০ টাকা এবং এক চুলার ব্যয় ৯২৫ থেকে বাড়িয়ে হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। একই হারে আবাসিকের প্রিপেইড মিটার, শিল্প, সিএনজি, বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ গ্যাসের দামও বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় বিতরণ কোম্পানিগুলো।

বিইআরসি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দফায় মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ার পর গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো কমিশনে নতুন করে প্রস্তাব জমা দিয়েছে। সেখানে আগের প্রস্তাবের বেশকিছু বিষয় সংশোধন পরিমার্জন করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা থেকেও একটি প্রস্তাব কমিশনে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেখানেও বেশকিছু ত্রুটি থাকায় তা সংশোধন করে পুনরায় পাঠাতে বলা হয়েছে। তাদের প্রস্তাবটি পেলে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু হবে।

বিইআরসি সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল--ইলাহী চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, গ্যাস কোম্পানিগুলো মূল্যবৃদ্ধির নতুন করে যে প্রস্তাব জমা দিয়েছে, সেগুলোর বেশকিছু বিষয় তারা পরিমার্জন সংশোধন করেছে। এখন প্রস্তাবগুলো দেখা হবে এবং কমিশনের যে প্রক্রিয়া তা অনুসরণ করে কাজ শুরু করা হবে।

গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সাধারণত সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর তা মূল্যায়নের জন্য কমিশন একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে। সে কমিটি প্রস্তাবগুলো মূল্যায়ন পর্যালোচনা করে। এজন্য তারা দুই সপ্তাহের মতো সময় পান। তাদের চূড়ান্ত মূল্যায়নের পর কমিশন গণশুনানির দিন ধার্য করে।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে বিইআরসি কারিগরি কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে। কমিটি প্রস্তাব মূল্যায়নের জন্য সময় পাবে ১৫ দিন। সে হিসেবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ নাগাদ কমিটি গঠন করা হতে পারে। এরপর বিতরণ কোম্পানির প্রস্তাব মূল্যায়ন করতে ফেব্রুয়ারির পুরোটা সময় লেগে যেতে পারে। আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির জন্য গণশুনানির আয়োজন করা হবে।

বিষয়ে জানতে চাইলে বিইআরসি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল বণিক বার্তাকে বলেন, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব মূল্যায়নের জন্য একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির সদস্যরা বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব মূল্যায়ন করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবেন। তাদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে গণশুনানি হবে। সেখানে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব উত্থাপিত হবে। কারণগুলো যৌক্তিক কিনা তা খতিয়ে দেখবে কমিশন। এরপর বলা যাবে আসলে মূল্যবৃদ্ধি হবে কিনা।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির খবরে এরই মধ্যে নানা মহল থেকে প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলন করে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরাও সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য সরকার গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে।

এর আগে ২০১৯ সালের ৩০ জুন গ্যাসের গড় মূল্য ৩২ দশমিক শতাংশ বাড়ায় বিইআরসি। তাতে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম টাকা ৩৮ থেকে বাড়িয়ে টাকা ৮০ পয়সা করা হয়। আবাসিক গ্রাহকদের এক চুলার জন্য মাসে ৭৫০ টাকার পরিবর্তে ৯২৫ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকার পরিবর্তে ৯৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। গৃহস্থালিতে মিটারে গ্যাস বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের জন্য টাকা ১০ পয়সার পরিবর্তে ১২ টাকা ৬০ পয়সা করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন