তিমি আকৃতির উড়োজাহাজ বেলুগা

বাণিজ্যিক কার্গো এয়ারলাইনস চালু করছে এয়ারবাস

বণিক বার্তা ডেস্ক

এয়ারবাসের তিমি আকৃতির বেলুগা উড়োজাহাজ ছবি: রয়টার্স

প্রথম দিকে নাম দেয়া হয়েছিল সুপার ট্রান্সপোর্টার যদিও পরবর্তী সময়ে তিমি আকৃতির উড়োজাহাজগুলো বেলুগা হিসেবেই জনপ্রিয়তা লাভ করে। এয়ারবাসের বিশালাকৃতির উড়োজাহাজ এতদিন নিজস্ব কারখানাগুলোর মধ্যে যন্ত্রপাতি পরিবহনেই ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে মডেলটি নিয়ে নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ইউরোপীয় উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। আগামী বছর সংস্থাটি মডেল দিয়ে বাণিজ্যিক কার্গো এয়ারলাইনস চালু করবে।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, নিজস্ব যন্ত্রাংশ পরিবহনের পাশাপাশি এয়ারবাস এখন উড়োজাহাজটি দিয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও পরিষেবা দেবে। সংস্থাটির বিদ্যমান বেলুগা এসটি নতুন বেলুগা এক্সএল ট্রান্সপোর্টারগুলোর অতিরিক্ত ক্ষমতা ভাড়া দিতে চায়। এজন্য সংস্থাটি ২০২৩ সালেই একটি বাণিজ্যিক কার্গো এয়ারলাইনস সাবসিডিয়ারি তৈরির কথা জানিয়েছে।

বিশ্বের বৃহত্তম যাত্রীবাহী জেট এ৩৮০ মডেলের উৎপাদন শেষ করার কয়েক মাসের মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে এয়ারবাস। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আয়তনের ভিত্তিতে বেলুগা পশ্চিমের বৃহত্তম বাণিজ্যিক মালবাহী উড়োজাহাজে পরিণত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এয়ারবাস বেলুগা ট্রান্সপোর্ট নামে নতুন এয়ারলাইনসটি স্পেস, জ্বালানি, সামরিক, সামুদ্রিক মানবিক সহায়তাসহ বিভিন্ন খাতে বাণিজ্যিক পরিষেবা দেবে। উড়োজাহাজের অভ্যন্তরে বড় জায়গার পাশাপাশি বেলুগা অধিক ভার বহনের জন্যও উপযুক্ত। এটি ২৩ দশমিক ফুট প্রস্থ প্রায় ২২ ফুট উচ্চতার প্যাকেজ পরিবহন করতে পারবে। ফলে অনেক ধরনের সরঞ্জাম আলাদা করার প্রয়োজনীয়তা দূর হবে এবং সময় অর্থ সাশ্রয় হবে।

এখনো পরিকল্পনায় থাকা কার্গো এয়ারলাইনসটির শতভাগ ইউনিট বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাজ করবে বলে জানিয়েছে এয়ারবাস। সংস্থাটির একজন মুখপাত্র বলেন, এয়ারলাইনসটি পরিষেবা থেকে রাজস্ব পাবে। পাশাপাশি সব বিনিয়োগ পরিচালনা ব্যয়ও এয়ারলাইনসটি স্বতন্ত্রভাবে বহন করবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর এয়ার কার্গোর চাহিদা বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে চলমান সরবরাহ চেইনে প্রতিবন্ধকতার কারণে চাহিদা রেকর্ড পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। আগামী দিনগুলোয় চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলেও আশা করা হচ্ছে। অবস্থায় বড় আকারের কার্গোর চাহিদাও বাড়বে। কারণ পরিবহন জটিলতায় বড় ধরনের যন্ত্রপাতি খুলে ছোট ছোট করে পরিবহন করতে হয়। তবে বড় এয়ার কার্গোয় পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। যেমন লজিস্টিক ম্যানেজারদের কাছে যখন সমুদ্রপথ ব্যবহারের সময় না থাকে তখন তারা বড় আকারের উড়োজাহাজের খোঁজ করেন। সুতরাং বিশালাকৃতির উড়োজাহাজের এয়ারলাইনসটি জনপ্রিয়তা পাবে বলেই মনে হচ্ছে।

এয়ারবাসের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার রেজা ফজলুল্লাহি বলেন, গত কয়েক বছরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে যোগাযোগ করেছিল যে বেলুগা উড়োজাহাজ চার্টার ফ্লাইটের জন্য পাওয়া যায় কিনা। এমনকি মহামারীর আগেও এমন চাহিদা পাওয়া গিয়েছিল।

এখন পর্যন্ত কার্গো উড়োজাহাজের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে এয়ারবাস। এজন্য সংস্থাটি শতভাগ ক্ষমতা ব্যবহার করে কাজ করছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, মহামারীতে বড় যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের চাহিদা কমে গেছে। পাশাপাশি শিল্পজুড়েও মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অবস্থায় বেলুগার চাহিদা ফরাসি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটিকে কভিডের মন্দা থেকে বেরিয়ে আসতেও সহায়তা করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে শঙ্কা হলো নতুন পরিষেবায় আসতে আসতে বেলুগা জেটগুলো পুরনো হয়ে যাবে। সেগুলো কত দিন পরিষেবা দিতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে এয়ারবাসের ট্রান্সপোর্ট ইন্টারন্যাশনালের প্রধান ফিলিপ সাবো বলেন, এখন পর্যন্ত বেলুগা এসটি জীবনকালের অর্ধেকে পৌঁছেছে। উড়োজাহাজগুলো ৩০ হাজার ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং বর্তমানে সেগুলো গড়ে ১৫ হাজার ফ্লাইট সম্পন্ন করেছে।

মহামারী শুরুর পর এয়ারবাস উৎপাদন কার্যক্রম গড়ে ৪০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছিল। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সংস্থাটি সরু জেটগুলোর উৎপাদন পুনরুদ্ধার এবং কিছুটা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। যদিও ওয়াইড বডির জেটগুলোর উৎপাদন প্রায় অর্ধেক স্তরে থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এয়ারবাস নিশ্চিত করেছে, বেলুগা বহরের বাণিজ্যিকীকরণের সঙ্গে পরিকল্পিত উৎপাদন কার্যক্রমের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন