ভোজ্যতেল আমদানি কমাতে হিমশিম খাচ্ছে ভারত

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভারতে বর্তমানে যে পরিমাণ ভোজ্যতেল উৎপাদন হয় সে তুলনায় পণ্যটির চাহিদা অনেক বেশি। ফলে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আরো অন্তত ১৫ বছর পর্যন্ত অতিরিক্ত দাম দিয়েই পণ্যটির চাহিদা মেটাতে হবে দেশটিকে। সলভেন্ট এক্সট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশন তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ভি বি মেহতা বলেন, আগামী চার বছরের মধ্যে ভারতে ভোজ্যতেলের ব্যবহার ১৭ শতাংশেরও বেশি বাড়তে পারে। উৎপাদন চাহিদার মধ্যে যে ব্যবধান তৈরি হয়েছে, তার ফলে আমদানি আরো ফুলেফেঁপে উঠবে। ২০২১-২২ বিপণন মৌসুমে ভারত প্রায় এক কোটি টন ভোজ্যতেল উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। অথচ সময় দেশটিতে কোটি ৩০ লাখ টনেরও বেশি ভোজ্যতেল ব্যবহার হতে পারে।

ভারত বিশ্বের শীর্ষ ভোজ্যতেল আমদানিকারক। দেশটি ভোজ্যতেল আমদানি বন্ধে নানা প্রচেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হচ্ছে। কৃষকরা তেলবীজের পরিবর্তে তুলা চাল, গম চিনি উৎপাদনে বেশি আগ্রহী। কারণ দেশটির সরকার এসব পণ্যের একটি নির্দিষ্ট দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকার কৃষকদের কাছ থেকে কিছু পণ্য ব্যাপক পরিমাণে ক্রয় করছে। ফলে পণ্যগুলো কৃষকদের কাছে তুলনামূলকভাবে লাভজনক।

ন্যাশনাল কমোডিটিজ ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজ চৌধুরী জানান, তেলবীজ উৎপাদনে কৃষকদের মাঝে এমন অনীহা রাতারাতি তৈরি হয়নি। সরিষা সূর্যমুখী তেলবীজ উচ্চফলনশীল ফসল। তাছাড়া এসব ফসলের বাজারদরও অত্যধিক লাভজনক। বিষয়গুলো দেশটিতে ভোজ্যতেলের উৎপাদন বাড়াতে পারত। কিন্তু তেলবীজ উৎপাদনে কৃষকদের জন্য সরকারি প্রণোদনা বা সহায়তার হার খুবই দুর্বল। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, যেসব মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয় সেসব মাসে ধানচাষীদের সূর্যমুখী আবাদে উৎসাহিত করা উচিত। শীত মৌসুমে গমচাষীদের সরিষা আবাদে উৎসাহিত করা উচিত। এছাড়া রাইস ব্র্যান অয়েল দামি বাদামের তেল দেশীয় উৎপাদনে সম্পূরক হিসেবে কাজ করতে পারে।

বিশেষ করে উৎপাদন ব্যবধান কমাতে পাম অয়েল বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ভারতীয়রা এটিকে সফট অয়েল হিসেবে ব্যবহার করতে বেশি পছন্দ করে। কারণ এটি তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং অন্য যেকোনো ফ্যাটের সঙ্গে সহজেই ব্যবহার করা যায়। অন্যান্য তেলের চেয়ে এটি তুলনামূলকভাবে দীর্ঘস্থায়ীও। ফলে রেস্টুরেন্ট হোটেলসহ বিভিন্ন পর্যায়ে এটির ভোক্তা সংখ্যা বেশি।

এদিকে সরবরাহ চেইনের যে সংকট তা স্থানীয়ভাবে কাটানো সম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা দেশটির সরকারি সংস্থার সঙ্গে বিষয়ে আলাপ করেছেন। এক্ষেত্রে সরাসরি সয়াবিন তেল আমদানির পরিবর্তে সয়াবিন আমদানি করে স্থানীয়ভাবে তা থেকে তেল উৎপাদনের দাবি জানানো হয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি পশুখাদ্যের চাহিদাও মিটবে সহজেই। সিরাজ চৌধুরী আরো বলেন, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারও উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করবে।

ভারতীয় খাদ্যাভ্যাসে অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ ভোজ্যতেল। দেশটির বড় বড় উৎসবের ভোজন পর্বে এটি সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। স্ট্রিট ফুড থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্টের সবচেয়ে দামি খাবারেও ভোজ্যতেলের কদর অনেক বেশি। কারণেই পাম, সয়াবিন সূর্যমুখী তেল আমদানিতে বিশ্বের শীর্ষে অবস্থান করছে দেশটি।

ভি বি মেহতা বলেন, পাম অয়েল উৎপাদন বাড়লে ভারতে পণ্যটির সরবরাহও বাড়বে। ২০২৬ সালের মধ্যে দেশটির উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে ১০ লাখ টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ২৮ লাখ টনে পৌঁছার পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে পণ্যটির মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত এরই মধ্যে ভোজ্যতেলের আমদানি শুল্ক কমানোর মধ্য দিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর প্রয়াস চালাচ্ছে। এছাড়া মজুদ সীমিত করার উদ্যোগও নিয়েছে সরকার। কিন্তু এসব উদ্যোগের পরও দাম কমাতে ব্যর্থ হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বেশির ভাগ পণ্যই বৈশ্বিক বাজারদরের ওপর নির্ভর করে ওঠানামা করে। সরবরাহ সংকটের কারণে গত বছর বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম আকাশচুম্বী উচ্চতায় পৌঁছে। এর প্রভাব পড়েছে ভারতের বাজারেও। দেশটির খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত বছর ভোজ্যতেলের দাম ১২-৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন