সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি

র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠতে সময় লাগবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) সাবেক বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা উঠতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কে আব্দুল মোমেন। গতকাল জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি-জামায়াত সরকারের লবিস্ট নিয়োগের প্রসঙ্গ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে বিবৃতি দেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে আমেরিকার সরকার র‍্যাবের এবং এর কতিপয় সাবেক বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কোনো ধরনের পূর্ব আলোচনা ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রসেস কালকেই হবে না, সময় লাগবে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা আমেরিকার সঙ্গে একাধিক মিটিংয়ের আয়োজন করেছি। আমরা যখনই তথ্যগুলো সঠিকভাবে তাদের কাছে পৌঁছাতে পারব, আমার বিশ্বাস র্যাবের মতো একটি অত্যন্ত ভালো প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিশ্চয়ই স্যাংকশন তুলে নেবেন।

কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে জানিয়ে বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা উঠতে সময় লাগবে। এজন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। সঠিক তথ্য তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া গেলে র্যাবের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে বলেও বিশ্বাস করেন মন্ত্রী।

অপপ্রচারের কারণে নিষেধাজ্ঞা এসেছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, র‍্যাবের বিরুদ্ধে কয়েক বছর ধরে সরকারবিরোধীরা লবিস্ট নিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে মিথ্যা অসত্য তথ্য সরবরাহ করে আসছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার কাছেও বিভিন্নভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে যে র‍্যাব কত খারাপ।

র‍্যাব দুর্নীতিমুক্ত হয়ে মানুষের সেবা করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত দক্ষ একটা বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমাদের কিছু লোকজন বিভিন্ন রকমের ভুল তথ্য পরিবেশন করে নিষেধাজ্ঞার পথ তৈরি করেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, র‍্যাব এমন কোনো বাজে কাজ করেনি যে তার জন্য তারা পৃথিবীতে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে বিবেচিত হবে। বরং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেই তাদের কাজ। র‍্যাবের কারণেই হলি আর্টিজানের পর থেকেই স্বয়ং আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তত্পরতা কমেছে।

আগামী মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সংলাপের কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি। এরপর অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব নিয়ে বৈঠক হবে। সব মিলিয়ে সঠিক তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে এবং নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে বলে  আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।

শান্তিরক্ষী বাহিনী থেকে র‍্যাবকে বাদ দিতে কিছু বেসরকারি সংস্থার লেখা চিঠির প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অংশ হিসেবেই এসব চিঠি দেয়া হচ্ছে। সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াত বিভিন্ন দেশ সংস্থার প্রধানসহ প্রায় ১৮টি কমিটির কাছে চিঠি দিয়েছে। তাদের নিয়োগকৃত লবিস্টরা বাংলাদেশকে সব রকম সাহায্য বন্ধ করতে বলেছে। এমনকি তারা রোহিঙ্গাদের বিষয়েও অপপ্রচার চালিয়েছে।

বিএনপি-জামায়াত যুক্তরাষ্ট্রে মোট আটটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে বলেও সংসদে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানান, ২০১৪ সালে জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য একটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে। এজন্য তারা দেড় লাখ ডলার ব্যয় করে। বিচার বন্ধে তারা আরেকটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য পিস অ্যান্ড জাস্টিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে লাখ ৩২ হাজার ডলার দিয়ে নিয়োগ করে। এসব তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইটেই দেয়া আছে বলে জানান তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করা বৈধ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ভারত, পাকিস্তান, কাতার সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে লবিস্ট নিয়োগ করে। লবিস্ট নিয়োগের উদ্দেশ্য কী সেটাই মুখ্য বিষয়। তিনি বলেন, দুঃখের বিষয় হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের নিয়োগ করা লবিস্টরা এমন সব বক্তব্য তুলে ধরেছে, যেগুলো জানলে দেশের মানুষ তাদের ধিক্কার দেবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন