দেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান করা ব্যবসায়ীদের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হয়। তবে বিনিয়োগ সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি এক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে দুর্নীতি ও অদক্ষ সরকারি আমলাতন্ত্র। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
‘বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ ২০২১: উদ্যোক্তা জরিপ ফলাফল’
শীর্ষক প্রতিবেদনটি গতকাল প্রকাশ করা হয়। রাজধানীর ধানমন্ডির সিপিডি কার্যালয় থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ফলাফল তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
জরিপের ফলাফল বলছে, দুর্নীতি, অদক্ষ আমলাতন্ত্র ও বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক, পরিবেশগত, ভূরাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রযুক্তিগত ঝুঁকি এবং অবৈধ লেনদেন ব্যবসার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করছে। আগামীতে ব্যবসার ক্ষেত্রে এসব আরো বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠবে।
ব্যবসায়ীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। গত বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত পরিচালিত এ জরিপে অংশগ্রহণ করেন ৭৩ জন। যেসব ব্যবসায়ীর মূলধন ১০ কোটি টাকার ওপরে, তারাই এ জরিপে অংশগ্রহণ করেন। এতে প্রতিষ্ঠান, পরিবেশ, অবকাঠামো, জনস্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষা, দক্ষতা, শ্রমবাজারের দক্ষতা এবং ব্যবসায় উদ্ভাবনসহ ১২টি বিষয়ে মতামত নেয়া হয়। এছাড়া ২০২০ সালের ব্যবসা সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসার পরিবেশের ওপর মূল্যায়ন জরিপ করা হয়।
জরিপের তথ্য বলছে, দেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে দুর্নীতি, ৬৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। এর পরই রয়েছে অদক্ষ সরকারি আমলাতন্ত্রের ভূমিকা ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা রয়েছে ৫৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এছাড়া ব্যবসার প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে দুর্বল অবকাঠামো ৪৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ, পলিসিগত সমস্যা ৩৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ, শ্রমিকের স্বাস্থ্য ৩৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ, উচ্চকর হার ৩৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ, কর ব্যবস্থাপনার জটিলতা ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ, শিক্ষিত কর্মীর অভাব ২৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
এগুলোর পাশাপাশি উদ্ভাবন সামর্থ্য না থাকা, শ্রমিকদের নৈতিকতার অভাব, অপরাধ ও চুরি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, মুদ্রাস্ফীতি ও শ্রম আইনের সীমাবদ্ধতার মতো বিষয়গুলো দেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরিতে ভূমিকা রাখছে।
তবে প্রতিষ্ঠানভেদে এসব সমস্যার ভিন্নতা রয়েছে বলে জানান সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বড় ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে এর হার ও তীব্রতা তুলনামূলক কম। তবে ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে এসব সমস্যা অনেক বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। এছাড়া মহামারী-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য তিন বছরের বেশি সময় প্রয়োজন। ব্যবসায়ীরা আগের অবস্থানে ফিরে এসেছেন বা দ্রুত আসবেন এমন ভাবার কোনো কারণ নেই।
সিপিডির জরিপ বলছে, অর্থনৈতিক খাতের জন্য শীর্ষ ঝুঁকির মধ্যে বৃহৎ অর্থনীতিতে ঋণ সংকট রয়েছে ২৬ শতাংশ, অবৈধ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তার ২৩ শতাংশ এবং বৃহৎ অর্থনৈতিক প্রকল্পে দুর্বল বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার অবদান ১৬ শতাংশ। এছাড়া এক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করছে জলবায়ুগত ব্যর্থতা, পরিবেশে মানবসৃষ্ট ক্ষতি, ভূরাজনৈতিক সমস্যা, সামাজিক খাতে কর্মসংস্থান ও জীবিকার সংকট, সংক্রামক রোগ এবং সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার পতনের মতো বিষয়গুলো। একই সঙ্গে রয়েছে প্রযুক্তিগত ঝুঁকিও। ডিজিটাল অসমতা, সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতা ও প্রযুক্তিগত সুশাসনের ব্যর্থতাও আর্থিক খাতে ঝুঁকি তৈরি করছে।
