শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশে শিক্ষার্থীদের বাধা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, সিলেট

যত সময় গড়াচ্ছে, আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাস। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বাসভবনে কাউকেই প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। গতকাল শিক্ষকরা খাবার নিয়েও যেতে পারেননি ভেতরে। এমন অস্থির অবস্থায় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না বহিরাগতদের। চলমান পরিস্থিতির মধ্যেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। সেই সঙ্গে ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি।

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনশনরত ২৮ শিক্ষার্থীর ১৭ জনই অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি হয়েছেন সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে। তাদের শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নেই বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে রোববার রাতে উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন আন্দোলনকারীরা। ওই রাতে বিকল্প উপায়ে উপাচার্যের বাসভবনে আলো জ্বলতে দেখা যায়। গতকাল সন্ধ্যায়ও উপাচার্যের বাসভবনে আলো জ্বলতে দেখা যায়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছাড়া বাসভবনটিতে অন্য কাউকে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি।

উপাচার্যের ক্ষমা প্রার্থনা

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক . ফারজানা ইসলামের সেলফোনে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান শাবিপ্রবি উপাচার্য। জাবির জনসংযোগ কার্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানানো হয়েছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বরাত দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছেতার বক্তব্য সম্পাদনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। এতে জাবির শিক্ষার্থীদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে জাবির শিক্ষক সংশ্লিষ্ট সবাই আহত হয়েছেন। তিনি বিষয়টি অনুধাবন করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, জাবির উদার প্রগতিশীল শিক্ষার্থী শিক্ষকরা তাকে ক্ষমা করে দেবেন।

তবে জাবির নারী শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম জাগো নারী, জাগো বহ্নি শিখা বলেছে, উপাচার্যের ক্ষমা চাওয়ার খবরে তারা সন্তুষ্ট নয়। জাবির উপাচার্যের কাছে ক্ষমা চাওয়ার মানে নারী শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া নয়। তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। এমন নারীবিদ্বেষী উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলেই জানায় সংগঠনটি।

শিক্ষার্থীরাও গ্রহণ করেননি খাবার

গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপাচার্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার নিয়ে যান। সময় শিক্ষার্থীরা প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের উপাচার্য ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে দেননি। শিক্ষার্থীদের জন্য আনা প্রক্টরিয়াল বডির খাবারও ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগের দুজন সিটি কাউন্সিলর একইভাবে খাবার নিয়ে গেলে শিক্ষার্থীরা তাদেরও প্রবেশ করতে দেননি।

বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা

গতকাল দুপুরে বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশে বিধি আরোপ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলন করে মোহাইমিনুল বাশার রাজ জানান, তাদের আন্দোলন অহিংস। বহিরাগত কেউ এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করুক সেটা তারা চান না। সেজন্য প্রধান ফটক শাহ পরানসংলগ্ন আরেকটি ফটকে চেকপোস্ট বসিয়েছেন তারা।

মোহাইমিনুল বাশার রাজ জানান, হাসপাতালে যেসব আন্দোলনরত শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন, তাদের কেউ এখনো অনশন ভাঙেননি। বরং হাসপাতাল থেকে দেয়া খাবার অসুস্থ শিক্ষার্থীরা না খাওয়ায় ওইসব খাবার অন্য শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এনে পথশিশুদের মধ্যে বিতরণ করেছেন।

গতকাল বিকালে ক্যাম্পাসের গোলচত্বর এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। সময় তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে উপাচার্যকে ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সব সাস্টিয়ান সিলেট আয় অভিযানের ডাকও দেন শিক্ষার্থীরা।

গতকাল ছিল আমরণ অনশনের ষষ্ঠ দিন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি থাকা শিক্ষার্থীরা ছাড়া আরো ১১ জন বর্তমানে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।

১৩ জানুয়ারি প্রভোস্টের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে আন্দোলন শুরু করেন শাবিপ্রবির সিরাজুন্নেসা ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা। তা থেকেই আন্দোলনের সূত্রপাত। পরে ১৬ জানুয়ারি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শাবিপ্রবি উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। সেদিনই পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন ছাত্রছাত্রীরা। তখন অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। ঘণ্টা তিনেক পর অবরুদ্ধ উপাচার্যকে উদ্ধার করেন পুলিশের ক্রাইসিস রেসপন্স টিমের সদস্যরা। পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের পর শাবিপ্রবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন