জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে নভেল করোনাভাইরাসের দৈনিক সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা আবারো ১৬ হাজার অতিক্রম করেছে। গত বছরের জুুলাইয়ের পর গতকাল শনাক্তের সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। এদিন করোনা রোগীর সংখ্যা ১৭ লাখ অতিক্রম করেছে। সর্বশেষ আরো ১৮ জন কভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে প্রায় সাড়ে ৪৯ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ হাজার ৩৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে গত বছরের ২৮ জুলাই। সেদিন ১৬ হাজার ২৩০ জনের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। চলমান মহামারীতে দৈনিক শনাক্তের হিসাবে এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা। গতকাল আক্রান্তদের নিয়ে দেশে মোট করোনা রোগী দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১৫ হাজার ৯৯৭ জন। আর মারা গেছে ২৮ হাজার ২৫৬ জন করোনা রোগী। ডেল্টার সংক্রমণ শেষে গত বছরের ডিসেম্বরে দেশে মহামারী পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল। সে সময় দৈনিক শনাক্তের হার শতাংশের নিচে নেমেছিল। তবে বিশ্বে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তার শুরুর পর জানুয়ারির শুরু থেকে বাংলাদেশেরও আবার দ্রুত সংক্রমণ বাড়তে থাকে।

সর্বশেষ আরো হাজার ৯৫ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে ওঠায় মোট সুস্থতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৪। ফলে দেশে মোট সক্রিয় করোনা রোগী লাখ ২৮ হাজার ৭৮৭ জন। গতকাল সর্বশেষ নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ৪০ শতাংশ। মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক শূন্য শতাংশ। আর শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার দশমিক ৬৫ শতাংশ।

গতকাল শনাক্ত হওয়া ৬৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ রোগী ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। মৃত ১৮ জনের মধ্যে ১২ জন পুরুষ ছয়জন নারী। তাদের মধ্যে আটজন ঢাকা, ছয়জন চট্টগ্রাম, একজন করে চারজন রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল সিলেট বিভাগের বাসিন্দা।

এদিকে করোনার বিস্তার রোধে সরকার আবারো বিধিনিষেধ দিয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুল-কলেজ সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা নিয়েছে। সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে শতাধিক মানুষ অংশ নিতে পারবে না এবং এসব ক্ষেত্রে যারা যোগ দেবে, তাদের অবশ্যই টিকার সনদ বা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর সনদ আনতে হবে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্প-কারখানায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকার সনদ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া মসজিদ, বাজার, শপিং মল, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশনসহ সব ধরনের জনসমাগমস্থলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদারক করবে।

মহামারীর শুরু থেকে সরকার গঠিত করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সরকারকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছে। সম্প্রতি নভেম্বর থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। গতকালও ওমিক্রনের বিস্তার রোধে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সরকারকে আরো কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে তারা। একই সঙ্গে বাণিজ্য মেলা বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে।

গতকাল এসব সুপারিশ সরকারকে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা। তবে এখনো বাণিজ্য মেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়নি বলে বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।

কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি বলেন, সংক্রমণ ঠেকাতে বিধিনিষেধ কঠোর করতে সরকারকে কয়েক দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এসব সুপারিশের বাস্তবায়নও জরুরি। তিনি বলেন, শুধু নির্দেশনা দিলেই হবে না, এটার বাস্তব প্রয়োগও দরকার। বাণিজ্য মেলা খোলা রাখা উচিত না। এখন এগুলোর বাস্তব প্রয়োগ না হলে ভালো ফল আসবে না।

বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের মার্চ। আর ১২ জানুয়ারি রোগীর সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যু হয়। গত বছর ডিসেম্বর কভিডে মোট মৃত্যু ২৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে গত ১০ আগস্ট দুইদিনই সর্বোচ্চ ২৬৪ জন করে করোনা রোগীর মৃত্যু হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে শতাধিক দেশে ভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে ২০২০ সালের ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন