শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

অনশন ভাঙলেও উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন চলবে

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, সিলেট

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল গতকাল শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে অনশন ভেঙেছেন ২৮ শিক্ষার্থী। গতকাল শিক্ষাবিদ, লেখক বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক . মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুরোধে ১৬২ ঘণ্টার অনশন ভাঙেন তারা। তবে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, অনশন ভাঙলেও এক দফা দাবি আদায়ে তাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। দাবি আদায়ের ব্যাপারে তাদের আশ্বস্তও করেছেন . মুহম্মদ জাফর ইকবাল অধ্যাপক . ইয়াসমিন হক দম্পতি। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অর্থ জোগানোর অভিযোগে ঢাকা থেকে আটক বিশ্ববিদ্যালয়টির পাঁচ সাবেক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।

গতকাল ভোরে ক্যাম্পাসে পৌঁছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল দম্পতি। সকালে সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনশনরত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে নেয়া হয়। দুই শিক্ষককে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন কয়েকজন শিক্ষার্থী। যে দাবিতে তাদের অনশন, সেই উপাচার্য এখনো পদে বহাল। তাহলে তারা কীভাবে অনশন ভাঙবেন সে প্রশ্ন করেন শিক্ষার্থীরা। জবাবে মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাদের আশ্বস্ত করেন। পরে সকাল ১০টা ২১ মিনিটে শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান . জাফর ইকবাল।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে . মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, সরকারের উচ্চমহল থেকে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি এখানে এসেছি। আমাকে যারা কথা দিয়ে এখানে পাঠিয়েছেন তা যেন তারা রক্ষা করেন। আমার আর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কাজেই আমাকে যে কথা দিয়েছেন তা যদি রক্ষা করা না হয়, তাহলে কেবল ছাত্রদের সঙ্গে নয়, আমার দেশের প্রগতিশীল মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে বলে ধরে নেব।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানো শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন অধ্যাপক . মুহম্মদ জাফর ইকবাল অধ্যাপক . ইয়াসমিন হক। সাংবাদিকদের . জাফর ইকবাল বলেন, আমি যতটা চিন্তা করেছিলাম অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থা তার চেয়েও খারাপ। তাদের শরীরে স্যালাইনও পুশ করা যাচ্ছে না। বেশির ভাগই বসতে পারছে না। যে মানুষ অবস্থা দেখার পরও নিজের জায়গায় অনড় থাকে, তাকে আমি মানুষ বলতে চাই না। আমি তাকে দানব বলি।

সময় আন্দোলনে অর্থসহায়তাকারী সাবেক শিক্ষার্থীদের আটকের নিন্দা জানান শিক্ষক দম্পতি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কঠোর সমালোচনা করে অধ্যাপক . ইয়াসমিন হক বলেন, যখন পুলিশ হামলা করেছে, তখন শিক্ষকদের ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা ছিল। বিভিন্ন সময় আন্দোলনে আমরা সামনে ছিলাম, সামনে দাঁড়িয়ে আন্দোলন থামানো হয়েছে। পুলিশের সামনে দাঁড়ালে পুলিশ কিছুই করবে না, কারণ আমি একজন শিক্ষক। ওই ঘটনায় শিক্ষকরা প্রতিবাদ পর্যন্ত করেননি।

এরপর চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে কথা বলেন অনশন থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব। তিনি বলেন, আমরা জাফর ইকবাল স্যারের ওপর বিশ্বাস আস্থা রেখে অনশন থেকে সরে এসেছি। উনি আমাদের কথা দিয়েছেন আমাদের দাবিগুলো মেনে নেয়া হবে। আমাদের বিশ্বাস আছে। কিন্তু উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে তা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

অন্যদিকে আন্দোলনে অর্থসহায়তার অভিযোগে গ্রেফতার শাবিপ্রবির সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। গতকাল দুপুরে জালালাবাদ থানা পুলিশ হাবিবুর রহমান খান, রেজা নুর মুইন, এএফএম নাজমুল সাকিব, একেএম মারুফ হোসেন ফয়সল আহমেদকে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট--এর বিচারক মো. সুমন ভুইয়ার আদালতে সোপর্দ করে। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

লায়েক আহমদ নামের এক তাঁতী লীগ নেতার করা মামলায় ঢাকা থেকে আটক পাঁচজনকে গ্রেফতার দেখানো হয় বলে জানান সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্ল্যাহ তাহের।

১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন কয়েকশ ছাত্রী। ১৫ জানুয়ারি তাদের ওপর হামলা চালান একটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরদিন বিকালে শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। সময় পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে রাবার বুলেট ছোড়ে। সেদিন রাতেই অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। তবে নির্দেশ উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয় না ছাড়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

১৯ জানুয়ারি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। পরে তাদের সঙ্গে আরো চারজন যোগ দেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়, বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু কিছুটা সুস্থ হলেই তারা আবার এসে অনশনে যোগ দিয়েছেন। কয়েক দফায় সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করা হলেও তাতে রাজি হননি শিক্ষার্থীরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন