ওমিক্রনের তিন উপধরনের বিস্তার

রাজধানীতে করোনা রোগীর ৬৯% ওমিক্রনে সংক্রমিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন এখন বিশ্বজুড়ে সংক্রমণের বিস্তৃতি ছড়িয়েছে। বাংলাদেশেও এক মাস ধরে শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে। সামাজিক সংক্রমণের মাধ্যমে দেশজুড়ে প্রাণঘাতী করোনার ধরন শিগগিরই ডেল্টাকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে রাজধানীতে ওমিক্রনের সংক্রমণ বাড়ছে। শহরে করোনায় আক্রান্ত ৬৯ শতাংশের শরীরে ওমিক্রনের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে রাজধানীতে ওমিক্রনের তিনটি পরিবর্তিত রূপের (উপধরন) অস্তিত্ব মিলেছে বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)

আইসিডিডিআর,বি বলছে, ওমিক্রন ধরনের জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, ঢাকা শহরে তিনটি সাবটাইপ (উপধরন) রয়েছে। এগুলো আফ্রিকান, ইউরো-আমেরিকান এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ওমিক্রন ধরনের সঙ্গে মিলে যায়। জানুয়ারির প্রথম দুই সপ্তাহে তাদের ল্যাবরেটরিতে হাজার ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৮ শতাংশের বা ৩৭৯ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ২৬০ জনই ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত, যা শতাংশের হিসাবে ৬৯ শতাংশ।

সংস্থাটি জানিয়েছে, গত ডিসেম্বর দেশে প্রথম ওমিক্রন শনাক্ত হয়। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে ১১ ডিসেম্বর। পরে ওই মাসেই আইসিডিডিআর,বির পরীক্ষাগারে ঢাকা শহরের ৭৭ জন কভিড রোগীর মধ্যে পাঁচজনের ওমিক্রন শনাক্ত করা হয়েছিল। বাকিদের ছিল ডেল্টার। ওমিক্রনে আক্রান্ত ২৯ জনের সাক্ষাত্কার নেয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে আইসিডিডিআর,বির প্রতিবেদনে। এর মধ্যে পুরুষ ১৩ নারী ১৬ জন। ২৭ জনের কোনো উপসর্গও ছিল না।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২৪ জন টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে। আর প্রথম ডোজ পেয়েছে তিনজন। ২৯ জনের মধ্যে মাত্র একজনকে একদিনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। করোনার ধরনে আক্রান্ত একজন সৌদি আরব থেকে ফেরা। বাকিরা দেশেই ছিল।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডেল্টার জায়গা দখল করে নিচ্ছে ওমিক্রন। অতিসম্প্রতি কমিউনিটি পর্যায়ে ধরনটি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। ডেল্টার সংক্রমণ এখনো সবচেয়ে বেশি। তবে ওমিক্রনও সেই জায়গা দখল করে নিচ্ছে।

জানা যায়, ওমিক্রনের যে উপসর্গগুলো আছে, তার মধ্যে ৭৩ শতাংশ মানুষের নাক দিয়ে পানি ঝরছে। মাথাব্যথা করছে ৬৮ শতাংশ মানুষের। অবসন্নতা বা ক্লান্তি অনুভব করছে ৬৪ শতাংশ রোগী। হাঁচি দিচ্ছে ৬০ শতাংশ, গলাব্যথা ৬০ শতাংশের কাশি দিচ্ছে ৪৪ শতাংশ রোগী। বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। এছাড়া মৌসুমি যে ইনফ্লুয়েঞ্জা হচ্ছে, এর সঙ্গে মিল রয়েছে।

গতকাল সর্বশেষ নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩২ শতাংশের ওপরে উঠেছে। দেশে বর্তমানে এক লাখের বেশি করোনা রোগী রয়েছে। কোন ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটছে, এর জন্য জিনোম সিকোয়েন্সিং করা প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশের খুব বেশিসংখ্যক নমুনার জিন বিশ্লেষণ করার সক্ষমতা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমান করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। করোনার ডেল্টা ধরনের সংক্রমণের কারণে গত বছরের মাঝামাঝি দেশে করোনায় মৃত্যু, রোগী শনাক্ত শনাক্তের হার বেড়েছিল। তবে আগস্টে দেশব্যাপী করোনার গণটিকা দেয়ার পর সংক্রমণ কমতে থাকে। গত ডিসেম্বরের প্রথম দিকেও দেশে করোনা শনাক্ত শতাংশের ঘরেই ছিল। তবে গত মাসের দ্বিতীয়ার্ধে এসে সংক্রমণে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়।

একই সঙ্গে করোনার বিস্তার রোধে সরকার আবার বিধিনিষেধ দিয়েছে। গতকাল থেকে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুল-কলেজ সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা নেবে।

সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ১০০ জনের বেশি অংশ নেয়া যাবে না এবং এসব ক্ষেত্রে যারা যোগদান করবে, তাদের অবশ্যই টিকা সনদ বা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর পরীক্ষার সনদ আনতে হবে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্প-কারখানায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকা সনদ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া মসজিদ, বাজার, শপিং মল, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশনসহ সব ধরনের জনসমাগমস্থলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদারক করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন