শেষ মুহূর্তে করোনা শনাক্ত

দৈনিক যাত্রা বাতিল হচ্ছে পাঁচ শতাধিক বিদেশগামীর

মনজুরুল ইসলাম

২২ জানুয়ারি প্রবাসী জুমন আহমেদের দুবাইগামী ফ্লাইট ছিল। ফ্লাইটের আগে আরটিপিসিআর টেস্টে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট পান তিনি। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নিয়ম অনুযায়ী ফ্লাইটের ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরেই আরেকবার করোনা পরীক্ষার নমুনা দেন জুমন আহমেদ। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে এবারের রিপোর্টে কভিড-১৯ পজিটিভ হন তিনি। ফলে শেষ মুহূর্তে বাতিল হয় তার বিদেশ যাত্রা। বিমানবন্দর থেকে তাকে বলা হয়েছে টিকিট পরিবর্তন করে ১৪ দিন পর নতুন করে ফ্লাইট বুকিং দিতে। পাশাপাশি যাত্রার আগে আবারো করোনার আরটিপিসিআর পরীক্ষা করাতে হবে তাকে।

প্রায় একই ধরনের সমস্যায় পড়েছেন আরেক দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ ইব্রাহিম। ছুটি কাটাতে সম্প্রতি দেশে এসেছিলেন তিনি। এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ১৬ জানুয়ারি তার দুবাই ফেরার কথা ছিল। নিয়ম অনুযায়ী করোনা পরীক্ষার পর ফ্লাইটের আগের দিন (১৫ জানুয়ারি) পাওয়া রিপোর্টে কভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে চিহ্নিত হন তিনি। ফলে বাতিল হয় মোহাম্মদ ইব্রাহিমের বিদেশ যাত্রা। যদিও তার ভিসার মেয়াদ রয়েছে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। অবস্থায় চাকরিতে যোগ দেয়া নিয়ে মারাত্মক দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র বলছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে দিনে কমপক্ষে ১০ হাজার যাত্রী বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিচ্ছেন। যাত্রার ঘণ্টা আগে নমুনা দিয়ে শেষ মুহূর্তে কভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট আসায় প্রতিদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই ফিরে যেতে হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী শতাধিক কর্মীকে। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ছাড়া অন্যান্য দেশগামী যাত্রীদের ক্ষেত্রে যাত্রার ৪৮ থেকে ৭৪ ঘণ্টা আগে আরটিপিসিআর পরীক্ষা করতে হয়। তাদের মধ্যে যারা কভিড-১৯ পজিটিভ প্রতিবেদন পাচ্ছেন তারা বিমানবন্দরে আসছেন না। ফ্লাইট বাতিল করা এসব যাত্রীকে হিসাবে নিলে দৈনিক যাত্রা বাতিলের মুখে পড়ছেন পাঁচ শতাধিক বিদেশগামী যাত্রী।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ প্রসঙ্গে জানান, বিমানবন্দরে দৈনিক দুই হাজারের বেশি সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী যাত্রীর করোনা পরীক্ষা করা হয়। কারণ কেবল সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী যাত্রীদেরই ফ্লাইটের ঘণ্টা আগে করোনা পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যাত্রার ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে দেয়া যাত্রীদের নমুনার মধ্যে দৈনিক গড়ে ১০০ জন করোনা শনাক্ত হচ্ছেন। যারা তাদের নির্ধারিত ফ্লাইটে যেতে পারছেন না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা বলছে, কোনো বিদেশগামী যাত্রী করোনা আক্রান্ত হলে পরবর্তী সাতদিনের মধ্যে তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না। ২০২১ সালের জুনে জারি করা নির্দেশনায় আরো বলা হয়, সাতদিন পর শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ল্যাবে পুনরায় যাত্রী করোনা পরীক্ষা করবেন এবং তখন নেগেটিভ রিপোর্ট এলে দেশত্যাগ করতে পারবেন।

যাত্রার আগে কভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ায় ফ্লাইট বাতিল হওয়া বিদেশগামী প্রবাসী কর্মীদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অধিকাংশই কর্মক্ষেত্রে যোগ দেয়ার শেষ সময়ের দিকে ফ্লাইটের টিকিট কেনেন। যাতে ছুটি পাওয়া সর্বোচ্চ সময়টি দেশে থাকা যায়। অবস্থায় যাত্রার শেষ মুহূর্তে কভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ায় মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা। আবার দেশ ছাড়ার আগের এক সপ্তাহ বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করেন তারা, যা তাদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ফ্লাইট বাতিল হওয়া অধিকাংশ বিদেশগামী কর্মীই বলছেন তাদের মধ্যে কোনো উপসর্গ নেই। কারো কারো মধ্যে সামান্য দুর্বলতা ছিল। তাদের অভিযোগ, জ্বর, সর্দি, কাশি নেই, তবু করোনা পজিটিভ রিপোর্ট কীভাবে এল।

স্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধিকাংশ মানুষের ধারণা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বর, কাশি, সর্দির মতো উপসর্গ দেখা দেবে। কিন্তু এখন অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন, যাদের দেহে কোনো উপসর্গই দেখা দেয় না। সেক্ষেত্রে বিদেশগামী যাত্রীদের ফ্লাইটের কমপক্ষে সাতদিন আগে থেকে বেশ সতর্ক হতে হবে। বিদেশ যাওয়ার জন্য কেনাকাটা, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করা, এসব বন্ধ রাখতে হবে। অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাফেরা বন্ধ করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, সঠিক নিয়মে মাস্ক পরতে হবে। এমনকি বিমানবন্দরে আসার সময় অহেতুক বেশি আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে বিমানবন্দরে আসা ত্যাগ করতে হবে।

প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অতিসংক্রমণশীল ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ তীব্রতায় দেশে গত একদিনে আরো শনাক্ত হয়েছে ১৫ হাজার ৫২৭ জন। সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩১ শতাংশের বেশি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন