ডেসটিনি নিহাজ জুট স্পিনার্স মিলস লিমিটেড

সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ উপেক্ষা করে মিল চালাচ্ছে তৃতীয় পক্ষ

মেহেদী হাসান, রাজবাড়ী

রাজবাড়ীতে ক্রোক করার পরও আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ডেসটিনি নিহাজ জুট স্পিনার্স মিল চালাচ্ছে তৃতীয় পক্ষ। ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে মিলটি চালু রাখা হয়েছে। তবে সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

জেলা সদরের বসন্তপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর এলাকায় আট একর জমির ওপর ২০০৪ সালে গড়ে তোলা হয় নিহাজ জুট স্পিনার্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার খলিলপুর এলাকার মো. নিহাজ উদ্দিন সরদারের ছেলে শহিদুজ্জামান চয়ন।

এরপর মিলের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির ওপর সোনালী ব্যাংক ফরিদপুর শাখা থেকে গত ২০০৫ সালের ১৬ মার্চ ১৪ কোটি ৭৯ লাখ ৬৩ হাজার ৮৬১ টাকা ঋণ নেন। পরবর্তী সময়ে শর্ত মোতাবেক তা পরিশোধ করতে না পারায় ২০১৪ সালের ১৮ মার্চ ব্যাংকটি সুদাসলে ২২ কোটি ৩০ লাখ ২৪ হাজার ৪৫০ টাকার দাবি চেয়ে ফরিদপুর যুগ্ম জেলা জজ প্রথম অর্থঋণ আদালতে মামলা করে ব্যাংক। মামলার বিচারকাজ শেষ হওয়ার পর আদালত বিবাদী পক্ষের ডিক্রি করা ২২ কোটি ৩০ লাখ ২৪ হাজার ৪৫০ টাকা ৪৫ দিনের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দেন। অন্যথায় আইনসংগত উপায়ে বাদী পাওনা আদায় করতে পারবে বলে জানান।

এদিকে মিলটি পরিচালনাকালে শহিদুজ্জামান চয়ন ব্যাংক লোনের তথ্য গোপন করে ২০১১ সালের শেষের দিকে জয়েন্ট স্টক কোম্পানির মাধ্যমে মিলের ৭৫ শতাংশ শেয়ার ডেসটিনি গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করেন। তখন থেকে মিলটির নামকরণ করা হয় ডেসটিনি নিহাজ জুট মিলস লিমিটেড ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাড়ে আট লাখের বেশি সাধারণ সদস্যের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাজার ১৭৮ কোটি ৬১ লাখ ২৩ হাজার ২৪ টাকা স্থানান্তর রূপান্তরের প্রমাণ পায় দুদক। ঘটনায় দুদক ঢাকার কলাবাগান থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০০৯-এর () ধারায় তৎসহ মানিলন্ডারিং আইন ২০১২-এর ()() দায়ের করে। পরবর্তী সময়ে মহানগর দায়রা জজ মিলটির মালামালসহ সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ প্রদান করেন।

এরপর দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকা থেকে পাঠানো পত্রালোকে তত্কালীন রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার রাজবাড়ী সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কর্মকর্তাদের নিয়ে মিলটি পরিদর্শন করেন। পরে আদালতের আদেশে মিলটি ক্রোকাবদ্ধ হয়েছে উল্লেখ করে আদালতের অনুমতি ছাড়া এই সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, পরিবর্তন, অপসারণ করা যাবে না মর্মে সাইনবোর্ড টানানো হয়। কর্তৃপক্ষ মিলের সব সম্পত্তি ক্রোক তালিকা প্রণয়ন করে মিলটির তত্কালীন সহকারী ম্যানেজার আবদুল হান্নান চিফ সুপারভাইজার মো. আরিফ সরদারের জিম্মায় প্রদান করেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিলটি নিয়ে আদালতের কঠোর নির্দেশনার মধ্য দিয়েও শহিদুজ্জামান চয়ন মিলের অভ্যন্তরে থাকা আট একর জমির মধ্যে দশমিক ৫২ একর জমি গোপনে তার স্ত্রী মোর্শেদা চয়ন রানীর নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। বিষয়টি জানতে পেরে মিলের জমির মালিক মো. আক্কাছ আলী শহিদুজ্জামান চয়নসহ আরো ছয়জনকে আসামি করে রাজবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে পলাতক রয়েছেন মো. শহিদুজ্জামান চয়ন।

এদিকে তিন-চারটি মামলা আদালতের নির্দেশনায় মালামাল ক্রোক করার পরও মিলটি চালু রয়েছে। সরেজমিনে মিলটিতে গিয়ে দেখা যায়, মিলটি আগের মতোই স্বাভাবিক নিয়মে চলছে। এতে অন্তত ১০০ শ্রমিক ব্যস্ত সময় পার করছেন তাদের নিজ নিজ কাজে।

সময় কথা হয় মিলটির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মো. আবদুল হান্নান মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, মিলটি দেনার দায়ে জর্জরিত। আদালত পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশে আমাদের দুজনকে মালামাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এখান থেকে আমি প্রতি মাসে বেতন নেই। আর ১০০ শ্রমিক আছে তাদের বেতন প্রদান করি। ডেসটিনির মালিকানাধীন ক্রোককৃত সম্পত্তি চালু কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিলের যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাবে তাই আমরা চালু রেখেছি। তবে তিনি স্বীকার করেন, চালু রাখার অনুমতির ব্যাপারে কোনো কাগজ নেই তাদের কাছে। তিনি দাবি করেন, শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে মিলটি চালু রেখেছি। তাছাড়া এখনো মিলটি লোকসানেই চলছে। লোকসান সত্ত্বেও মিল চালাচ্ছে কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কানাইপুরের কিছু ব্যবসায়ী আছে যারা এর অংশীদার।

অন্যদিকে মিলটিতে বিভিন্ন কিস্তিতে ফারুখ নামে পরিচালনা পর্ষদের এক ব্যক্তির মাধ্যমে বাকিতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার পাট দিয়ে বিপাকে পড়েছেন কানাইপুর এলাকার পাট ব্যাবসায়ী ইমরান মোল্লা। নিয়ে কয়েকবার সালিশ মীমাংসায় মাত্র লাখ ৬০ হাজার টাকা পেলেও বাকি টাকা চাওয়ায় হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

ব্যাপারে রাজবাড়ী সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. মাইনউদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, বিষয়টি জানার পর খতিয়ে দেখতে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি। আইনগতভাবে তারা দোষী হলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন