রোজ গার্ডেনে স্থানান্তর হচ্ছে ডিএসসিসির নগর জাদুঘর

আল ফাতাহ মামুন

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে অবস্থিত নগর জাদুঘরটি ওয়ারির রোজ গার্ডেনে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এত দিন ডিএসসিসির তত্ত্বাবধানে থাকলেও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জাদুঘরটি স্থানান্তরের সার্বিক দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরকে।

সূত্রমতে, জাদুঘর স্থানান্তরের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হলেও এখনো প্রকল্প পাস হয়নি। তবে প্রকল্পের প্রাথমিক খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। খসড়া প্রকল্পে রোজ গার্ডেনে নগর জাদুঘর প্রতিষ্ঠা বাবদ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়। খসড়ায় বলা হয়, রোজ গার্ডেনের মালিক যে তিনতলা ভবনে অবস্থান করতেন সেখানেই প্রতিষ্ঠা করা হবে নগর জাদুঘর। জাতীয় জাদুঘরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির একজন সদস্য বণিক বার্তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জাতীয় জাদুঘরের কিপার (সম) কিপার () . বিজয় কৃষ্ণ বণিক বলেন, ঢাকা নগর জাদুঘরটি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করছি আমরা। তবে ব্যাপারে লিখিত কোনো দায়িত্ব দেয়া হয়নি। জাদুঘরটি আগে নগর ভবনের তত্ত্বাবধানে ছিল। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এটিকে রোজ গার্ডেনে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেহেতু প্রকল্প এখনো পাস হয়নি, তাই স্থানান্তরের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু হয়নি। নগর ভবন থেকে মন্ত্রণালয়ের কাছে জাদুঘর স্থানান্তরে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় আমাদের সহযোগিতার জন্য বলেছে, আমরা সহযোগিতা করছি।

ডিএসসিসির গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বণিক বার্তাকে বলেন, জাদুঘর স্থানান্তরের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে হচ্ছে। ব্যাপারে সিটি করপোরেশন অবগত। যেহেতু এটি সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ নয়, তাই ব্যাপারে ডিএসসিসির কোনো আর্থিক সংশ্লেষ নেই।

ঢাকা নগর জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে ঢাকা নগরীর স্মৃতিসংক্রান্ত জানা-অজানা নানা বিষয়। ১০০ বছর আগের ঢাকার একটি মানচিত্র ছাড়াও প্রাক-মোগল আমল থেকে বাংলাদেশ আমল পর্যন্ত ঢাকার সীমানার ধারাবাহিক বৃদ্ধির নকশা আছে এখানে। রয়েছে ঢাকার ইতিহাস-সংবলিত ১০১টি দুর্লভ আলোকচিত্র। এছাড়া ঢাকার প্রথম ছাপাখানা নবাবি আমলের হুক্কা, উনিশ শতকে ঢাকার নবাবদের ব্যবহূত পানের বাটা, সে আমলের মুদ্রা, পানদানি, তামার বালতি, জগ, ড্রেসিং টেবিল, শাঁখা শাঁখা তৈরির করাত, বদনাসহ নানা উপকরণ।

দুর্লভ আলোকচিত্রের মধ্যে আছে পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেন, রূপলাল হাউজ, হোসেনি দালানের আদি রূপ, বড় কাটরা, ছোট কাটরা, সাতগম্বুজ মসজিদ, উনিশ শতকে নির্মিত বিভিন্ন বাড়ি, সেন্ট জেমস গির্জা (বর্তমান বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে), পুরনো হাইকোর্ট ভবন, ১৯০৪ সালে দিলকুশার নবাববাড়ি, ডানা দীঘি ইত্যাদি।

ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম ইংরেজি সংবাদপত্র সাপ্তাহিক ঢাকা নিউজ মুদ্রণকাজে ব্যবহূত মুদ্রণ যন্ত্রটি রয়েছে জাদুঘরে। মুদ্রণ যন্ত্রটি উনিশ শতকের (১৮৪৭-৪৮) মাঝামাঝি সময়ের। পুরান ঢাকার একটি জীর্ণ বাড়ি থেকে ১৯৮৯ সালে ঢাকা নগর জাদুঘরের ট্রাস্টি হাশেম শফি মুদ্রণ যন্ত্র এখানে সংরক্ষণ করেন। এখানে রয়েছে মোগল ব্রিটিশ আমলের বিভিন্ন দলিল, ছবি গ্রন্থসহ নানা জিনিস। ঢাকার ১৯৫২, ১৯৬৬, ১৯৬৯ ১৯৭১ সালসহ নানা আন্দোলনের বেশকিছু দুর্লভ আলোকচিত্র পোস্টারও রয়েছে।

তবে প্রচারণার অভাবে অনেকটা অযত্নেই পড়েছিল নগর জাদুঘর। সরেজমিন দেখা গেছে, অযত্ন-অবহেলায় দুর্লভ সংগ্রহগুলো নষ্ট হচ্ছে। রঙিন ছবিগুলো হয়ে গেছে ধূসর। জাদুঘরটির তত্ত্বাবধায়ক ভূপেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে অদ্যবধি দায়িত্ব পালন করে আসছি। অনেক মেয়র জানতেনও না নগর ভবনে একটি সুন্দর জাদুঘর আছে। তবে বর্তমান মেয়র এখন পর্যন্ত দুবার এসেছেন। খোঁজখবর নিচ্ছেন।

ঢাকা গবেষক . শরীফ উদ্দিন আহমেদ মুঠোফোনে বণিক বার্তাকে বলেন, মুনতাসীর মামুন এবং হাশেম খানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৯৮৭ সালের ২০ জুন পুরান ঢাকার পাঁচ ভাই লেনের একটি বাড়িতে জাদুঘরটির জন্ম। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ সালের ২০ জুলাই নগর জাদুঘরটি মেয়র হানিফের আগ্রহে নগর ভবনে স্থানান্তরিত হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এটির উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, এত বছরেও নগর জাদুঘরটি সমৃদ্ধ হতে না পারা আমাদের জন্য দুঃখজনক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন