জলবায়ু সুরক্ষায় উদ্যোগ

প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ পরিচালকদের সরাতে চান বিনিয়োগকারীরা

বণিক বার্তা ডেস্ক

ব্রাজিলের প্যারাইবা রাজ্যের বোকেইরাও লেক ছবি: রয়টার্স

বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ বন্ধে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। জলবায়ু সুরক্ষায় সরকারগুলোও সময় বেঁধে দিচ্ছে। উদ্যোগে যুক্ত হচ্ছে বড় বড় প্রতিষ্ঠানও। প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে জলবায়ু উষ্ণকারী গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ কমিয়ে আনার। তবে প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাহী পরিচালকরা এবার ভিন্ন এক চাপের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের বড় বিনিয়োগকারীরা জলবায়ু সুরক্ষায় ব্যর্থ হওয়া নির্বাহী পরিচালকদের সরিয়ে দিতে পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। খবর বিবিসি।

যুক্তরাজ্যের বড় একটি বিনিয়োগ তহবিল জানিয়েছে, পরিবেশগত প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হওয়া সংস্থাগুলো থেকে পরিচালকদের বের করে দেয়ার চেষ্টা হিসেবে ভোটাভুটি করা হবে। বিশ্বের বৃহত্তম মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানি ব্ল্যাকরক সংস্থাগুলোকে স্থায়িত্বের দিকে ধাপে ধাপে পদক্ষেপ নিতে বলেছে। অন্যথায় পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে বলেও সতর্ক করেছে বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানটি।

সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থা আভিভা ইনভেস্টরসও চায় প্রধান নির্বাহীদের বেতন টেকসই লক্ষ্যের সঙ্গে যুক্ত হোক। ২৬ হাজার ২০০ কোটি পাউন্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপনায় যুক্ত আভিভা ইনভেস্টরস চলতি সপ্তাহে ৩০টি দেশের হাজার ৫০০ প্রতিষ্ঠানকে চিঠি পাঠাতে যাচ্ছে। চিঠিতে সংস্থাটি বিনিয়োগের প্রত্যাশাগুলো নির্ধারণ করেছে।

তহবিলটি জানিয়েছে, স্থায়িত্বের সংজ্ঞাকে আরো বিস্তৃত করা হয়েছে। এখন জলবায়ু পরিবর্তন নির্বাহীদের বেতনের মতো বিদ্যমান অগ্রাধিকারগুলোর পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোয় মনোযোগ দেয়া হবে। আভিভা ইনভেস্টরসের প্রধান মার্ক ভার্সি বার্ষিক চিঠিতে বলেন, আমরা বোর্ড স্বতন্ত্র পরিচালকদের জবাবদিহির আওতায় আনব। বিশেষ করে যে প্রতিষ্ঠানগুলোয় পরিবর্তনের গতি প্রয়োজনীয়তাকে প্রতিফলিত করে না।

তিনি বলেন, ১৯৭০-২০১৬ সালের মধ্যে প্রাণী উদ্ভিদের প্রজাতি উদ্বেগজনকভাবে ৬৮ শতাংশ কমে গেছে। কারণ আমাদের অর্থনীতি সমাজ প্রাকৃতিক বিশ্বের ইকোসিস্টেমের ওপর নির্ভরশীল। এটিই ক্রমবর্ধমানভাবে প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ চালক হয়ে উঠবে। বিশ্বের অর্থনৈতিক উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি জীববৈচিত্র্যের ওপর নির্ভরশীল।

মানবাধিকার নিয়ে আভিভা আশা করে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা করার সময় প্রভাব যাচাই করবে এবং ক্ষতি বন্ধ করার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে পরিবেশগত লক্ষ্য পূরণ করতে চায়, তা আরো বিশদ ব্যাখ্যা দিতে হবে বলেও জানিয়েছে আভিভা ইনভেস্টরস।

প্রতিষ্ঠানটির পরিবেশগত, সামাজিক করপোরেট গভর্ন্যান্সের প্রধান মির্জা বেগ বলেন, পরিবেশগত লক্ষ্য এড়িয়ে যেতে কিছু প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃতভাবে অস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এখন থেকে বিশ্বে উচ্চ নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে এবং সেটি সংশোধনে উদ্যোগ না নেয়া সংস্থাগুলোর পরিচালকদের অপসারণের চেষ্টা করা হবে। লক্ষ্যে শেয়ারহোল্ডার হিসেবে আভিভা তার ভোট ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবহার করবে। তহবিলটি নির্বাহীদের বেতন চুক্তির বিরুদ্ধেও ভোট দিতে পারে।

তিনি বলেন, যদি ব্যবসাগুলোর ওপর পর্যাপ্ত চাপ দেয়া হয়, তবে বিশ্বকে খুব আলাদা দেখাবে। আভিভা বিনিয়োগকারীদের চাপের পর গত বছর ২৮০টি সংস্থা অনুশীলন পরিবর্তন করেছে। এজন্য বড় বড় বিনিয়োগ সংস্থাকে জলবায়ু সুরক্ষায় এভাবে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ব্যবসাগুলোকে অনুশীলন পরিবর্তন করতে বড় বিনিয়োগ তহবিলগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে চাপ বাড়াচ্ছে। গত সপ্তাহে ব্ল্যাকরকের প্রধান নির্বাহী ল্যারি ফিঙ্ক বলেন, জনসাধারণ এখন প্রতিষ্ঠানগুলোর থেকে নৈতিক আচরণ প্রত্যাশা করে। এজন্য কোনো ভুল করবেন না। প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক করে তুলতে পরিবেশকে গুরুত্ব দিতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন