নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তারের মধ্যে দেশে টানা দ্বিতীয়দিনের মতো ১৫ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। ঢাকার পর চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগেও সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার ৫২৭ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে আরো ১৭ জনের।
সরকারি হিসাবে দেশে এখন সক্রিয় কভিড রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৪৫। অর্থাৎ এ-সংখ্যক রোগী নিশ্চিতভাবে সংক্রমিত অবস্থায় রয়েছেন। আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার ৭৮৭। ১৯ জানুয়ারি ছিল ৫৯ হাজার ৮৫০ জন। সে অনুযায়ী, মাত্র এক সপ্তাহে সক্রিয় রোগী বেড়েছে ১৩৯ শতাংশের বেশি।
মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত সারা দেশে ৪৯ হাজার ২৭৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তার মধ্যে ৪৯ হাজার ৭৩টি পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আগের দিন সাড়ে ৪৯ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ হাজার ৩৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল, যা মহামারীর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ; সেই সঙ্গে ১৮ জনের মৃত্যুর খবর এসেছিল। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটের সময়, গত বছরের ২৮ জুলাই ১৬ হাজার ২৩০ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল, মহামারীর মধ্যে সেটাই সর্বোচ্চ।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৫২৪। তাদের মধ্যে ২৮ হাজার ২৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে নভেল করোনাভাইরাসে। ১২ জানুয়ারি শনাক্ত রোগীর মোট সংখ্যা ১৬ লাখের ঘরে পৌঁছেছিল। মাত্র ১৩ দিনে আরো এক লাখ রোগী শনাক্ত হওয়ায় মঙ্গলবার মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ লাখ ছাড়ায়। গত একদিনে দেশে সেরে উঠেছেন ১ হাজার ৫২ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৬০ হাজার ৬ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
ডেল্টা ধরনের ধাক্কা সামলে গত বছরের শেষদিকে বাংলাদেশের মহামারী পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল। ডিসেম্বরে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ঘোরাফেরা করছিল ২০০ থেকে ৩০০-এর ঘরে। শনাক্তের হার নেমে এসেছিল ২ শতাংশের নিচে। কিন্তু বিশ্বে নভেল করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক নতুন ধরণ ওমিক্রনের বিস্তার শুরুর পর জানুয়ারির শুরু থেকে বাংলাদেশেরও আবার দ্রুত উঠতে থাকে সংক্রমণের গ্রাফ।
জানুয়ারির প্রথম দিনও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪০০-এর নিচে, এখন তা ১৫ হাজারের বেশি থাকছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হারও থাকছে ৩০ শতাংশের ওপরে। গতকাল শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৬৪ শতাংশে। মহামারীর মধ্যে সার্বিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ। আর মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। গত বছরের ২৪ জুলাই শনাক্তের হার ছিল ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ২০২০ সালের ১২ জুলাই শনাক্তের হার ছিল ৩৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, যা এ মহামারীকালের রেকর্ড।
গত একদিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ৯ হাজার ৪৫৬ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা, যা মোট আক্রান্তের ৬০ দশমিক ৯০ শতাংশ। আগের দিন এ বিভাগে ১০ হাজার ৪৭৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল, যা ছিল দিনের মোট শনাক্তের ৬৫ শতাংশের বেশি। কয়েক মাস ধরেই দৈনিক শনাক্ত রোগীর একটি বড় অংশ থাকে ঢাকার। তবে সপ্তাহখানেক ধরে দেশের অন্যান্য জেলাতেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে একদিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আগের দিনের ২ হাজার ৩২৫ জন থেকে বেড়ে ২ হাজার ৪৪৪ জন হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে একদিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮৮২ জন থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৮৮ জন। অন্যান্য বিভাগেও রোগী বাড়ছে। গত একদিনে ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় ৮ হাজার ২৫৯ জন, ফরিদপুরে ১২৪, গাজীপুরে ২২৪, নারায়ণগঞ্জে ২০৪ এবং নরসিংদীতে ১৫২ জনের কভিড শনাক্ত হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ১৩ জন পুরুষ ও চারজন নারী। তাদের মধ্যে ১০ জন ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের চারজন, রাজশাহী বিভাগের এক, খুলনা বিভাগের এক এবং ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন একজন। তাদের মধ্যে ১১ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, তিনজনের ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, দুজনের ৪১ থেকে ৫০ বছর এবং একজনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।